মলয় কুণ্ডু, পাটলিপুত্র: মেটে রঙের ধাতব তারের জাল লাগানো গোলাকৃতি ঘরটা দেখলে উপর উপর তেমন কিছুই মনে হয় না। কিন্তু পাশের গাইড যখন বলতে শুরু করেন, এই সেই কুয়ো যেখানে মৌর্য সাম্রাজ্য দখল করার জন্য অশোক তাঁর নিরানব্বই জন ভাইকে নিক্ষেপ করেছিলেন। এই সেই ‘আগম কুঁয়া’, যেটা অশোক শুধুমাত্র তৈরি করেছিলেন রাজাদেশ মানতে অবাধ্য নাগরিককে সটান ছুড়ে ফেলার জন্য! নিচের অন্ধকারটায় তাকাতেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠতে বাধ্য।
[‘গরম বাড়লেই বিদেশে পালান রাহুল’, ‘অজ্ঞাতবাস’ নিয়ে কটাক্ষ অমিত শাহ’র]
ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের এমন কতই ইতিহাস লুকিয়ে পাটলিপুত্রের অন্দরে। সাম্রাজ্য পেরিয়েছে সময়ের নিয়মে। এখন আধুনিক এই পাটলিপুত্র কিছুদিনের মধ্যেই দেখতে চলেছে ‘চাচা-ভাতিজি’-র লড়াই। লোকসভা ভোটে পাটলিপুত্র দখলের লড়াইকে আমবিহারী এই নামই দিয়েছেন। চাচা রামকৃপাল যাদব আর ভাতিজি মিসা ভারতী।বাবা লালুপ্রসাদ যাদবের দীর্ঘদিনের সহযোগী ছিলেন রামকৃপাল। প্রায় সতেরো বছর ধরে হাতে-হাত ধরে আরজেডি-তে একইসঙ্গে লড়াই চালিয়েছেন রাম ও লালু। বিহারবাসীও জানত রামকৃপালই যাকে বলে লালুর রাইট হ্যান্ড। সেই বিজেপি-র রামকৃপালের সঙ্গেই এবার ‘প্রেস্টিজ ফাইট’ মহাজোট প্রার্থী আরজেডি-র মিসার।
কিন্তু ‘প্রেস্টিজ ফাইট’ কেন? আরজেডি অফিসে ঢুঁ দিয়ে যা জানা গেল, তা অনেকটা এ রকম, মিসা রাজ্যসভার সাংসদ। মেয়াদও অনেক বাকি। ফলে না জিতলেও সাংসদ তো থাকছেনই। কিন্তু এ এমন এক আসন, যেখানে অতীতে হেরেছেন লালুপ্রসাদ। এমনকী মিসাও। এবার লালুপ্রসাদ পরিবারের সদস্য হিসাবে মিসাই একমাত্র প্রার্থী। তেজস্বীও প্রার্থী তালিকা ঘোষণার প্রথমদিনেই জানিয়ে দেন মিসাই পাটলিপুত্রের প্রার্থী হচ্ছেন। তাই পাটলিপুত্র আসনে জিতলে তবেই দলের কাছে বাড়তি গুরুত্ব মিলবে। বিজেপি অবশ্য মিসাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। বিজেপির নিখিল আনন্দ জানালেন, “রামকৃপাল এখানে কার্যত ভূমিপুত্র। ভোট হচ্ছে বলে মিসা এসেছেন। তিনি এখানে অতিথি। আর মিসা না হারলেও লালুপ্রসাদের পরিবারের তাতে কোনও সম্মানহানি হবে না। কারণ, তিনি তো সাংসদ থাকছেনই।”
লালুপ্রসাদের একদা সহযোগীকে লালুপ্রসাদের মেয়ে হারাতে পারবেন কি না সেটাই দেখতে চায় রাজনৈতিক মহল। বেশিদিনের ঘটনা নয়। ২০১৪ সালে লালুপ্রসাদ পাটলিপুত্রের প্রার্থী করেন বড় মেয়ে ডাক্তার মিসা ভারতীকে। এরপরই আরজেডি থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিজেপি-তে যোগ দেন রামকৃপাল। সেই শুরু লড়াইয়ের। লোকসভায় সে বছরই মিসাকে হারিয়ে দেন রামকৃপাল। এবার তার দ্বিতীয় পর্ব।
২০০৮ সালে পাটনা সাহিব কেন্দ্রটি ভেঙে পাটনা সাহিব ও পাটলিপুত্র দু’টি আলাদা আসন হয়। বরাবরই পাটলিপুত্র যাদবদের গড়। রয়েছে ভূমিহার ও মুসলিম ভোট। কিন্তু কোনওদিনই এই আসনে লালুর দল জিততে পারেনি। এই আসনে ২০০৯ সালে প্রার্থী হয়েছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব নিজে। সে বছর জেডিইউ-এর রঞ্জন যাদবের কাছ হেরেছিলেন লালুপ্রসাদ। গতবারের ভোটে এই আসনে সিপিআই (এমএল) প্রার্থী রামেশ্বর প্রসাদ পেয়েছিলেন প্রায় ৫১ হাজার ভোট। আর মিসা রামকৃপালের কাছে হেরেছিলেন প্রায় ৪১ হাজার ভোটে। এবার পরিস্থিতি বদলে কংগ্রেস ও সিপিআই (এমএল), দুই দলই আরজেডি-র সঙ্গে মহাজোটে শামিল। তাই এবার প্রেস্টিজ ফাইটে মিসার নাম আগেই ঘোষণা করে দেয় আরজেডি। অন্যদিকে বিজেপি জোট করেছে জেডিইউ-র সঙ্গে। গতবার জেডিইউ প্রার্থী এই আসনে প্রায় ৯৭ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। এই অঙ্কে রামকৃপালও জমি ছাড়তে নারাজ। এমন উত্তেজনার লড়াইয়ে তাই পারিবারিক টানাপোড়েনও বাদ যাচ্ছে না। মিসা যখন বলেছেন, বিজেপি-র সঙ্গে গিয়ে নিজের হাত রক্তাক্ত করেছেন তাঁরা ‘চাচা’, তখন রামকৃপাল তাঁর ‘ভাতিজি’-কে জানিয়েছেন, সেই রক্তাক্ত হাতেই কন্যাসম মিসাকে আশীর্বাদ করছেন তিনি। পাটনা লাগোয়া এই লড়াইয়ে পাটলিপুত্রের দখল না থাকলে রাজনৈতিকভাবে যে কোনও দলের পক্ষেই তা যথেষ্টই সম্মানহানির। আর ভোটযুদ্ধটা যখন ‘চাচা-ভাতিজি’-র, তখন তা বাস্তবিকই ‘প্রেস্টিজ ফাইট’।
[সোনিয়া গান্ধীর থেকে দেশপ্রেম শেখা উচিত মোদির, বলছেন সিধু]
The post চাচা-ভাতিজির সম্মানের লড়াই পাটলিপুত্রে, পারিবারিক দ্বন্দ্বে তপ্ত নির্বাচনী পরিবেশ appeared first on Sangbad Pratidin.