অর্ণব আইচ: পাঁচ কোটি টাকা তোলা না পেয়ে গাড়ির শোরুমে গুলি চালিয়ে মালিককে খুনের চেষ্টা। দিল্লির (Delhi) তিলকনগরে এই ঘটনার পিছনে ছিল দেশের একটি কুখ্যাত গ্যাং, যা পরিচালিত হয় বিদেশ থেকে। ওই শোরুমের মালিক প্রাণে বাঁচলেও আহত হন সাতজন। এই গুলি চালানোর ঘটনার পরই মাস্টারমাইন্ড মোহিত গেলাওয়াত দিল্লি থেকে পালায়। দিল্লি পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া খবরের সূত্র ধরেই রবিবার রাতে নিমতলা ঘাটের কাছ থেকে সেই গ্যাংস্টার মোহিতকে গ্রেপ্তার কলকাতা পুলিশ। বাবুঘাটে দূরপাল্লার বাসে করে নামার পর নিমতলায় একটি চায়ের দোকানে সঙ্গীর সঙ্গে দেখা করতে এসেই ধরা পড়ে যায় সে। যে চাইনিজ পিস্তল দিয়ে দিল্লিতে মোহিত গুলি চালিয়েছিল, সেই পিস্তল ও পাঁচ রাউন্ড গুলিও তার কাছ থেকে উদ্ধার করেন লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডা দমন শাখা ও উত্তর বন্দর থানার পুলিশ আধিকারিকরা।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৬ মে দিল্লির শোরুমে গুলি চালানোর পর এই গ্যাংয়ের ‘স্পটার’ কেতন কুণ্ডুকে দিল্লির গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেন। জেরার মুখে কেতনই পুলিশকে জানায় যে, গ্যাংস্টার মোহিত তারই পরামর্শে ‘কাটা রুটে’ দিল্লি ছাড়ে। সে তাকে কলকাতার একজনের কাছে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেয়। দূরপাল্লার বাস পালটে পালটে রবিবারই বাবুঘাটে এসে পৌঁছয়। দিল্লি পুলিশ তার কলকাতায় আসার খবর লালবাজারে জানায়। লালবাজারের গোয়েন্দা ও উত্তর বন্দর থানার পুলিশ যখন মোহিতের সন্ধান করছে, তখন সে চলে আসে নিমতলা ঘাটে। চায়ের দোকানে কলকাতায় তার আশ্রয়দাতার জন্য অপেক্ষা করছিল সে। তখনই তাকে হাতেনাতে ধরা হয়। একটি ৭.৬২ চিনা পিস্তল ও পাঁচ রাউন্ড বুলেট পুলিশ উদ্ধার করে। উত্তর বন্দর থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে অভিযোগ দায়ের হয়। সোমবার তাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয়। আদালতের অনুমতিতে মোহিতকে দিল্লি নিয়ে যাচ্ছেন দিল্লির গোয়েন্দারা।
[আরও পড়ুন: ‘পার্থ ভৌমিককে ভোট দিন’, রাজের সঙ্গে ভোটপ্রচারের গাড়িতে গলা ফাটালেন ‘মিঠাই’ সৌমিতৃষা!]
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, গত ৬ মে দিল্লির তিলকনগরের পুরনো গাড়ি কেনাবেচার শোরুমে ঢুকে পড়ে তিন গ্যাংস্টার। দোকানে মালিকের দিকে গুলি চালাতে থাকে তারা। তাঁর শরীরে গুলি না লাগলেও শোরুম ও ভিতরে থাকা গাড়ির কাচ ভেঙে যায় গ্যাংস্টারদের ছোড়া প্রায় কুড়ি রাউন্ড গুলিতে। শোরুমের কর্মী ও ক্রেতা-সহ প্রায় সাতজন গুলি ও কাচ ভেঙে আহত হন। পালানোর সময় এক কর্মীর হাতে একটি চিঠি দিয়ে যায় গ্যাংস্টাররা। তাতে লেখা ছিল হিমাংশু ভাউ, নবীন বালি ও নীরজ বাওয়ানার নাম। এই তিনজনই উত্তর ভারতের কুখ্যাত গ্যাংস্টার। এরা উত্তর ভারতেরই কুখ্যাত ‘ভাউ’ গ্যাংয়ের মাথা। পর্তুগাল থেকে এই গ্যাং পরিচালনা করে হিমাংশু ভাউ। নবীন ও নীরজ এখন তিহার জেলে। হিমাংশু ওই শোরুমের মালিককে ফোন করে পাঁচ কোটি টাকা তোলা চায়। তিনি গুরুত্ব না দেওয়ায় শোরুমে এসে তাঁকে গুলি করে খুনের চেষ্টা করা হয়। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দিল্লি পুলিশ কেতন কুণ্ডুকে গ্রেপ্তার করে। জেরার মুখে পুলিশকে সে জানায়, হিমাংশু ভাউ তাকে এই গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়। তাই কেতন হরিয়ানার রিধাউ থেকে গ্যাংস্টার মোহিতকে সুপারি দিয়ে দিল্লিতে নিয়ে আসে। মোহিতকে জেরা করে দিল্লিতে গুলি চালানোর অন্য সঙ্গীর সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।