নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি : দেশ কি এবার মহিলা রাষ্ট্রপতি (President) পেতে চলেছে? এই জল্পনায় তুঙ্গে উঠেছে রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে। তিন মাসের মধ্যেই দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন রয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের (Ramnath Kovind) কার্যকালের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে ২৫ জুলাই। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘুঁটি সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে শাসক, বিরোধী দুই শিবির। এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সমস্ত বিরোধীদের একত্রিত ভোট শতাংশ শাসক শিবিরের থেকে বেশি রয়েছে। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে বিরোধীরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের মধ্য আলোচনা করে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। পিছিয়ে নেই বিজেপিও (BJP)। বিরোধীদের শিবিরে থাকা কয়েকটি দলকে পাশে পাওয়ার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তারাও।
বিজেপি নিজেদের পছন্দসই রাষ্ট্রপতি পেতে একদিকে যেমন ভোট জোগাড়ের চেষ্টা চালাচ্ছে, আবার অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার হিসেব-নিকেশও শুরু করে দিয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আদিবাসী মহিলা ‘মুখ’কে সামনে রেখেই এগোতে চাইছে বিজেপি। রাইসিনা হিলসের দৌড়ে ওড়িশার বিজেপি নেত্রী দ্রৌপদী মুর্মুর (Draupadi Murmu) নাম সবার আগে রয়েছে। তাঁকে সামনে রেখে বিজেপি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গেলে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেটুকু ভোটের প্রয়োজন রয়েছে, তা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের দল বিজেডিই পূরণ করে দেবে। সদ্য গত সপ্তাহেই তিনদিনের সফরে দিল্লিতে এসেছিলেন নবীন। সেই সময়ে বিজেপির সঙ্গে এবিষয়ে তাঁর কথাবার্তা হয়ে গিয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: এখনই কোনও রাজনৈতিক দল নয়, নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানিয়ে দিলেন প্রশান্ত কিশোর]
নিজের রাজ্যরে আদিবাসী নেত্রী মুর্মুর ক্ষেত্রে তো বটেই, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেডির ভোট বিজেপির পক্ষে যাবে, এমনটাই নবীন আশ্বাস দিয়েছেন বলেই সূত্রের খবর। মুর্মুকে প্রার্থী করা হলে বিরোধী শিবির থেকে আরও ভোট বিজেপি দিকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল হিসাবে গত বছর পর্যন্ত কাজ করেছেন মুর্মু। সেখানকার শাসকদল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা নেতা শিবু সোরেন ও সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী শিবু-পুত্র হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে মুর্মুর সম্পর্ক রীতিমতো ভাল। সেই সুবাদে তাদের ভোট বিজেপির ঝুলিতে আসতে পারে এমন সম্ভাবনাই প্রবল। মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা হলে একদিকে যেমন বিজেপির জয়ের পথ প্রশস্ত হবে আবার তেমনই রাজনৈতিক সুবিধা মিলবে তাদের। এতে ওড়িশায় বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি হবে আবার আদিবাসী মুখকে রাষ্ট্রপতি করা হলে চলতি বছরের গুজরাত বিধানসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে আগামী বছরের মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনেও সুবিধা পাবে বিজেপি।
[আরও পড়ুন: বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ, ইদগাহর জন্য দেড় কোটি টাকার জমি দান করলেন দুই হিন্দু বোন]
গতবারের মধ্যপ্রদেশে বিজেপি যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারেনি। কারণ, সেখানকার আদিবাসী অধ্যুষিত ২৭টি আসন কংগ্রেসের ঘরে গিয়েছিল। সেই বিষয়টিও নজরে রয়েছে বিজেপির। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আরেক মহিলা মুখ হিসেবে উত্তরপ্রদেশের বর্তমান রাজ্যপাল ও গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দী বেন প্যাটেলের (Anandiben Patel) নামও জল্পনায় রয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গেই উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও একই সময়ে রয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মুর্মুর বদলে বিজেপি অন্য কোনও চমক দিলে তাঁকে যে উপ-রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করা হতে পারে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের আরেক দল ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ভোটও বিজেপির ঝুলিতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্রের খবর, দলের নেতা ও অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডির সঙ্গে এ বিষয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের পাকা কথা হয়ে গিয়েছে ।