শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: সন্ধ্যা নামলেই গান ধরেন কোম্পানি কমান্ডেন্ট। তাল ঠোকেন মনিরাম সাংময়-সহ বাকিরা। বছর দুয়েক ধরে পলিটেকনিকের এই ভবনে পা পড়েনি আবাসিক ছাত্রদের। টুকিটাকি সংস্কার করে সেই ভবনেই রাখা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। সামনে একফালি খেলার মাঠ। জাল টাঙিয়ে সেখানে দেদার চলে ভলিবল, ব্যাডমিন্টন খেলা। মাঠের ধারে ঝোপঝাড় জঙ্গল, পরিত্যক্ত বাড়ি আর প্রাচীন গাছের সারি। সন্ধ্যা হলেই রমজানের চাঁদ উঁকি দেয় আকাশে। তখন যেন ভূতের গল্প জন্ম নেয় চারপাশে। গল্পে গল্পে পার হয়ে যায় অনেকটা সময়। তারপরই গান ধরেন কমান্ডেন্ট স্যর।
জলপাইগুড়ি শহর থেকে সামান্য দূরে পলিটেকনিক কলেজ। যার পরিবেশটাই অনেকটা ক্যান্টনমেন্টের মতো। বিস্তীর্ণ জায়গা নিয়ে কলেজ ও ছাত্রছাত্রীদের আবাসন। একটার সঙ্গে একটার দূরত্ব এতটাই যে যাতায়াতে সাইকেল ব্যবহার করতে হয়। পিছনেই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। যার ক্যাম্পাস আরও বড়। ভোটের সময় এই ক্যাম্পাসগুলো ব্যবহার করে প্রশাসন। এবার ভোটের ডিসিআরবি এবং গণনা কেন্দ্রের জন্য নেওয়া হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভিতর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসকে। তাই বাহিনী রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রাবাসে।
[আরও পড়ুন: শুভেন্দুকে ভোট প্রচারে অনুমতি নয়! ‘খলিস্তানি’ মন্তব্যের প্রতিবাদে কমিশনে চিঠি শিখ সংগঠনের]
মার্চ পয়লাতে বিহারের ঠাকুরগঞ্জ থেকে জেলায় এসে পৌঁছেছেন এসএসবির ১৯ ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা। যার কমান্ডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন মেডেনি বর সইকিয়া। সুঠাম চেহারার মানুষটি যখন জলপাই উর্দি পড়ে হাঁটেন, তখন তাঁর চোখের চাহনি চিতার মতো মনে হয়। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই এই মানুষটিকেই আবার পাওয়া যায় অন্য মেজাজে। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দেন জওয়ান মনিরাম সাংময়।
এসএসবি ঠাকুরগঞ্জের ১৯ ব্যাটেলিয়নে রয়েছেন ৯৫ জন জওয়ান। তারমধ্যে রয়েছেন তিনজন পাচক, একজন জোগানদার আর একজন সাফাইয়ের কর্মী। কোতোয়ালি পুলিশের তত্বাবধানে প্রথমদিন থেকে ভোটারদের অভয় দিতে টহলদারি চালিয়ে যাচ্ছেন কোম্পানি কমান্ডেন্ট সাহেবের অধীনে থাকা এই বাহিনী। সকাল-বিকেল নিয়ম করেই চলছে রুটমার্চ। একটা সময় ঝাড়খন্ডের মাওবাদী উপদ্রুত এলাকা, এমন কি কাশ্মীর সীমান্তে গিয়েও নিজেদের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন এই কোম্পানির জওয়ানরা। কোম্পানির কমান্ডেন্ট জানান, ‘‘সকালে রুটিন মেনে ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে শরীর চর্চা। এরপর হালকা ব্রেকফাস্টের পর পুলিশের সঙ্গে ভোটারদের মনোবল বাড়াতে গ্রাম, শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল। দুপুরে ফিরে লাঞ্চ। এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম। বিকেলে হস্টেলের উল্টো দিকের মাঠে নিজেদের মধ্যে দল ভাগ করে ভলিবল, ব্যাডমিন্টন খেলা। সন্ধ্যা নামতেই হস্টেল ক্যাম্পাসে ঢুকে আড্ডা-গল্প। আর তার পরই শুরু হয় গানের আসর।’’
[আরও পড়ুন: আইফোন অর্ডার করে হেনস্তার শিকার! ক্রেতাকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে Flipkart]
‘নীলে নীলে অম্বর পে চাঁদ যব আয়ে’ গান ধরেন কম্পানি কমান্ডার মেডিনি বর সইকিয়া। একের পর এক কালজয়ী গান। কিশোর থেকে উদিত। গান শেষে খাওয়া। রাত ন’টায় নৈশভোজ শেষ। রমজানের চাঁদ তখন আরও বেশি উজ্জ্বল। ততক্ষণে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন নৈশ প্রহরার দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রিরা। রাত বাড়ে, একে একে নিভে যায় আবাসিক হস্টেলের আলো।