ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) শান্তিনিকেতনের বাড়ির জমি নিয়ে বিশ্বভারতীর অভিযোগ আপত্তিকর, অপমানজনক। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আর শুক্রবার নোবেলজয়ীর পাশে থাকার বার্তা নিয়ে তাঁকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, ‘প্রতীচী’ নিয়ে যে বিশ্বভারতী যে বেআইনি জমি দখলের অভিযোগ তুলেছে, তাতে তিনি ব্যথিত, ক্ষুব্ধও। বিশ্বভারতীর এই আচরণের বিরোধিতায় তিনি যে অমর্ত্য সেনের পাশে রয়েছেন, তাও বোঝালেন।
চিঠিতে মমতা নিজের স্বভাবসুলভ ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে নোবেলজয়ীকে ‘অমর্ত্যদা’ বলে সম্বোধন করেছেন। শান্তিনিকেতনের মাটিতে অমর্ত্য সেনদের পারিবারিক শিকড় কতখানি গভীর, তাঁর দাদু ক্ষিতিমোহন সেন প্রায় আট দশক আগে সেখানে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন, এসব পারিবারিক ইতিহাসের কথা চিঠিতে উল্লেখ করে মমতা বোঝালেন, তিনিও গোটা বিষয়টি সম্পর্কে কতখানি ওয়াকিবহাল।
[আরও পড়ুন: ‘তৃণমূলের একটাই মুখ, ওটাও দু্র্মুখ’, মুখ্যমন্ত্রীকে তোগ দাগলেন দিলীপ ঘোষ]
এরপরই চিঠিতে তিনি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ‘অকস্মাৎ অনুপ্রবেশকারী’ বলে উল্লেখ করে তাৎপর্যপূর্ণভাবে লেখেন, ”আপনার প্রতি তাঁদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। দেশের ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আপনার এই লড়াইয়ের পাশে সর্বতোভাবে আছি আমি। কারণ, তাঁদের এই আচরণ আমাকে ব্যথিত করেছে।” চিঠির শেষে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে ফের নোবেলজয়ী অর্থনীতিকের ‘বোন’ বলে পরিচয় দিয়ে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন।
সম্প্রতি অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’ নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে, ওই বাড়ির খানিকটা অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি। অমর্ত্য সেনের পরিবার বেআইনিভাবে তা দখল করে বাড়ি বানিয়েছে। যদিও বিশ্বভারতীর এই অভিযোগের নেপথ্যে তাদের নিজেদেরই দুর্বলতা রয়েছে। সম্প্রতি পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল তোলা নিয়ে বিতর্কের সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতীর বহু জমিই নিজেদের নামে রেকর্ড নেই। লিজ দেওয়ার পর বহু বহু বছর ধরে সেখানে যাঁদের বসবাস, ভূমি দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, তাঁদের নামেই রেজিস্টার্ড।
[আরও পড়ুন: ‘দুয়ারে সরকার’ এবার তারকাখচিত, দেব-মিমি-নুসরতদের নিয়ে প্রচারের ভাবনা তৃণমূলের]
এবার এই জমিগুলি পুনরুদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। যার সূত্র ধরেই ‘প্রতীচী’তে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ”উনি আদর্শগত ভাবে বিজেপি বিরোধী বলে এমন চক্রান্ত চলছে। এটা নিন্দনীয়। অমর্ত্য সেনের অপমান মানে বাংলার অপমান। তা মেনে নেওয়া হবে না।” শুক্রবারও চিঠিতে আকারে-ইঙ্গিতে সে কথাই বোঝালেন তিনি।