রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: ৫৪ বছর আগের দুঃস্বপ্নের মত এসেছিল খবরটা। বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের গুলিতে ঝাঁজরা হন ভারতীয় সৈনিক তেজ বাহাদুর ছেত্রী। তাঁর স্ত্রী মাইলি ছেত্রীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। বীর স্বামীকে হারিয়ে অঝোরে কেঁদেছিলেন সদ্য ২৫ বছরের যুবতী। স্বামীকে শেষ দেখাটাও দেখতে পাননি। অনেক সৈনিকের কফিনবন্দি দেহ ফিরে এলেও, ছেত্রীকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রেই। বছরের পর বছর পর বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছেন স্বামীর সমাধিস্থলের খোঁজে। অবেশেষে বিজয় দিবসে 'এক্স সার্ভিসম্যান অ্যাসোসিয়েশনে'র সাহায্যে স্বামীর সমাধিস্থল খুঁজে পেলেন স্ত্রী। সেখানে দাঁড়িয়ে কাঁপাস্বরে শান্ত গলায় বললেন, "আমি গর্বিত, আমার স্বামী দেশের জন্য লড়াই করে প্রাণ দিয়েছেন।"
বাংলাদেশে যুদ্ধে গিয়ে পাকিস্তানের সৈনিকদের গুলি শহিদ হন বহু ভারতীয় জওয়ান। তাঁদের মধ্যে বলবন্ত সিং, ভৈরব দত্ত, মোহন সিংহ, মূর্তি সিংহ, মহেশ্বর সিংহ, দুর্গা সিংহ ও তেজ বাহাদুর ছেত্রী। বাহাদুর ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রী মাইলি ছেত্রীকে স্বামীর আত্মবলিদানের খবর দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোথায় দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছে তা জানানো হয়নি। এতগুলি বছরে বিভিন্ন দপ্তরে চৌকাঠে ঘুরলেও জানতে পারেননি কোথায় সমাধি রয়েছে। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ সৈনিক বোর্ড মারফত কিছুদিন আগে তাঁর কাছে খবর যায় বাংলাদেশ লাগোয়া নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে আরও ছয়-জন বীর শহিদের সঙ্গে চিরতরে শুয়ে রয়েছেন তাঁর স্বামী। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অশক্ত শরীরে কৃষ্ণগঞ্জে ছুটে আসেন ৭৮ বছরের মাইলি।
দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকা শহিদ বেদীগুলি অবশেষে খুঁজে বার করেছেন প্রাক্তন সেনা জওয়ানরা। মাইলি বলেন, "স্বামীর সমাধি ক্ষেত্রটা একটি বার চোখে দেখার জন্য অনেক জায়গায় ঘুরেছি। কোনওভাবেই জানতে পারিনি আমার স্বামীর সমাধি কোথায়। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ সৈনিক বোর্ড মারফত কিছুদিন আগে খবর পাই নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে আমার স্বামী তেজ বাহাদুর ছেত্রীর সমাধি রয়েছে। অবশেষে দীর্ঘ ৫৪ বছরের প্রতীক্ষার পর স্বামীর সমাধি খুঁজে পেলাম।"