প্রসূন বিশ্বাস: বুধবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের (Senior Women's NFC Trophy) ফাইনালে আর গ্রুপ পর্বের পুনরাবৃত্তি হল না। মণিপুরের (Manipur Football) মেয়েদের কাছে ০-২ গোলে হেরে হাতে সেরা গোলকিপারের ট্রফি নিয়ে সেদিকেই একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন হরিয়ানার শ্রেয়া হুডা। যিনি আবার দলের অধিনায়কও। সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠার পর ফাইনালেও মণিপুরের বালা দেবীর পেনাল্টি সেভ করেছিলেন তিনি। কিন্তু দলের ০-২ গোলে হার আটকাতে পারেননি শ্রেয়া। এদিন অবশ্য মণিপুর এগিয়ে যায় বালার গোলেই। পরে শিবানী দেবী ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। তাই আক্ষেপের সুরে শ্রেয়া বলে গেলেন, “সেরাটা দিয়েও ট্রফির কাছে পৌঁছতে পারলাম না। পরের বারের অপেক্ষায় থাকতে হবে।”
শ্রেয়া যখন এই কথাগুলো বলছিলেন, তখন কিছুটা দূরে সদ্য সিনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়ে মণিপুরের মেয়েরা ট্রফি হাতে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছেন। গত কয়েকমাস ধরে অশান্ত রাজ্য। ফলে দল গঠন করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল মণিপুর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাছে। হাজারো প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এই দল গঠন করে কোনও রকমে আবাসিক শিবির করে ন্যাশনাল খেলতে এসেছিল প্রতিযোগিতায় রেকর্ড ২১ বার চ্যাম্পিয়ন রাজ্যটি। রাজ্যের অশান্ত পরিবেশ মানসিকভাবে প্রভাব ফেলেছিল দলের ফুটবলারদের উপর। সেই সমস্যাকে সঙ্গী করেই কলকাতায় পা রেখেছিল মণিপুর। তারপর চ্যাম্পিয়ন। আর গতবারের মতো এবারও রানার্স হল হরিয়ানা।
[আরও পড়ুন: ‘আরও দুবছর খেলে দিতে পারে’, ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় মন্তব্য চেন্নাই কোচের]
গ্রুপ পর্বে এই হরিয়ানার কাছেই গ্রুপ পর্বে হেরে গিয়েছিল তারা। এছাড়া চ্যাম্পিয়নের মতোই খেলেছে গোটা টুর্নামেন্টে। ম্যাচ শেষে দলের ম্যানেজার, প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার বেমবেম দেবী বলছিলেন, “ফুটবলারদের মানসিকভাবে চাঙ্গা করাটাই আমাদের প্রধান কাজ ছিল। রাজ্যের অবস্থা একটা সময় পর্যন্ত মানসিকভাবে প্রভাব ফেলে দিয়েছিল ওদের উপর। তবে আমরা সেই কাজটা ভালোভাবেই করতে পেরেছি। খেলাই পারে শান্তির বার্তা দিতে।”
রাজ্যের পারিপার্শ্বিক অবস্থা এমন। তার উপর কয়েক মাস আগে বাবা মারা যাওয়ায় আইডব্লুএলে (IWL) খেলতে পারেননি মণিপুরের অধিনায়ক জাতীয় ফুটবলার বালা দেবী। এই প্রতিযোগিতায় ফিরেই দলকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি কমলা দেবীর সঙ্গে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন তিনি। পাশাপাশি প্রতিযোগিতার সেরা ফুটবলার হয়ে বুঝিয়ে দিলেন, অবসরের প্রান্তে পৌঁছে গিয়েও যথেষ্টই উজ্জ্বল এই মণিপুরী তারকা। প্রাক্তন জাতীয় অধিনায়ক বালা বলছিলেন, “বাবার মৃত্যুর জন্য গত আইডব্লুএল খেলতে পারিনি। তার উপর এবার আমরা যখন কলকাতায় পা রাখি তখনই প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছিলাম, আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর একটাই, সেটা চ্যাম্পিয়ন। তাই ফাইনালে পেনাল্টি মিস করার দু মিনিটের মধ্যেই গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলাম।”
[আরও পড়ুন: সুনীলের অভাব মিটবে? বিদায় বেদনার মধ্যেই প্রশ্ন কিংবদন্তির উত্তরসূরি নিয়ে]
ফাইনালে গোল করে খুশি শিবানীও। আইডব্লুএলে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলার সুবাদে এই শহর যাঁর বেশ পরিচিত। এদিন কিশোরভারতীতে কয়েকশো মণিপুরি সমর্থক এসেছিলেন। ম্যাচ শেষে চ্যাম্পিয়ন বালা-শিবানীদের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে ভেসে গেলেন তাঁরাও।