সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: বিদ্রোহের আগুনে নাকাল বঙ্গ-বিজেপির (BJP) শীর্ষ নেতৃত্ব। এবার খাস বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) কেন্দ্র নন্দীগ্রামেই শুধু বিদ্রোহ নয়, শনিবার গণইস্তফা দিলেন আদি বিজেপির বহু নেতা। বিদ্রোহী নেতৃত্বের তালিকায় রয়েছেন ব্লক-সহসভাপতি থেকে মণ্ডল সম্পাদক ও এলাকার পরিচিত আদি বিজেপির নেতারা। ইস্তফা দেওয়া বিজেপি নেতাদের অভিযোগ,”যাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেরুয়া শিবিরে এসেছিলাম সেই অত্যাচারীরাই এখন আমাদের মাথার উপরে বসে বিজেপি চালাচ্ছে। যারা এক সময় তৃণমূলে থেকে শুভেন্দুর নাম নিয়ে নিরীহ মানুষের উপর জুলুম করেছে তারাই তো এখন গেরুয়া পার্টি চালাচ্ছে।”
এদিন নন্দীগ্রামের (Nandigram) গোকুলনগরে বিজেপি অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে ইস্তফার কথা জানিয়ে জয়দেব দাস ও বটকৃষ্ণ দাস জানান, বিজেপি ছাড়লেও তাঁরা এখনই অন্য কোনও দলে যোগ দিচ্ছেন না। বটকৃষ্ণর স্পষ্ট ঘোষণা, “আমি কোনও চোর নেতার নেতৃত্বাধীন বিজেপির কোনও পদে নেই। দলেও নেই। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে এরাই বেছে বেছে বিজেপি নেতা ও কর্মীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়েছে, লুঠতরাজ চালিয়েছে। আর এখন শুভেন্দুর হাত ধরে দলে ঢুকে ফের তারাই বিজেপির সামনের সারিতে জায়গা নিয়ে আদি বিজেপি নেতাদের কোণঠাসা করছে।” তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “বিদ্রোহীরা ঠিক কথা বলছেন না। দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙায় শোকজ করা হয়েছে বলে এসব বলছে।”
[আরও পড়ুন: খেলা শেষে জল খেতে যাওয়াই কাল! শিবপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু বালকের]
দলীয় সভায় যোগ না দেওয়ার পাশাপাশি দল-বহির্ভূত কাজের অভিযোগে গত ১২ অক্টোবর জয়দেব দাস ও বটকৃষ্ণ দাসকে শোকজ করেন জেলা বিজেপি সভাপতি। শুধু তাই নয়, ১৫ অক্টোবর নন্দীগ্রামের মহেশপুরে শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতিতে দলের যে বিজয়া সম্মিলনী হয় সেখানেও এই দুই আদি বিজেপি নেতাকে ডাকা হয়নি। অভিযোগ, শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ কিছু নেতার ‘দাদাগিরি’ এই নেতাদের না ডাকার মূল কারণ। অভিযুক্ত নেতাদের মধ্যে মেঘনাদ পাল, সাহেব দাসদের নাম উঠে এসেছে। দলের মধ্যে প্রভাব জাহির করতে নন্দীগ্রামে বিজেপির গোড়াপত্তনকারী নেতাদের ভূমিকা অবজ্ঞার চোখে দেখা হচ্ছে।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে জয়দেব ও বটকৃষ্ণ অভিযোগ করেন, “যারা এক সময় তৃণমূল কংগ্রেসে থেকে আমাদের মতো আদি বিজেপি কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে, অত্যাচার করেছে, জনগণের টাকা লুটেছে তারাই এখন নন্দীগ্রামে গেরুয়া ব্রিগেড চালাচ্ছে।” একদা অত্যাচারীরাই এখন দলের ভিতর ঢুকে বিজেপির সামনের সারিতে এসে জয়দেবদের কোণঠাসা করেছে বলে অভিযোগ করেন বিদ্রোহীরা। এদিন নন্দীগ্রাম দক্ষিণ মণ্ডলের বিজেপি সম্পাদক পূর্ণ পাত্র, শিবশংকর সাহু, অনুপ মাইতি, শাশ্বত মিদ্যা, স্থানীয় নেতা সুরজিৎ পাইক, উত্তম বেরা,গোবিন্দ পাত্র-সহ বহু নেতাকে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জয়দেব ও বটকৃষ্ণ । প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন বিজেপির সমস্ত দায়িত্ব ছাড়ার কথা।
[আরও পড়ুন: SSC কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে আইনি জয়, চাকরিতে যোগদানের সুপারিশপত্র পেলেন প্রিয়াঙ্কা সাউ]
শুভেন্দু এবং তাঁর অনুগামীদের প্রতি ঘৃণার কথা জানিয়ে জয়দেবের দাবি, “১২ অক্টোবর জেলা সভাপতির পাঠানো চিঠিটি সম্পূর্ণ ভুল পদক্ষেপ। সেই চিঠি আমার কাছে অপমানজনক। দলের কোনও পদে থেকে পদ কলঙ্কিত করতেও নারাজ।” একই যুক্তি দেখিয়েছেন বটকৃষ্ণ দাস। বিদ্রোহী জয়দেববাবুরা জানিয়েছেন, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেখব, তার মধ্যে শীর্ষ নেতৃত্ব কোনও সিদ্ধান্ত না নিলে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।