সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কোথাও এলাকার জনপ্রিয় মুখ, কোথাও আবার লড়াকু ব্যক্তিত্ব, আইনরক্ষক – চব্বিশে লোকসভার লড়াইয়ে (Lok Sabha Election 2024) বাংলার শাসকদলের তুরুপের তাস তরতাজা প্রায় ১০ প্রার্থী। এঁরা সকলেই ভোট ময়দানে প্রথমবার লড়ছেন। কেউ আবার দিল্লির লড়াইয়ে নবাগত। আর এঁদের উপরই দিল্লি জয়ের ভার দিলেন তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিক থেকে এই তালিকায় চমক রয়েছে যথেষ্টই। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে সংগঠন তৈরিতে যাঁরা দক্ষতা দেখিয়েছেন, লোকসভায় তাঁদের প্রার্থী করে ‘পুরস্কার’ও দিয়েছেন নেত্রী। তালিকায় যেমন সমাজের বিশিষ্ট মানুষজন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন দলের একনিষ্ঠ কর্মীরা।
আসলে রবিবারের ব্রিগেড (Brigade) সমাবেশে অধিকাংশটাই ছিল চমকে ভরা। যেমন মঞ্চের সঙ্গে র্যাম্প, সেই র্যাম্পে হাঁটতে হাঁটতে অভিষেকের বক্তব্য রাখা, প্রার্থী ঘোষণা, তাঁদের র্যাম্পে এনে এলইডি স্ক্রিনে পরিচয় করানো – সবেতেই অভিনবত্ব। বিশেষভাবে নজরকাড়া এবার প্রার্থী তালিকা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, ঘোষণা করলেন দলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪২ আসনেই একাধিক নতুন নাম শোনা গেল তাঁর মুখে।
[আরও পড়ুন: রাজনীতির আঙিনায় ইউসুফ, তারকা অলরাউন্ডারকে ফোনে শুভেচ্ছা শচীনের]
চব্বিশের লড়াইয়ে একেবারে আনকোরা, তরতাজা মুখের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আইপিএস (IPS) প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। প্রথমজন সদ্যই সময়ের আগে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। রায়গঞ্জ রেঞ্জের আইজি ছিলেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক জগতে তাঁর অবাধ বিচরণ। নিজের নাট্যদল রয়েছে। তাঁকে মালদহ উত্তর (Maldah Uttar) থেকে প্রার্থী করল তৃণমূল। ওই আসনের লড়াই অত্যন্ত আকর্ষণীয় হতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মালদহ দক্ষিণেও ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থী নবাগত।
এই কেন্দ্র থেকে লড়বেন শাহনাজ আলি রহমান। উত্তরবঙ্গের আরেক কেন্দ্র দার্জিলিংয়ের তৃণমূল প্রার্থী হচ্ছেন প্রাক্তন আমলা গোপাল লামা। তিনি সেখানকার মহকুমাশাসক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। পাহাড়ের রাজনৈতিক দল এবং জনগণের কাছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। অনীত থাপা, অজয় এডওয়ার্ডের পছন্দের মানুষ তিনি। দার্জিলিংয়ে গোপাল লামা জিতলে এই প্রথম পাহাড় আসবে ঘাসফুলের দখলে।
নতুন মুখে চমক অবশ্যই যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। একুশের লড়াইয়ের ‘খেলা হবে’ গান বেঁধে যিনি প্রচারের আলোয় চলে এসেছিলেন। সেই দেবাংশুকে আগেই রাজ্য সংগঠনের আইটি সেলের দায়িত্ব দিয়েছিল তৃণমূল। সোশাল মিডিয়ায় দেবাংশুর ঝাঁজালো বাণ সামলানো অনেক সময়ই বিজেপির পক্ষে কঠিন হয়েছে। এবার তাঁকেই সংসদ ভবনে পাঠাতে চায় তৃণমূল।
আরও উল্লেখযোগ্য দেবাংশুকে যে আসনে প্রার্থী করা হল, সেই তমলুক কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই সেখানে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে। সেখানে বিজেপি প্রার্থী হওয়া প্রায় নিশ্চিত। ফলে এখানে একেবারেই দুই নতুন মুখের লড়াই হবে। দেবাংশু রাজনীতিতে কিছুটা অভিজ্ঞ, আর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু এক সপ্তাহও কাটেনি। তমলুকের মাটি যেমন, তাতে গেরুয়া হাওয়া প্রবল থাকলেও দেবাংশুর মতো তরুণ নেতা যে লড়াইয়ে ভালো বেগ দেবেন, তা মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তমলুকের পাশের কেন্দ্র কাঁথিতেও নতুন প্রার্থী তৃণমূলের। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক এবারের লোকসভা ভোটের টিকিট দেওয়া হল।
[আরও পড়ুন: ‘স্বামী মোদির নাম আওড়াচ্ছে? রাতে খেতে দেবেন না’, মহিলা ভোটারদের পরামর্শ কেজরিওয়ালের]
তৃণমূলের আরেক বাজি বিষ্ণুপুরের প্রার্থী সুজাতা খাঁ। বিজেপি থেকে দলবদল করে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দেওয়ার পর একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সুজাতাকে আরামবাগ থেকে প্রার্থী করেছিল দল। সেখানে ভালো লড়াই করেও জিততে পারেননি তিনি। পরবর্তীতে তাঁকে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ করা হয়। সংগঠনে কাজ এবং প্রচার ময়দানে ঝড় তোলা সেই সুজাতার উপর এবার লোকসভার লড়াইয়ে এগিয়ে দিল বাংলার শাসক শিবির। আরেক প্রার্থী দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সংগঠন থেকে উঠে আসা বাপি হালদার। ইনিও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। তাঁকে মথুরাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী করেছে তৃণমূল।
বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী নির্বাচন চমকপ্রদ। বিশিষ্ট মনোবিদ ডাক্তার শর্মিলা সরকার এই কেন্দ্র থেকে লড়বেন লোকসভা ভোটে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলেও সমাজে তাঁর প্রভাব এবং চিকিৎসক মহলে খ্যাতির কারণেই তাঁকে প্রার্থী করা হল বলে মনে করা হচ্ছে।
ঝাড়গ্রামের (Jhargram) প্রার্থীপদেও চমক। এই কেন্দ্রে প্রথমে ভূমিকন্যা তথা রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার নাম নিয়ে জল্পনা থাকলেও, রবিবার ঘোষণা করা হল ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপ্ত সাঁওতালি সাহিত্যিক কালীপদ সোরেন। তিনি ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুরের বাসিন্দা। সাঁওতালি সাহিত্য জগৎ তাঁকে ‘খেরওয়াল সোরেন’ নামে চেনে। তিনিই এবার আদিবাসী এলাকা ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের বাজি।