সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ‘জল ধরো জল ভরো’ এই প্রকল্পেই সেচের ব্যবস্থা করার তোড়জোড় রাজ্য সরকারের। কিন্তু এই ভরসায় চাষের কোনও সুযোগই নেই দুর্গাপুরের কাঁকসার বিদবিহার অঞ্চলে। কারণ, এই প্রকল্প বাস্তবায়িতই হয়নি এখানে। এদিকে সরকারিভাবে বিদবিহার অঞ্চল সেচসেবিত অঞ্চল। সেই হিসাবে জমি রাখার সিলিং বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এবং জমি রাখার খাজনাও দিতে হয় জমির মালিককে৷
[আরও পড়ুন: ‘কে ওকে মেরে হাত নোংরা করবে’, কৌশিক সেনকে দেওয়া হুমকি নিয়ে মুখ খুললেন সায়ন্তন]
বিদবিহার অঞ্চলের চাষিদের অভিযোগ, এই পঞ্চায়েতের এক ছটাক জমিও সেচের আওতায় পড়ে না। চাষিদের নিজের গাঁটের অর্থ খরচ করেই শ্যালো বসিয়ে তা থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে চাষ করতে হয়৷ আর তা না হলে বৃষ্টির ভরসায় বসে থাকতে হয় এই অঞ্চলের চাষিদের। যদিও এখানকার কৃষি নির্ভর জীবিকার কপাল পুড়েছে সেই কংগ্রেস আমল থেকেই। বিদবিহার পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সদস্য গিরিধারী সিনহা বলেন, “কংগ্রেস আমলে ভুল করে সেচ দপ্তর তাদের সেচের মানচিত্রে বিদবিহার অঞ্চলকে জুড়ে দেওয়ার পর থেকেই এলাকার চাষিদের কপাল পুড়েছে। তাই সেচের সুবিধার্থে সরকারি নানা প্রকল্প কার্যকরীও হয় না এই এলাকায়।” কংগ্রেসের পর বাম আমল, এমনকী বর্তমান তৃণমূল জমানাতেও এই ভুল সংশোধন না হওয়ায় কৃষির সমস্যা রয়েই গেছে কাঁকসার বিদবিহার অঞ্চলে।
এবছর প্রায় মাঝ শ্রাবণেও বৃষ্টি নেই দক্ষিণবঙ্গে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থেকে থেকে হতাশ এই এলাকার কৃষকরা। কিন্তু এমন পরিস্থিতি হওয়ার কথা নয় এই এলাকার। নদীকেন্দ্রিক বিদবিহার অঞ্চলে টুমনি নদীর জলকেই যদি ধরে রাখা যেত, তাহলে টুমনি সংলগ্ন প্রায় ৮ টি গ্রামের হাজার বিঘা কৃষি জমিতে চাষের কাজ সম্ভব হতো বলেই স্থানীয় কৃষকদের দাবি। তাঁরা বলছেন, টুমনি থেকে নালা কেটে পাকা বাঁধ দিয়ে ঘিরে রেখে যদি জল ধরে রাখা হয়, তবে সারা বছরই চাষের জল মিলবে এই এলাকায়। অজয় নদের উপনদী টুমনি নদীর জলকে ঘিরে তাই স্বপ্ন দেখছেন বিদবিহার গ্রামের কৃষকরা।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য গিরিধারী সিনহা জানান, “এই রকম জলাধার আট থেকে দশটি করে দেওয়া হলেই সেচের সমস্যা অনেকটাই মিটবে এই এলাকার।” পাশেই মলানদিঘি পঞ্চায়েতের বিষ্টুপুর গ্রামে টুমনি নদীর উপর সম্প্রতি চেক ড্যাম করে চাষের কাজ করা হচ্ছে। এই বিষয়ে বিদবিহার পঞ্চায়েতের প্রধান বুলু সাওয়ের কথায়, “শীতকালে টুমনি নদীকে এইভাবে বেঁধে রেখে সেচের জল দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত নিজের খরচেই ওই কাজ করে থাকে। কিন্তু শীতে জল পর্যাপ্ত থাকেনা। বর্ষায় জল ধরে রাখা যায় না। তাই দীর্ঘদিনের এই সমস্যা রয়েই গেছে।”
[আরও পড়ুন:পুলিশ-স্থানীয়দের কামড়, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির কাণ্ডে আতঙ্ক বালিতে]
কাঁকসার বিডিও সুদীপ্ত ভট্টাচার্য এ বিষয়ে জানান, “শুধু টুমনি নদীর জল ধরে রেখেই সেচের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার আগে চাষিরা নিজের উদ্যোগে বৃষ্টির জলকে ধরে রেখেই সেচের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারে। এর জন্যে সরকারি সহায়তা চাইলেও তারা পেতে পারে।”
ছবি: উদয় গুহরায়
The post নেই বৃষ্টি ও সেচের ব্যবস্থা, জোড়া ফলায় বিদ্ধ বিদবিহারের কৃষককুল appeared first on Sangbad Pratidin.