shono
Advertisement

সম্পত্তি হাতাতে আধারে কারসাজি, চাকর বনে গেল ছেলে

আধার কি নথি হিসাবে গ্রহণযোগ্য? The post সম্পত্তি হাতাতে আধারে কারসাজি, চাকর বনে গেল ছেলে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:29 AM Jan 21, 2019Updated: 10:26 AM Jan 21, 2019

শুভঙ্কর বসু: আধার কি নথি হিসাবে গ্রহণযোগ্য? নাকি এর কোনও বৈধতা নেই?-এই প্রশ্নে শীর্ষ আদালতে সিদ্ধান্ত এখনও বাকি। কিন্তু তার আগেই আধারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল কলকাতা হাই কোর্টে। বিশেষত যে প্রক্রিয়ায় আধার তৈরি হয়েছে, তা এখন বড়সড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছে হাই কোর্ট। আদালতের এই পর্যবেক্ষণের কেন্দ্রে ক’দিন আগে দায়ের হওয়া একটি মামলা। যে মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় আধার কার্ড তৈরির প্রক্রিয়ার একটি ফাঁককে কাজে লাগিয়ে খোদ মনিবের ছেলে বনে গিয়েছে বাড়ির চাকর। আর তারপরই নিজের সেই ‘জাল’ আধার কার্ডকে নথি হিসাবে দাখিল করে মনিবের সম্পত্তি হাতাতে আদালতে মামলাও করে ফেলেছে সে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি! ধরা পড়ে গিয়েছে জালিয়াতি। আর সেইসঙ্গে উঠে এসেছে আধার তৈরির প্রক্রিয়ায় বড়সড় গলদের চিত্রটাও।

Advertisement

[শুধু ব্রিগেড নাকি আরও সভা? মোদিকে নিয়ে সংঘাত বিজেপির অন্দরে]

কী সেই গলদ? মামলার বয়ান অনুযায়ী জানা গিয়েছে, ভবানীপুরের ৫২বি, কাঁসারিপাড়া রোডে একটি তিনতলা বাড়ির নিচতলায় ১৯৬৯ সাল থেকে স্ত্রী মীনাক্ষী, দুই সন্তান ভাস্কর ও দেবযানীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন ডাক্তার কেশবভূষণ রায়। বাড়িতেই ডাক্তারি প্র‌্যাকটিসের একটি চেম্বার তৈরি করেন। চেম্বারের কাজে সহায়তার জন্য রতন নামে এক চাকরকে নিয়োগ করেন কেশববাবু। চেম্বারের কাজ ছাড়াও বাড়ির বিভিন্ন কাজ করে দিতে হত রতনকে। তাই সে কেশববাবুদের সঙ্গে ওই বাড়িতেই থাকতে শুরু করে। পরবর্তীতে বাড়িরই একজন সদস্য হয়ে ওঠে। এরপর কেশববাবুর একমাত্র ছেলে ভাস্কর চাকরি পেয়ে বিদেশে চলে যান। মেয়ে দেবযানীরও বিয়ে হয়ে যায়। ২০০৬-এর সেপ্টেম্বর নাগাদ কেশববাবুর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। ইতিমধ্যে ২০১২ সাল নাগাদ নেদারল্যান্ডে মৃত্যু হয় ছেলে ভাস্করের। স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে রতনই ছিল কেশববাবুর সঙ্গী।

২০১৫-র জানুয়ারি মাসে কেশববাবু মারা যান। কেশববাবুর মৃত্যুর পর রতনকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন বাড়ির মালিক দেবাশিস নন্দী। কিন্তু রতনের মাথায় তখন খেলা করছে অন্য ফন্দি! মনিবের মৃত্যুর সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার ভাড়া নেওয়া অংশ নিজের নামে করতে আসরে নেমে পড়ে সে। নিজেকে কেশববাবুর ছেলে বানিয়েও ফেলে আধার কার্ডের সাহায্যে। এক্ষেত্রে ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছিল রতন। কারণ মালিক কেশববাবুর মতো তার পদবিও ছিল ‘রায়’। আধার তৈরির আবেদনপত্রে রতন সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের বাবার নামের জায়গায় লেখে মৃত মালিক ‘কেশবভূষণ রায়’-এর নাম। আর সেই তথ্য যাচাই ছাড়াই আধার কর্তৃপক্ষ বা ‘ইউনিক আইডেনটিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ (ইউডিএআই) কেশবভূষণ রায়কে রতন রায়ের বাবা বানিয়ে দেয়। আর তাতেই হাতে জ্যাকপট পায় রতন। কেশববাবুর ভাড়া নেওয়া অংশ হাতাতে নিজেকে তাঁর ছেলে দাবি করে আলিপুর আদালতে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে বসে। উপায় না দেখে রতনের প্রকৃত পিতৃপরিচয় প্রমাণ করতে আধার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে পাল্টা মামলা করেন বাড়ির মালিক দেবাশিস নন্দী।

[বিশ্বাসই হচ্ছে না প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন, এখনও আতঙ্কে বহুতলের বাসিন্দারা]

দেবাশিসবাবুর করা সেই মামলার সূত্রে আধার কার্ড তৈরিতে বড়সড় গলদ সামনে এসে পড়েছে। আদালতে ইউডিএআই-এর তরফে ভুলের কথা স্বীকার করে জানানো হয়, আবেদনকারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোনওরকম যাচাই ছাড়াই আধার কার্ড তৈরি হয়েছে। আধার কর্তৃপক্ষের এই সাফাই শুনে বিচারপতি প্রতীকপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, “কোনও দেশের ইতিহাসে এমনটা হয়নি যে সে দেশের একটি বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র সবথেকে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে পদ্ধতিতে তা তৈরি হয়েছে তাতে আধার তৈরির মূল উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। এটা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।”

এরপরই বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন আধার তৈরির আবেদনে তিন নম্বর শিডিউলে জনবিন্যাস সংক্রান্ত তথ্যের জায়গায় পেরেন্ট বা অভিভাবক হিসাবে বাবা, মা, স্বামী বা স্ত্রীর নাম থাকা বাধ্যতামূলক। ওই তথ্য ছাড়া আধার তৈরি করা যাবে না। এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে চাকর রতন রায়ের প্রকৃত বাবার নাম জানতে পেরেছে আদালত। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর তদন্ত করে জেনেছে রতনের বাবার নাম রাখালচন্দ্র রায়। রতনের বিরুদ্ধে আপাতত যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে পুলিশকে করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

The post সম্পত্তি হাতাতে আধারে কারসাজি, চাকর বনে গেল ছেলে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার