অভিরূপ দাস: একদিকে ভরাট যৌবন। অন্যদিকে, মৃত্যুকে হারানোর দগদগে ক্ষত। মারণ রোগের অর্তকিত হানায় বাদ দিতে হয়েছে স্তনের সিংহভাগ। নারীত্বের প্রতীক হারালেও আর পাঁচজনের মতো সাজগোজের বাসনা তো থেকেই যায়। বক্ষ ক্যানসারে (Breast Cancer) যাঁদের স্তন কেটে বাদ দিতে হয় তাঁদের জন্যেই প্যাডেড অন্তর্বাস বা মাসটেকটমি ব্রেসিয়ার (Mastectomy Bra)। যে অস্ত্রোপচারে স্তনের ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত টিস্যু বাদ দিতে হয় তার নাম মাসটেকটমি। আর তাই স্তনের ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পর মহিলারা যে অন্তর্বাস পরেন তার নাম মাসটেকটমি ব্রেসিয়ার।হোসিয়ারি শিল্পে চাহিদা বাড়ছে এমন অন্তর্বাসের। কারণ, স্তনের ক্যানসারও যে বাড়ছে লাফিয়ে-লাফিয়ে।
১৯৮৫ সালে যত মহিলা স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত হতেন তার চেয়ে সংখ্যাটা বেড়ে গিয়েছে ৫০ শতাংশ। প্রতি চার মিনিটে দেশের একজন মহিলা বক্ষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০১৮ সালেই দেশের ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৪৬৮ জন মহিলা স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ৮৭ হাজার ৯০ জনের।
জাতীয় গড় ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, মেট্রো শহরের মহিলাদেরই স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা সর্বাধিক। ন্যাশনাল ক্যানসার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের সমীক্ষায় প্রমাণিত কলকাতায় স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে ৫২ শতাংশেরই বয়স ৪০ থেকে ৫০-এর মধ্যে। স্তনের ক্যানসারের তৃতীয় অথবা চতুর্থ পর্যায়ে স্তন বাদ দিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আচমকা শরীরের অঙ্গ হারিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন অনেকেই।
[আরও পড়ুন : এবার পুজোয় খাদির শাড়িতে হয়ে উঠুন আরও আকর্ষণীয়, রইল টিপস]
হোসিয়ারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থার কর্ণধার অপূর্ব দে জানিয়েছেন, ক্যানসারের কারণে যাঁদের স্তন বাদ দিতে হয়েছে, তাঁদের জন্যেই প্যাডেড অন্তর্বাস। ফোম দিয়ে একদিকের এই ফাঁকা অংশ ভরাট করে দেওয়া হয়। যা পরে থাকলে বোঝার উপায় নেই যে তাঁর স্তন বাদ দিতে হয়েছে। সাধারণ ব্রেসিয়ারের থেকে এই প্যাডেড বা মাসটেকটমি ব্রেসিয়ারের দাম বেশি। সাধারণ ব্রা যেখানে একডজন ৮০০ টাকায় দোকানে পাঠানো হয়, সেখানে ফোমে ঢাকা ১ ডজন প্যাডেড অন্তর্বাসের দাম দেড় হাজার টাকা। রয়েছে সুতির প্যাডও। গোলাকার চাকতির মতো ফোলা এই প্যাড স্তনের কাটা জায়গায় অন্তর্বাসের ভিতর ঢুকিয়ে রাখেন অনেকেই। মান অনুযায়ী এই প্যাড ৩৫০ থেকে ১ হাজার টাকারও রয়েছে। কারও ডান দিকের স্তন বাদ যায়, কারও বাঁ দিকের। দু’ধরনের প্যাডেড অন্তর্বাসই তৈরি করে হোসিয়ারি কোম্পানিগুলি।
[আরও পড়ুন : পুজোর আগে পার্লারে লাইন দিতে নারাজ? অনভিজ্ঞ হাতে বাড়িতে চুল কেটে ফেলুন এভাবেই]
স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বয়সের সীমা থাকছে না। মাত্র ৩০—এও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন এই ক্যানসারে। অল্প বয়সে অনেকেই স্তন কেটে বাদ দিতে চান না। ব্রেস্ট রিকনস্ট্রাকশন পদ্ধতিতে তাঁরা কৃত্রিম স্তন বানিয়ে নেন। পিজি হাসপাতালের ব্রেস্ট ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, চেষ্টা করা হয় স্তনের আকার নিঁখুত রাখতে। পেটের থেকে চামড়া কেটে স্তনকে আকার দিলে তা কমবেশি নিঁখুত হয়। কিন্তু পিঠের থেকে পেশির মাংস কেটে লাগালে তা ছোটবড় হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ ভারতীয়দের পিঠের পেশি খুব দুর্বল। হোসিয়ারি শিল্পের সঙ্গে যুক্তরা বলেছেন, অন্তর্বাসের দুটো কাপের আকার ভিন্ন ভিন্ন হলে মুশকিল। এ ধরনের স্তনের জন্য অন্তর্বাস তৈরি করা হয় না। কারণ কার কোন সাইজ লাগবে সেটা সহজে বোঝা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে যিনি এমন ব্রেসিয়ার বানাতে চান তাঁকে দর্জির কাছে গিয়ে মাপ দিয়ে নির্দিষ্ট বানিয়ে নিতে হবে।