সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'শত্রুকে ভোট দাও তবু ভাজপাকে নয়।' মহাপঞ্চায়েত ডেকে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে রাজপুত ভোটারদের অঘোষিত নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন 'সমাজে'র নেতারা। ভোটের মুখে রাজপুত সংগঠনগুলির এই গোঁসা গুজরাটের কিছু অংশ এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে রীতিমতো চাপে ফেলে দিচ্ছে বিজেপিকে। যদিও গেরুয়া শিবিরের আশা, সঠিক সময়ে সমস্যা মিটবে।
রাজপুতরা (Rajput) বিজেপির দীর্ঘদিনের ভোটব্যাঙ্ক। গুজরাটের জনবিন্যাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই ক্ষত্রিয় সমাজ। আবার পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের অন্তত গোটা দশেক আসনে রাজপুতরা নির্ণায়ক ফ্যাক্টর। এতদিন নিজেদের অনুগত এই ভোটব্যাঙ্কের সাহায্যেই গুজরাটে জিতে আসছে বিজেপি। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশেও তাই। কিন্তু দুই এলাকাতেই রাজপুতরা ক্ষুব্ধ। সৌজন্য বিজেপিরই (BJP) দুই নেতা। একজন পুরুষোত্তম রূপালা আরেকজন সঞ্জীব বালিয়ান।
[আরও পড়ুন: সোমবার থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজ্যের স্কুলগুলোতে গরমের ছুটি, জারি বিজ্ঞপ্তি]
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রূপালা সম্প্রতি তাঁর নির্বাচনকেন্দ্র রাজকোটে দলিতদের নিয়ে একটি মন্তব্য করেন, যা রাজপুতদের জন্য অপমানজনক। তিনি বলেন, "রাজপুত রাজা-মহারাজারা ব্রিটিশ-মোঘলদের প্রণাম করতেন। তাঁদের সঙ্গে রোটি এবং বেটির সওদা করতেন।" রূপালার মন্তব্যে ক্ষেপে লাল গোটা রাজপুত সমাজ। গুজরাটে (Gujrat) রাজপুত সংগঠনের বিক্ষোভে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরও হয়েছে। তবে গুজরাটে এই ক্ষত্রিয় বা রাজপুত বিদ্রোহের যে পরিমাণ প্রভাব পড়বে, তার চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ার কথা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের অন্তত ১৫টি আসনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর রাজপুত ভোট। এই ১৫ কেন্দ্রে অন্তত ১০ শতাংশ ভোটার রাজপুত। এর মধ্যে গাজিয়াবাদ, সাহারনপুর, মুজফ্ফরনগর, আমরোহা, মোরাদাবাদ, আলিগড়, আগ্রা এবং ফতেপুর সিক্রির মতো আসনে ভালোমাত্রায় মুসলিম ভোটার রয়েছেন। এই মুসলিম এবং রাজপুত ভোটারদের মেলবন্ধন পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে চাপ বাড়াতে পারে বিজেপির উপরে।
[আরও পড়ুন: উত্তরে প্রকৃতির দুই রূপ, হাঁসফাঁস গরমে পুড়ছে সমতল, তুষারের চাদরে ঢেকেছে সিকিম]
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে রাজপুতদের রাগের কারণ অবশ্য শুধু রূপালার মন্তব্য নয়। স্থানীয় বিজেপি নেতা তথা সাংসদ সঞ্জীব বালিয়ানও অন্যতম কারণ। জাঠ জনগোষ্ঠীর ‘বাহুবলী’ তথা মুজফ্ফরনগরের সাংসদ সঞ্জীব বালিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের জনগোষ্ঠী জাঠদের সন্তুষ্ট করতে রাজপুতদের উপেক্ষা করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাজপুত নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক সঙ্গীত সোম। সঙ্গীতের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের ভোটব্যাঙ্ক হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা উপেক্ষিত। সঞ্জীব বালিয়ানের (Sanjeev Balian) জন্যই গোটা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে একটি কেন্দ্রেও রাজপুত প্রার্থী নেই। উপেক্ষা করা হচ্ছে গোটা সমাজকেই। সঙ্গীত সোমের একাধিক রাজপুত সংগঠনে প্রভাব রয়েছে। সেই সংগঠনগুলি গোটা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বিজেপি বিরোধী প্রচার চালাচ্ছে। ভোটের মুখে এই রাজপুত বিদ্রোহ চাপে রাখবে বিজেপিকে। কিন্তু ভোটবাক্সে প্রভাব পড়বে কী? ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, রাজপুতদের এই বিদ্রোহকে রাজনৈতিক ভাবে বিরোধীরা কতটা কাজে লাগাতে সক্ষম, সেটার উপরই নির্ভর করছে এই এলাকার ভোটভাগ্য।