সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উপরাষ্ট্রপতি পদে বিরোধীদের মনোনীত প্রার্থী মার্গারেট আলভা (Margaret Alva) যে প্রাক্তন কংগ্রেস (Congress) নেত্রী তা বলা বাহুল্য। রবিবার এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ারের বাড়িতে বিরোধী দলগুলির বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে মার্গারেটের নাম ঘোষণা হয়। সমস্যা হল পাঁচ বারের কংগ্রেস সাংসদ হলেও সোনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) সঙ্গে মার্গারেটের সম্পর্ক সুবিধের নয়। আসলে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আশি বছর বয়সী নেত্রী অনেক ক্ষেত্রে দলের কঠোর সমালোচক। প্রকাশ্যেই। সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেত্রী সোনিয়ার বিরুদ্ধেও। এরপরেও মার্গারেটের বিষয়ের ঢোক গিলতে হচ্ছে সোনিয়াকে। কারণ রয়েছে তার। কিন্তু সোনিয়া তথা দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ঠিক কী কী অভিযোগ তোলেন মার্গারেট, যাতে জাতীয় রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল!
নিজের রাজনৈতিক যাত্রাপথ নিয়ে আত্মজীবনী লিখেছেন মার্গারেট আলভা। সেখানে বহু বিষয়ে ইন্দিরা-সঞ্জয়-সোনিয়াকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। ২০১৬ সালে একটি সর্বভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের ইন্টারভিউতেও দলের বিরুদ্ধে একাধিক তোপ দাগেন রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড ও গুজরাটের প্রাক্তন রাজ্যপাল।
[আরও পড়ুন: এবার লোকসভাতেও বিরাট ধাক্কা উদ্ধবের, দলের ১৯ সাংসদের মধ্যে ১২ জনই শিণ্ডে সেনার পথে]
১. মার্গারেট দাবি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও ও সোনিয়া গান্ধীর সম্পর্ক ভাল ছিল না। পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস ছিল না উভয়ের মধ্যে। বোফর্স মামলায় দিল্লি হাইকোর্টের একটি নির্দেশিকা নিয়ে দু’জনের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। এমনকী সোনিয়া প্রশ্ন তোলেন, নরসিমা কি তাঁকে জেলে দেখতে চান। মার্গারেটের আরও অভিযোগ, নরসিমা রাওয়ের ছেলের মরদেহ ঢুকতে দেওয়া হয়নি কংগ্রেসের সদর দপ্তরে। একজনের মৃত্যুর পর এমন ব্যবহার আশা করা যায় না।
২. সোনিয়া উপযুক্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে কংগ্রেসের নেতৃত্ব দেননি বলেও সরাসরি তোপ দাগেন মার্গারেট। তাঁর কথায়, “মনমোহন সিং আমাকে তাঁর মন্ত্রিসভায় চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কথা না বলেই আচমকা রাজ্যপালের পদ দেওয়া হয় (যাতে করে তিনি মন্ত্রী হতে না পারেন)। হঠাৎ সোনিয়া ফোন করে রাজ্যপাল হওয়ার কথা জানান তাঁকে।
৩. ইন্দিরা সরকারের আমলের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ করেন মার্গারেট আলভা তাঁর আত্মজীবনীতে। এমনকী এই বিষয়ে তাঁর কাছে প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেন।
৪. নিজের লেখা বইতে সঞ্জয় গান্ধীর ব্রেন চাইল্ড ‘নৃশংস’ জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করেন মার্গারেট। সমালোচনা করেন ইন্দিরা গান্ধীর। জানান, তুর্কমান গেটের পরিস্থিতির কথা ইন্দিরাকে জানালে তাঁকে শুনতে হয়, অনধিকার চর্চা করছেন তিনি।
৫. ২০১৬ সালের ওই সাক্ষাৎকারে আলভা বলন, ২০০৮ সালে কর্ণাটক বিধানসভা ভোটে তাঁর ছেলেকে টিকিট দেয়নি দল। একটাই কারণে, তাঁর ‘অপরাধ’ সে মার্গারেট আলভার ছেলে। সে বছর কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে দলের টিকিট বিক্রি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন। কংগ্রেসের হারের জন্য এই ঘটনাকে দায়ী করেন। এরপরেই তাঁকে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: ১১ ইঞ্চি লম্বা ছুরি হাতে ভারতে অনুপ্রবেশ পাক যুবকের, উদ্দেশ্য নূপুর শর্মাকে হত্যা! তারপর…]
মার্গারেট আলভার তোলা এইসব অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, সেই সোনিয়া গান্ধী তাঁকে উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। কেন? যেহেতু অন্য উপায় ছিল না, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেশি ও জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। বাধ্য হয়েই মার্গারেট আলফা নামের ঢোকটিকে গিলতে বাধ্য হন শীর্ষ কংগ্রেস নেত্রী।