অরূপ বসাক, মালবাজার: শরীর ফিট রাখতে হবে। তাই মাইলের পর মাইল সাইকেল চেপে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত হোমগার্ড। নাম তাঁর মহম্মদ ইয়াকুব আলি। থাকেন সুলকাপাড়ায়। নিজের হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করেন সাইকেলে চেপে। জনপ্রিয়তাও আকাশ ছোঁয়া।
‘বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই গো বুবু ভাজা বাদাম’ গান গেয়ে বাদাম বিক্রি করে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছেন ভুবন বাদ্যকর। পেটের তাগিদেই এভাবে বাদাম বিক্রি করা শুরু করেছিলেন তিনি। মহম্মদ ইয়াকুব আলির সাইকেলে চেপে মুড়ি বিক্রি করার দু’টি কারণ। একটি তো অবশ্যই নিজেকে ফিট রাখা, অন্যটি অবসরের পরও সংসারের হাল ধরা। এভাবে মুড়ি বিক্রি করেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ইয়াকুব আলি।
সত্তর বছরের ‘যুবকে’র দাবি, তাঁর সংসার চালানোর অন্যতম ভরসা এই মুড়ির বিক্রির আয়। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ” চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর সাকুল্যে জোটে এককালীন ৫০ হাজার টাকা। কীভাবে সংসার চালাবো সেই দুশ্চিন্তা যখন কুড়েকুড়ে খাচ্ছিল তখনই ঝালমুড়ি বিক্রির কথা মাথায় আসে। শুরু থেকেই পেশার প্রতি সৎ থাকতে চেয়েছি। তাই খদ্দেরের অভাব হয় না। লক্ষ্য নিয়ে এগোলে যে কোন কাজেই সফলতা মেলা সম্ভব বলে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে মনে করি।”
[আরও পড়ুন: COVID-19: উদ্বেগ বাড়িয়ে দেশে একদিনে সংক্রমিত ২.৬৮ লক্ষ, ওমিক্রন আক্রান্ত ৬ হাজার পার]
ইয়াকুব শুধু যে বাড়িতেই মুড়ি ভাজেন তা নয়। তাঁর ঝালমুড়ির যাবতীয় মশলাপাতিও নির্ভেজাল। প্যাকেটজাত গুড়ো মশলা নয়। ব্যবহার করেন বাটা মশলা। সেটাও তৈরি করেন নিজের হাতেই। সকাল ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত সাইকেলে চেপে মুড়ি বিক্রি করেন ইয়াকুব। চষে বেড়ান এ গ্রাম -সে গ্রাম। নিজের ব্র্যান্ডের নাম রেখেছেন ‘দাদুর স্বাদেভরা ঝালমুড়ি’। তা চেখে দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন আট থেকে আশি প্রত্যেকেই।
ইয়াকুবের ছেলে বিশেষভাবে সক্ষম ছেলে। পরিবারে একমাত্র রোজগেরে সদস্য তিনি। তাই উপার্জন তাঁকে করতেই হবে। আর নিজেকেও ফিট রাখতে হবে। সাইকেলে চেপে মুড়ি বিক্রির ব্যবসায় দুই কাজই হয়। ২০১৬ সাল থেকে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ইয়াকুব। তবে করোনা সংকটের জেরে ইদানীং আয় কমেছে। তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন সত্তর বছরের মুড়ি বিক্রেতা।