অভিরূপ দাস: হুবহু এক দেখতে। সাদা, ছোট্ট। জল দিয়ে চট করে গিলে নিয়েছিলেন। যখন বুঝতে পারলেন, তখন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে চোখ। ব্লুটুথ হেডফোন খেয়ে বিষম বিপদ বাঁধিয়ে ছিলেন তারাশংকর দত্ত (৬৩)। দক্ষিণ কলকাতার তপসিয়ার বাসিন্দা তারাশংকরের খাদ্যনালী থেকে ব্লুটুথ হেডফোন বের করল ফর্টিস হাসপাতাল।
দিন পনেরো আগের ঘটনা। রোজ রাতে কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করার ট্যাবলেট খেতেন তারাশংকর। সে ওষুধ খেয়েই ঘুমোতে যেতেন। সেদিনও ওষুধ খেয়ে শুয়ে পরেছিলেন। কিন্তু হেডফোন এবং ট্যাবলেট তো আর এক নয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রথমটায় গলায় আটকে যায়। “বড় ট্যাবলেট বলে হয়তো এমন হচ্ছে..”, এই ভেবে ঢকঢক করে এক গ্লাস জল খেয়ে নেন তপসিয়ার বাসিন্দা। তাতেই গলা দিয়ে আরও নিচে নেমে যায় নামী কোম্পানির ‘এয়ারপড প্রো।’
সকালে ঘুম ভাঙার পর বুকে অস্বস্তি বোধ করেন তারাশংকর দত্ত। তখনও বুঝতে পারেননি বিষয়টি। গান শুনতে গিয়েই টের পান। সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও পাচ্ছিলেন না এয়ারপডের এক পিস। শেষমেশ দেখতে পান ট্যাবলেটের স্ট্রিপ যেমন কে তেমন পড়ে রয়েছে। “তবে কি কাল রাতে…?” ভাবতে গিয়েই হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার জোগাড়। আনন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ছোটেন তপসিয়ার বাসিন্দা। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের ডা. সপ্রতিভ মণ্ডল দ্রুত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেন। রোগীকে পরীক্ষা করে তিনি বুঝতে পারেন ইসোফেগাসে আটকে রয়েছে এয়ারপড, থুড়ি হেডফোনটি।
[আরও পড়ুন: আরজি খারিজ, বিদেশ যেতে পারবেন না সোনিকা মৃত্যু মামলায় অভিযুক্ত বিক্রম]
গলবিলকে পাকস্থলী অবধি সংযোগকারী পেশীবহুল নলই হল খাদ্যনালী বা ইসোফেগাস। এই খাদ্যনালীর দৈর্ঘ্য ১৮ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার। ইসোফেগাসে বিজাতীয় বস্তু আটকে কি বিপদ হতে পারে? প্রশ্নের উত্তরে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নীশান্তদেব ঘটক জানান, বাচ্চারা অনেক সময়ই খেলার ছলে এটা সেটা মুখে দিয়ে দেয়। বড়দের ক্ষেত্রে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা খুব সামান্য। ডা. ঘটকের কথা অনুযায়ী, বড়দের খাদনালীতে গোলাকৃতি, কিংবা ছোট্ট পুঁতির মতো কোনও কিছু ঢুকলেও তা মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে বস্তুটি যদি তিনকোণা কিম্বা এবড়োখেবড়ো হয়, সেক্ষেত্রে আটকে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
এক্ষেত্রে ইসোফেগাসের নিচের অংশে আটকে ছিল ওই হেডফোন। ঠিক কোন জায়গায় আটকে রয়েছে তা জানতে করতে হাইরেজোলিউশন কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি স্ক্যান করা হয় তারাশংকরের। করা হয় গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টেনাল এন্ডোস্কোপি। হাসপাতালের গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজি বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. দেবাশিস দত্ত মাছ ধরার জালের মতো এক ‘নেট’ দিয়ে বের করে আনেন এয়ারপড। সে যন্ত্রের নাম রথ নেট এন্ডোস্কপি বাস্কেট। টাকার কয়েন, পিন, বোতাম, মাছের কাঁটার মতো বস্তু খাদ্যনালী থেকে হামেশাই বের করা হলেও, কানের হেডফোন বের করে আনা বিরল ঘটনা।