সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সীমান্ত ঘেঁষা বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে একটি কথা বহুল প্রচলিত। তা হল, 'মতুয়া ভোট যার বনগাঁ তার।' তবে সে প্রবাদ আর প্রবাদ রইল না বনগাঁ, রানাঘাটে। ভোটের ফলে বিজেপি বাজিমাত করলেও আড়াআড়ি ভাগ হল মতুয়া ভোট। বাংলার নির্বাচনী ফলাফল অনুযায়ী এবারও সংসদে যেতে চলেছেন বনগাঁ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর। পাশাপাশি বাংলায় বিজেপির 'মরা বাজারে'ও বনগাঁ কেন্দ্রের পাশাপাশি রানাঘাটে এবারও জয়ী হয়েছেন বিজেপির জগন্নাথ সরকার। তবে নির্বাচনী ফল বলছে, ভোটে জিতলেও সিএএ কাঁটার খোঁচায় রীতিমতো আহত গেরুয়া প্রার্থীরা।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল(Lok Sabha Election Result 2024) অনুযায়ী, রানাঘাটের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার পেয়েছেন প্রায় ৭ লক্ষ ৭৮ হাজার ভোট। অন্যদিকে, তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারী প্রাপ্ত ভোট প্রায় ৬ লক্ষ। অর্থাৎ প্রায় ১ লাখের কিছু বেশি ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। অন্যদিকে বনগাঁ কেন্দ্রে যদি দেখা যায়, এখানে প্রায় ৭ লক্ষ ১৯ হাজার ভোট পেয়েছেন শান্তনু ঠাকুর। তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস পেয়েছেন প্রায় ৬ লক্ষ ৪৬ হাজার ভোট। ব্যবধানের হিসেবে প্রায় ৭৩ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন বিশ্বজিৎ দাস। তবে সিএএ ইস্যুতে যে বিপুল ভোটের আশা করছিল বিজেপি সে আশা ব্যর্থ হয়েছে। বড় সংখ্যা মতুয়ারা অনাস্থা দেখিয়েছে সিএএ-এর উপর।
[আরও পড়ুন: ‘দাদা’ নয় জিতলেন পাঠান, বহরমপুরের ‘ধর্ম’যুদ্ধে পরাজিত ‘রবিনহুড’]
লোকসভা নির্বাচনের আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বাস্তবায়ন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় মাস্টারস্ট্রোক ছিল বিজেপির। শুধু মতুয়া নয়, সীমান্তবর্তী ওই এলাকায় থাকা বাংলাদেশিদেরও দীর্ঘদিনের দাবি নাগরিকত্ব। যা এতদিন প্রতিশ্রুতির পর্যায়ে ছিল অবশেষে সেটা আইনে পরিণত হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক মহলের তরফে অনুমান করাই হচ্ছিল, এই দুই কেন্দ্রে তৃণমূলের আঁচড় কাটা বেশ কঠিন হবে। অন্যদিকে, মতুয়া ভোটে ভাঙন ধরাতে তৃণমূলের তরফে বারবার প্রচার চালানো হয়েছে, 'যে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের কথা বলা হয়েছিল, তা আদৌ নিঃশর্ত নয়।' পরিবর্তে উন্নয়নকে হাতিয়ার করে মাঠে নামে তৃণমূল। মতুয়া ভোটে ভাঙন ধরাতে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয় বনগাঁর একদা বিজেপি নেতা মতুয়া ঘনিষ্ঠ বিশ্বজিৎ দাসকে। তবে ফলাফলের ট্রেন্ড অনুযায়ী সিএএ যে মতুয়াদের মধ্যে খুব বেশি প্রভাব ফেলেছে এমনটাও বলা যায় না। বনগাঁতে তৃণমূল প্রায় ৭৩ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকলেও তৃতীয় স্থানে থাকা কংগ্রেস এখানে পেয়েছে প্রায় ৬৫ হাজারের বেশি ভোট। ফলে বলা যেতেই পারে, নির্বাচনে হারলেও বিজেপিমুখী মতুয়া ভোটে বড়সড় ভাঙন ধরাতে সফল হয়েছে শাসকদল। এই কেন্দ্রে যদি জোট হত সেক্ষেত্রে রীতিমতো চাপে পড়তেন শান্তনু ঠাকুর। গত বছর এই কেন্দ্রে ১ লক্ষের বেশি ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থী মমতাবালা ঠাকুরকে হারিয়েছিলেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ভালোবাসায় ঘাটাল জিতে দেব জিতিয়ে দিলেন রাজনীতির সৌজন্যকেই]
অন্যদিকে রানাঘাটে বিজেপি জয়ী হলেও নির্বাচনী ফলাফল বলছে, এখানেও মতুয়া ভোটে একছত্র আধিপত্য ফলাতে পারেনি গেরুয়া শিবির। এখানে প্রায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারী। অন্যদিকে, তৃতীয়স্থানে থাকা সিপিএম এখানে পেয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ২৩ হাজার ভোট। ফলে এই কেন্দ্রেও মতুয়া ভোটে ভাঙন বেশ স্পষ্ট। রাজনৈতিক মহলের অনুমান, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সিএএ আইন কার্যকর করলেও শর্তসাপেক্ষ নাগরিকত্ব মতুয়াদের অন্দরেও ভয় ধরিয়েছে। যার ফলে সেভাবে নাগরিকত্বের আবেদনও করতে দেখা যায়নি মতুয়াদের। আশঙ্কা তৈরি হয়, একবার আবেদন করলে নাগরিক হিসেবে যে সুবিধা পাচ্ছেন তারা সেটাও হারিয়ে ফেলবেন। এই সন্দেহজনক সিএএ কিছুটা ভালমতোই ভীতি ধরায় মতুয়াদের মধ্যে। বিজেপিকে খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করতে পারছেন না মতুয়ারা। যার ফল, বনগাঁ ও রানাঘাটে বিজেপি জিতলেও খুব কম ব্যবধানে জয় পেলেন শান্তনু ঠাকুর ও জগন্নাথ সরকার।