সন্দীপ চক্রবর্তী: বদলে যাওয়া বাংলায় পথচলা শুরু করছে সি-প্লেন। সমুদ্রে বা নদীতে এই আধুনিক যানে চেপেই এক নিমেষে পাড়ি দেওয়া যাবে হাজার কিলোমিটারের দূরত্ব। বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনেই বাঙালির মনে সেই স্বপ্ন উসকে দিলেন স্পাইস জেটের কর্ণধার অজয় সিং। শুধু স্বপ্ন উসকে দেওয়া নয়, তিনি ঘোষণা করলেন, সি-প্লেন তৈরির হাব গড়ে উঠবে এই বাংলায়। দিঘা-গঙ্গাসাগরের মতো পর্যটন কেন্দ্রে চলবে এই যান। পর্যটনেও আসবে নয়া দিশা। তেমনই বাড়তে থাকা বিনিয়োগে তাল মেলাতে বাড়ানো হবে উড়ান, ঘোষণা স্পাইস জেটের চেয়ারম্যানের। চলতি বছরে চালু হবে কলকাতার সঙ্গে চিন ও আশিয়ান দেশের যোগাযোগ। দুর্গাপুরের অণ্ডাল বিমানবন্দর থেকে বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদের উড়ানও চালু হবে দ্রুত।
[বিনিয়োগের গন্তব্য বাংলা, বিজনেস সামিটে একমত তাবড় শিল্পপতিরা]
অজয় সিং যখন ঘোষণা করেছেন, তার প্রেক্ষিত ছিল ‘ক্যাপ্টেনস অফ ইন্ডাস্ট্রি’র ভাষণ। মুকেশ আম্বানি জানান, তিনি পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন। জেএসডব্লু-র কর্ণধার ইস্পাত কর্তা সজ্জন জিন্দাল উল্লেখ করেন, আগামী তিন-চার বছরেই ইস্পাত-রং-সিমেন্ট ও বিদ্যুৎক্ষেত্রে তাঁর সংস্থার বিনিয়োগ ছাড়াবে দশ হাজার কোটি টাকা। সঞ্জীব গোয়েঙ্কার বিনিয়োগ অন্তত এক হাজার কোটি টাকা। দুর্গাপুরে খুব দ্রুত কার্বন ব্ল্যাক প্ল্যান্ট গড়বেন তিনি। নিরঞ্জন হীরানন্দানি আগামী তিন বছরে পাঁচ জেলায় গ্যাস রিটেল আউটলেট গড়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিনিয়োগ হবে ১৪০০ কোটি টাকা। সরোজ পোদ্দার ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন মঞ্চ থেকেই। তেমনই এইচ আর বাঙ্গার সিমেন্ট শিল্পে লগ্নি করছেন। চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে তেল সংস্থা অ্যারামকো।
ফ্রান্সের প্রতিনিধিরা জানান, তাঁরা আপ্লুত। ক্রীড়া সরঞ্জামে ডেকাথলন সংস্থা ডোমজুড়ের কারখানারই সম্প্রসারণ করবে। সেতু নির্মাণে মাতিয়ের-এর সঙ্গে মউ হবে শিল্প নিগমের সঙ্গে। খনি শিল্পে বিনিয়োগ করছে পোল্যান্ড। সম্মেলনের আগেই ১০ হাজার কোটি লগ্নির প্রস্তাব দিয়েছেন আদানিরা। সবমিলিয়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের নিশ্চয়তা হয়েছে। আরও লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনেই তা প্রকাশ পাবে।
মনকাড়া বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে বারবার শিল্পপতিরা রাজ্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। যেন লক্ষ্মীর ঝাঁপি উপচে পড়ছিল একের পর এক ঘোষণায়। অজয় সিংয়ের ঘোষণা যেহেতু সরাসরি উন্নয়নের পালকে নতুন পালক গুঁজেছে, তাই নজর ছিল সেখানে। গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের শেষ দিনে সবরমতী নদীতে সি-প্লেনে চেপে প্রচারের আলো কেড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জলপথেও চলতে পারে এই উড়ান। ভারতের মানুষের সি-প্লেন নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। স্বপ্নের বাহন বাঙালির কাছে এত তাড়াতাড়ি ধরা দিতে পারে, আঁচ করা সম্ভব ছিল না। তা হল বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের হাত ধরেই।
[কোটা থাকলেও রেলে প্রতিবন্ধী কর্মীদের নেই বিশেষ সুবিধা বা সম্মান]
সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চেই স্পাইস জেট সংস্থার চেয়ারম্যান অজয় সিং বলেন, ‘সবরমতীতে প্রধানমন্ত্রী চড়েছেন। সব নদী, লেকেও চালানো সম্ভব। এবার গঙ্গাসাগর-দিঘার মতো নদী ও সমুদ্রভিত্তিক পর্যটন ক্ষেত্রেও সি-প্লেন চালানো হবে। হাব করা হবে পশ্চিমবঙ্গে। সি-প্লেন তৈরি হবে এই রাজ্যে।’ বাংলায় সি-প্লেন চালুর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গোটা কনভেনশন সেন্টার করতালিতে ফেটে পড়ে। উল্লসিত বাংলার শিল্পপতি ও প্রতিনিধিরাও মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থনে হর্ষধ্বনি করে প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে স্পাইস জেট কর্ণধার বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হলেন এনার্জির অ্যাটমিক পাওয়ার প্ল্যান্ট। তাঁর টানেই এখানে আমরা অনেক বেশি বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ বর্তমানে কলকাতা থেকে ব্যাংকক এবং ঢাকার মধ্যে স্পাইস জেট চলছে। সেটিকে সম্প্রসারিত করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়ে দেন অজয় সিং। তাঁর কথায়, ‘এখন পশ্চিমবঙ্গে সত্তরটির বেশি ফ্লাইট চালাচ্ছে স্পাইস জেট। আরও বেশি সংখ্যায় আমরা এবছরই উড়ান চালু করব। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ এখন বিনিয়োগ ও পর্যটনের লক্ষ্যে আসা-যাওয়া করছেন। চিন-সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গেও কলকাতাকে চলতি বছরেই জুড়ে দিতে স্পাইস জেট সংস্থা আরও একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে।’ স্বচ্ছ প্রশাসন এবং স্থায়ী সরকার থাকার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ‘ডায়নামিক লিডার’-এর টানেই বাংলায় যে তাঁরা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন স্পাইস জেট কর্ণধার।
[চোখে IPS হওয়ার স্বপ্ন, বিয়ে রুখতে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে থানায় গেল নাবালিকা]
The post পর্যটনে নয়া দিশা, দিঘা-গঙ্গাসাগরে এবার সি-প্লেন appeared first on Sangbad Pratidin.