সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এবারও হাতে রইল শুধুই পেনসিল। চব্বিশের লোকসভা ভোটেও বামেদের আসন শূন্য। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেও নিট ফল জিরো। হতাশ আলিমুদ্দিন। মুখ লুকাতে ব্যস্ত সিপিএম নেতা—কর্মীরাও। বন্ধু কংগ্রেস মালদহ দক্ষিণে আসন পেলেও বাম—কং জোট কোনওভাবেই দাগ কাটতে পারেনি। আর সোশাল মিডিয়ায় থাকা কমরেডরা প্রচারে ঝড় তুলে সিপিএম কিন্তু হম্বিতম্বি করে, আশা জাগিয়েও শূন্যের গেরো কাটাতে পারল না। ইনসাফ যাত্রা, যুব সংগঠনের ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ, সোশাল মিডিয়ায় এআই প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর ভাষণও কোনও কাজ দেয়নি।
ভোটের ফল বলছে ১০.৮৬ হয়েছে শতাংশ ভোট পেয়েছে বাম ও কংগ্রেস জোট। স্পষ্ট হিসাব, রামে যাওয়া ভোট ফেরেনি। উনিশের ভোটে বঙ্গে সিপিএমের (CPM) প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬.৩ শতাংশ। এবার তা কিছুটা কমে প্রায় ৬ শতাংশ। কংগ্রেস পেয়েছিল ৫.৬ শতাংশ। এবার তাদের ৫ শতাংশ। একুশে আবার বাম—কংগ্রেস জোটের ভোট ছিল ৮.৬ শতাংশ। গত পঞ্চায়েত ও পুরসভা ভোটে বামেদের ফলের প্রতিফলন লোকসভায় হয়নি। প্রাপ্ত ভোট অনেকটাই কম। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর (Biman Basu) বক্তব্য, ‘‘আমরা বামপন্থী রাজনীতি করি। হার—জিত নিয়ে ভেবে চলি না।’’ যদিও ভোট চলাকালীন বিমান বসুই একাধিকবার দাবি করেছিলেন, এবার বামেদের ফল যা হবে তা অনেকেই ভাবতে পারবে না। শূন্যের গেরো কাটবে বলেই তিনি দাবি করেছিলেন।
[আরও পড়ুন: কুরসিতে তিনিই, শক্তি হারিয়ে সব দলকে সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা মোদির মুখে]
এক ঝাঁক তরুণ প্রজন্মকে দলের সামনের সারিতে এনে, প্রার্থী করে আলিমুদ্দিনের ভোট ম্যানেজাররা হিসাব কষে আশায় ছিলেন হাতেগোনা দু—একটি কেন্দ্রে হয়তো লাল আবির তাঁরা ওড়াতে পারবেন। কিন্তু ব্যর্থ সুজন—সৃজন—সায়ন—সব্যসাচী—প্রতিকুর থেকে দীপ্সিতারা। শুরুতে কিছুটা আশা জাগালেও বেলা বাড়তেই মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে পিছিয়ে যান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেখানকার প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। সেলিম দ্বিতীয় হলেও, দমদমে সুজন চক্রবর্তী, যাদবপুরে সৃজন ভট্টাচার্য, হাওড়ায় সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, তমলুকে সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, ডায়মন্ড হারবারে প্রতিকুর রহমান থেকে শ্রীরামপুরে দীপ্সিতা ধর—রা তৃতীয় হয়েছেন।
[আরও পড়ুন: ৩৭০ প্রত্যাহার রসদ জুগিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদকে! জেলবন্দি রশিদের বারামুলা জয় বিপদের ইঙ্গিত?]
পার্টির অভ্যন্তরের হিসাব বলছে, রামে যাওয়া ভোট সেভাবে ফেরাতে পারেনি বামেরা। হারের ময়নাতদন্তে প্রাথমিক রিপোর্ট, ১) মিটিং—মিছিলে লোক হলেও, ভোটবাক্সে তার প্রতিফলন এবারও হয়নি। কারণ, বিরোধী ভোটের বড় অংশই বিজেপিতে গিয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামেদের থেকে বিজেপির উপরই বড় ভরসা রয়েছে এখনও। ২) নিচুতলায় সংগঠন সেভাবে মেরামত করা যায়নি। নিচুতলার নেতা—কর্মীরা সাধারণ মানুষের মন জয়ে ব্যর্থ। ৩) রামে যাওয়া ভোটের অধিকাংশই ফেরানো যায়নি। ৪) তরুণ প্রজন্মকে সামনে নিয়ে এলেও মানুষ ৩৪ বছরের বাম শাসনের ইতিহাস এখনও ভুলতে পারছে না। ৫) সব চেয়ে বড় বিষয়, শুধুমাত্র তৃণমূলের বিরোধিতা করে এবং কার্যত একতরফা তৃণমূলকে আক্রমণ করতে গিয়ে বিজেপিকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দিয়েছে সিপিএম নেতারা।