shono
Advertisement

অনভ্যস্ত কুচি সামলে শুভদৃষ্টির লগন, এই তো বাঙালির সরস্বতী পুজো

প্রথম প্রেমের সুখস্মৃতি যেন বসন্তপঞ্চমীর জাগপ্রদীপ। The post অনভ্যস্ত কুচি সামলে শুভদৃষ্টির লগন, এই তো বাঙালির সরস্বতী পুজো appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:28 PM Jan 22, 2018Updated: 04:05 PM Sep 17, 2019

শাম্মী হুদা:  ‘আমার মন সারাক্ষণ তোর মেঘের চুল সরিয়ে…’ শীতের শিরশিরানি কমিয়ে কোথায় যেন বসন্তের ছোঁয়া। প্রেম এল গুনগুনিয়ে। প্রাণপ্রিয় স্মার্টফোনটাই তখন একটুকরো ভিক্টোরিয়া। হলুদ শাড়ির আঁচল থেকে চোরকাঁটা সরাতে ব্যস্ত বছর কুড়ির রশ্মি। নিখিলটা এখনও এল না। মনেমনে নিখিলের মুণ্ডুপাত করতে করতেই একবার চার নম্বর গেটের দিকে চোখ গেল রশ্মির। নাহঃ ছেলেটা কোত্থাও নেই। একমনে দূর্বাঘাস ছেঁড়াতেই মন দিল সে।

Advertisement

হাত দুয়েকের মধ্যেই শালগাছে হেলান দিয়ে চারজোড়া চোখ। অনভ্যস্ত কুচি সামলে চলছে শুভদৃষ্টি। বেমক্কা হাওয়ায় অবাধ্য চুল তখন দৃষ্টিসীমাকে রুদ্ধ করতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেদিকেই তাকিয়ে থাকে রশ্মি। লেটলতিফ নিখিলের উপরে জমে থাকা রাগটা নিমেষেই গলে জল হয়ে যায়। তখন দুজনেই এইচএস দেবে। পড়ার চাপে সব ভুললেও সরস্বতী পুজোতে স্কুলে যেতে ভোলেনি। তাইতো বি-সেকশনের কোকঁড়া চুলের ছেলেটার সঙ্গে ধাক্কা লেগে গেল। অনভ্যস্ত শাড়ির আঁচল সামলাতে গিয়ে খেয়ালই ছিল না। উলটোদিক থেকে নিখিল তখন কাউকে রাস্তার দিকনির্দেশ দিতে দিতে আসছিল। মুখোমুখি ধাক্কাতে দু’জনেই অপ্রস্তুত। আশপাশের প্রত্যেকে হেসে উঠে পরিস্থিতি হালকা করে দিলেও আলাপটা কিন্তু সেদিনই হয়েছিল। স্কুল শেষের দিনে চোখে জল নিয়ে ফোন নম্বর দেওয়া-নেওয়া। রেজাল্ট বেরলে দু’জন একই কলেজে। শুধু সাবজেক্টটাই আলাদা। তারপর তো গুনতে গুনতে দুটো বছর পেরিয়ে আজ তিন বছরের সরস্বতী পুজো। কলেজে না গিয়ে দু’জনেই বাইরে দেখা করার প্ল্যান করেছিল। এদিকে দেখো, ছেলেটা আজও সময়ে আসতে পারে না।

[শহরে ফিরলেন সপ্তশৃঙ্গজয়ী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত, বিমানবন্দরে হাজির পর্বতারোহীরা]

কলিংবেলের শব্দে স্বপ্ন ভাঙে রশ্মির। লাফ দিয়ে উঠে বসে। বাইরে খেতে যাওয়ার প্ল্যান ছিল। রিকি ফিরলেই গ্রে স্ট্রিটের পাঞ্জাবী ধাবাটায় যাবে। আজ খিচুড়ি ছাড়া অন্যকিছু জাস্ট নয়। ফ্লোরিডায় সন্ধ্যা নামলেও কলকাতায় তো সরস্বতী পুজো দুপুরবেলাতেই। তিনবছর আগের সেই সরস্বতী পুজোর দুপুরেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, প্রেমে আপাতত বিরতি। কেরিয়ারটা গোছানো যাক। তাই নিখিলকে কলকাতায় রেখে সাতসমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে চলে এল রশ্মি। সিদ্ধান্তটা নিতে কষ্ট হলেও দু’জনের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এগিয়েছিল। কিন্তু মাঘী শুক্লাপঞ্চমী তিথি এলে সব ভুলে সেই কলেজ কেটে বাসন্তী শাড়ির রশ্মি হয়ে ওঠে আজকের সিরিয়াস মেয়েটা।

নেট ক্লিয়ার করে কলেজের পার্টটাইম লেকচারার নিখিল। শুধু সরস্বতী পুজোর দিনে প্রেসিডেন্সির ক্যাম্পাস তাকে টানতে থাকে। মনে হয় গেটের আশপাশেই রশ্মি তার জন্য অপেক্ষা করছে। এখনই শাড়ির কুচি ঠিক করে দিতে বলবে। আর নিখিল, তখন চারিদিক ভালোভাবে দেখে নিয়ে মাটিতে উবু হয়ে বসে প্রেমিকার শাড়ির কুচি সেট করবে। প্রেমের এই টুকরো কোলাজ আজ সুখস্মৃতি। গরম খিচুড়িতে জিভটা প্রায় পুড়েই গেল রশ্মির। ফোনের স্ক্রিনে নিখিলের ছবি। বাসন্তীরঙা প্রজাপতিটা যেন চোখে চোখে ঘুরছে। মাসদুয়েক পরে এল কাঙ্ক্ষিত ফোন। রিকি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। ফোন ছেড়ে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে রশ্মি। তারপর ধাতস্থ হয়ে জানায় ডক্টরেট হয়েছে নিখিল। আগামী সরস্বতী পুজোয় তাদের গায়ে হলুদ। ফ্লোরিডার শীতল দিনে একমুঠো দখিনাবাতাস যেন নেচে বেড়াচ্ছে। রশ্মি ততক্ষণে বাঁধনহারা। গলায়, ‘আমার মন সারাক্ষণ তোর মেঘের চুল সরিয়ে…’

[স্কার্ট ছেড়ে প্রথম শাড়ি মানেই সরস্বতীপুজো, নিজের ক্লাসেই হাতেখড়ি দেয় প্রেম]

ছবি সৌজন্য:  সৈকত সাঁতরা

The post অনভ্যস্ত কুচি সামলে শুভদৃষ্টির লগন, এই তো বাঙালির সরস্বতী পুজো appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement