স্টাফ রিপোর্টার: হয়তো কোনও কথাই নতুন নয়। তা-ও চোখে আঙুল দিয়ে তিনি দেখিয়ে দিলেন ভুলগুলি ঠিক কী কী। মুখ্যমন্ত্রীর রেকর্ড কাজ। তার সুফল ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে মিলল। কিন্তু, উনিশে কী এমন হল গ্রামীণ দুর্গে পরাজয়? তা হলে ২১-এ কী হবে? দলের নেত্রী যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন সম্ভব দারুণভাবে আবার ফিরে আসা। বুঝিয়ে দিলেন সেটাও।
[আরও পড়ুন- ‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে অমর্ত্য সেনের বক্তব্য লেখা হোর্ডিং কাদের? উঠছে প্রশ্ন]
প্রশান্ত কিশোরের সৌজন্যে প্রথম ‘পার্টি ক্লাস’-এর স্বাদ পেল তৃণমূল কংগ্রেস। তিনি যে হোমওয়ার্ক করেই এসেছেন, পার্টির অভ্যন্তর ভালমতো পর্যবেক্ষণ করেছেন তা ঠারেঠারে বুঝে গেলেন গ্রাম থেকে শহরের নেতারা। গলদ কোথায়? রোগ নির্ণয়ে তিনি যা বললেন, তা মোটামুটি এরকম। সূত্র জানাচ্ছে, এক, চরম আত্মতুষ্টি। পরপর বিরাট জয়ে অনেকে ভেবে নিয়েছিলেন এটাই দস্তুর। জয় অনায়াসেই আসবে। বাস্তবে হয়েছে উলটো। গা ছাড়া ভাবের জন্য সংগঠনে বিরাট ক্ষতি হয়েছে। ভোটটা অনেকে সিরিয়াসলি নেননি। ভেবেছেন হাওয়ায় জিতে যাবেন। দুই, কারও কারও জীবনযাপনে সমস্যা। রাজার ছেলে ভাল গাড়ি চড়বে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, প্রজার ছেলের গাড়ি যদি দামি হয় প্রশ্ন উঠবেই। মানুষের চোখে লাগবে। শোধরাতে হবে। তিন, পঞ্চায়েত ভোটে বহু আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতায় সাংগঠনিক ক্ষতি হয়েছে। ওটা অতীত। এর পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই। চার, নিজেদের স্বার্থে রাজনীতির ময়দানে বিরোধীদের জায়গা দিতে হবে। তাতে দলের লাভ। কোথায় সাংগঠনিক মেরামতি দরকার, তা হলে বোঝা যাবে। এলাকায় অকারণে বিরোধীদের সঙ্গে বিরোধে গিয়ে লাভ নেই। প্ররোচনাতেও পা নয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাজের পক্ষেই আছেন সাধারণ মানুষ। পাঁচ, মানুষের কথা শুনতে হবে। তাঁরা কী চাইছেন বুঝতে হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে। সরকারি পরিষেবা থেকে মানুষ যেন বঞ্চিত না হয়। মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে। আচরণের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে।
শুক্রবারের ‘পার্টি ক্লাস‘-এ মূলত আমন্ত্রিত ছিলেন সমস্ত জেলা সভাপতি ও মন্ত্রীরা। তাঁদের নিয়ে সকাল ১১টা থেকে দুপুর তিনটে চলল ঘুরে দাঁড়ানোর ‘ওয়ার্কশপ‘। বক্তা হিন্দিভাষী। সেই জন্য যাঁরা বাংলায় বললেন, সেটা তাঁকে হিন্দি ও ইংরেজিতে বুঝিয়ে দিলেন দলের সভাপতি সুব্রত বক্সি। ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
[আরও পড়ুন- এবার নজরে কালীঘাট সেতু, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে যান চলাচল]
একজন করে নেতৃত্ব উঠছেন। তাঁর বক্তব্য রাখছেন। সেই প্রেক্ষিতে প্রশান্ত তাঁর মতামত দিয়েছেন। তাঁর দাওয়াই। এক, বুথস্তরে ১৫ জনের কমিটি গড়তে হবে। ওই কমিটিতে থাকবেন এলাকার সমস্ত সম্প্রদায়ের অন্তত একজন করে প্রতিনিধি। ধর্মের ভিত্তিতে শুধু নয়, সামাজিক ভিত্তিতেও সবার প্রতিনিধিত্ব। এঁদের ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থাকবে রাজ্য নেতৃত্বের হাতে। তাঁদের সঙ্গে কলকাতার অফিস নিয়মিত কথা বলবে। দুই, বিধায়কদের দায়িত্ব এখন সবচেয়ে বেশি। তাঁকেই কমিটির সঙ্গে সমন্বয়ের কাজটা করতে হবে। বিধায়কদের নিজের এলাকায় থাকতে হবে। কলকাতায় আসার দরকার নেই। অন্তত মাসে সাতদিন এলাকায় রাত্রিবাস করতে হবে। তিন, পুলিশের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে। কোনও সমস্যা হলে দলকে জানাতে হবে। নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। চার, ক্ষমতার অপব্যবহার কোনওভাবেই কাম্য নয়। মানুষ এসব ভাল চোখে দেখে না। পাঁচ, বিধানসভা ভোট দু’বছর বাকি। হাতে যথেষ্ট সময় আছে। দলের এই গাইডলাইন নিয়ে চললে যেসব এলাকায় ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে বিজেপি ঢুকেছে তাদের মোকাবিলা করা কোনও সমস্যাই নয়। ছয়, সবাই দলের লাইনে চলুন। দলনেত্রী কী বলছেন নজর রাখুন। কোনও অকারণ ঝামেলায় কেউ জড়াবেন না। প্রশান্তর ওয়ার্কশপে খুশি তৃণমূল নেতারা। প্রশান্তও জানিয়েছেন, এই ধরনের ‘পার্টি ক্লাস’ তিনি প্রায়ই করবেন।
The post বিরোধীরা থাকলে লাভ নিজেদেরই, তৃণমূল নেতাদের ‘ক্লাস’ নিলেন প্রশান্ত কিশোর appeared first on Sangbad Pratidin.