শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ি হয়ে চিনে পাচারের ছক। সুদৃশ্য ক্রিস্টালের তিন জার বন্দি কোবরা সাপের বিষ-সহ গ্রেপ্তার পাচারকারী। বাজেয়াপ্ত বিষের বাজার মূল্য আনুমানিক১৩ কোটি টাকা। ধৃত যুবকের নাম সলিন আখতার মান্ডু (৩২)। বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত এলাকায়। বাংলাদেশ থেকে এই বিষ ভারতে ঢুকেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান বনদপ্তরের। জলপাইগুড়িতে হাতবদলের সময় বমাল সমেত যুবককে গ্রেপ্তার করে গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের বনকর্মীরা। শুক্রবার ধৃত যুবককে জলপাইগুড়ি আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানায় বনদপ্তর। আদালত ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বলে জলপাইগুড়ি আদালতে সহকারী সরকারি আইনজীবী সিন্ধু কুমার রায় জানিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: Coronavirus Update: গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা সংক্রমিত ৭৫৩ জন, মৃত ১৮]
জলপাইগুড়িতে ২০১৫ সাল থেকে একের পর এক অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে সাপের বিষ উদ্ধার করে বৈকন্ঠপুর বনবিভাগের বেলাকোবা রেঞ্জ। পাচারের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক থেকে নিয়ে আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত একাধিক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে বনদপ্তর। পরবর্তী কয়েক বছর বিষ পাচারের ঘটনা সামনে না এলেও পাচারকারীরা যে হাত গুটিয়ে বসে নেই এদিনের গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের অভিযান সে কথাই প্রমাণ করে।
এদিন সকালে গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের কাছে খবর আসে জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন ৭৩ মোড় এলাকায় কোবরা সাপের বিষ হাতবদল হবে। খবর পাওয়া মাত্র বনদপ্তরের স্পেশ্যাল টাস্কফোর্স অভিযানে নামে। খবরের সূত্র ধরে এক যুবক কে বমাল সমেত গ্রেপ্তার করে। বনদপ্তর সূত্রে খবর, যারা এই বিষ পাত্র হাতবদল করে নিয়ে যেতে এসেছিল অভিযানের আঁচ পেয়ে পালিয়ে যায়। তবে পাচারে ব্যবহৃত একটি বিএমডব্লিউ গাড়িকে চিহ্নিত করেছে বনদপ্তর। এই গাড়িতে পালিয়ে যায় দুই পাচারকারী। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে এই বিষ ভারতে প্রবেশ করে। বিষ পাত্রের গায়ে লেখা রয়েছে ফ্রান্সের রেড ড্রাগন কোম্পানির নাম। বনদপ্তরের এক আধিকারিক জানান, এর আগে যে কয়েকটি সাপের বিষের জার উদ্ধার হয়েছে সবকটার গায়ে রেড ড্রাগন কোম্পানির লেবেল সাটা ছিল। পাচারকারীরা ফ্রান্স থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে আনার পর ভুটান, নেপাল, চিনের মতো দেশে পাচারের জন্য জলপাইগুড়িকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করছে।
ধৃত যুবকের কাছ থেকে তিন জার বিষ ছাড়াও কোবরা সাপের ছবি-সহ ক্যাটালগ উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার ধৃত পাচারকারী যুবককে জলপাইগুড়ি আদালতে হাজির করে তদন্তের স্বার্থে ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় বনদপ্তর। বিচারক ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে সহকারী সরকারি আইনজীবী সিন্ধু কুমার রায় জানিয়েছেন। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, বাজেয়াপ্ত বিষের বাজার মূল্য আনুমানিক ১৩ কোটি টাকা। চিনে পাচারের উদ্দেশ্যে এই বিষ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। এই পাচার চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্র জড়িয়ে রয়েছে। ধৃত পাচারকারী যুবক কে জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের বাকিদের ধরতে অভিযান চলবে বলে বনমন্ত্রী জানিয়েছেন।