অর্ণব দাস, বারাসত: পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম অবস্থায় কলকাতার ৩টি মেডিক্যাল কলেজে ঘুরেছিলেন। কিন্তু আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির কারণে বিনা চিকিৎসায় দেগঙ্গার যুবক সফিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়। এই অভিযোগই তুলেছে তাঁর পরিবার। এই খবর জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বৃহস্পতিবার দেগঙ্গার সোহাই শ্বেতপুর পঞ্চায়েতের গাংআটি গ্রামে মৃতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন জেলা পরিষদের সভাপতি তথা বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল।
বছর আটত্রিশের মৃত যুবক পেশায় দিন মজুর ছিলেন। দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তিনিই। অসহায় স্ত্রী সাইনারা বিবি ছাড়াও তাঁদের বছর ছয়ের এক ছেলেও রয়েছে। এই অবস্থায় পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে মৃতের স্ত্রী সাইনার চাকরির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করবেন বলেই জানিয়েছেন নারায়ণ গোস্বামী। একইসঙ্গে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে ফেরারও আবেদন জানিয়ে বলেন, "আর জি করের ঘটনায় আমরাও মর্মাহত। মুখ্যমন্ত্রী দোষীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে কলকাতায় মিছিল করেছেন। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার কথা বলেছেন। জুনিয়ার ডাক্তারদের কাছে আমরা বারবার আবেদন করছি, তাঁরা তাঁদের মহৎ পেশায় ফিরে আসুন। রোগীদের পরিষেবা দিন।"
দেগঙ্গার মৃত যুবকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা প্রসঙ্গে নারায়ণ আরও জানান, "পরিবারকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই। মৃত যুবকের সংসার চালানোর জন্য স্ত্রীর একটা চাকরির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করব। এখানে এসে শুনলাম এর আগেও দেগঙ্গায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরাও কলকাতার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পাননি।" প্রসঙ্গত, সাইনারা অসুস্থতার কারণে বাপের বাড়িতে ছিলেন। তাই স্ত্রীকে দেখতে সফিকুল হাবড়ার সোনাকেনিয়া গ্রামে গিয়েছিলেন। গত ১ সেপ্টেম্বর খুব ভোরে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাইকে করে হাবড়া বেড়াঁচাপা রোড ধরে দেগঙ্গায় ফিরছিলেন সফিকুল। কলাপোল এলাকায় পিছন থেকে আসা একটি ট্রাকের হর্ণের আওয়াজে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি রাস্তার ধারে রাখা ইটের গাদায় ধাক্কা মারেন। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে পরিবারকে জানালে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সফিকুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সন্ধ্যায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়।
এর পর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এস এস কে এম, এন আর এস এই ৩টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে ৮-৯ ঘন্টা ঘুরেও কোথাও চিকিৎসা পাননি সফিকুল। শেষে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শত চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে সঠিক সময়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ার কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে যুবকের পরিবার।
এই প্রসঙ্গে এদিনও মৃতের জামাইবাবু জাহাঙ্গীর গাজী বলেন, "আর জি করের জন্য ডাক্তাররা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছেন না। অথচ নার্সিংহোমগুলোয় চিকিৎসা চলছে। রাজ্য সরকারকে অবমাননা করছে বারবার। চিকিৎসকরা যদি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতেন, তাহলে সফিকুলের মতো গরিব কাউকে বিনা চিকিৎসায় মরতে হত না।" মৃতের প্রতিবেশী লুৎফর রহমান জানান, "চিকিৎসা না পেয়ে সফিকুলের মৃত্যু বিচার কী হবে? এর প্রতিবাদ তো আমাদের করতেই হবে। এদিনই আমরা সকলে এনিয়ে আলোচনা করেছি। কারণ আমরা চাইনা, সফিকুলের মত অন্য কারোও এমন পরিণতি হোক।"