shono
Advertisement

Breaking News

RG Kar case

আর জি কর ইস্যুতে সংগঠিত উসকানি মিডিয়ার একাংশের!

দুর্ভাগ‌্যজনকভাবে এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কিছু বিরোধী শক্তি বাংলায় অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে। আর, আরও বিস্ময়কর, বাংলা মিডিয়ার একটা বড় অংশ পরিকল্পিত উসকানি দিয়ে এই অশান্তিকে প্রোমোট করছে।
Published By: Subhajit MandalPosted: 11:21 AM Sep 06, 2024Updated: 11:21 AM Sep 06, 2024

অপরাজিতা সেন: আর জি করের ঘটনা ভয়ংকর। দোষীদের শাস্তি হোক। যারা আড়াল করার চেষ্টা করেছে, তাদেরও শাস্তি হোক। সিবিআই দ্রুত শেষ করুক তদন্ত। সুপ্রিম কোর্ট কড়া মানসিকতায় তদন্তে নজর রাখুক। এই বিষয়ে আমরা সবাই একমত। নাগরিকদের মধ্যে কিছু বিরক্তি, প্রশ্ন, ক্ষোভ রয়েছে। তাঁরাও অনেকেই সরব হয়েছেন। এবং এটা খুবই স্বাভাবিক।

Advertisement

কিন্তু দুর্ভাগ‌্যজনকভাবে এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কিছু বিরোধী শক্তি বাংলায় অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে। আর, আরও বিস্ময়কর, বাংলা মিডিয়ার একটা বড় অংশ পরিকল্পিত উসকানি দিয়ে এই অশান্তিকে প্রোমোট করছে। আর জি করের ঘটনার খবর হবে, তদন্তে অসঙ্গতি থাকলে সেটাও অবশ‌্যই খবর হবে, নাগরিক আন্দোলন হলে তার কভারেজ হবে। কিন্তু এখন খানিকটা টিআরপির লড়াই এবং অন‌্য কিছু কারণে কিছু মিডিয়ার ইভেন্ট ম‌্যানেজারের মতো আচরণ চোখে পড়ছে। ভুল তথ‌্য, একতরফা তথ‌্য, বিকৃত তথ‌্য, বিষ মেশানো তথ‌্য এমনভাবে দর্শককে ‘খাইয়ে’ দেওয়া হচ্ছে যে আজকের দিনে তার প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই প্রবলতরভাবে নেতিবাচক। যে অরাজকতায় উসকানি দেওয়া হচ্ছে, তা সফল হলে বাংলার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি। শুধু ভাবমূর্তিই নষ্ট নয়, রীতিমতো আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো বিপর্যস্ত হবে, রাজনৈতিক কাঠামো অস্থির হয়ে উঠবে।

[আরও পড়ুন: সাতসকালে সন্দীপের দুয়ারে ইডি, ৩ ঘণ্টার অপেক্ষার ভিতরে আধিকারিকরা]

কিছু মিডিয়া আর জি করের ঘটনাটিকে প্ররোচনামূলক কভারেজে রূপান্তরিত করছে। তাদের বাচনভঙ্গি, শব্দচয়ন, শরীরী ভাষা, উচ্চগ্রামে স্বরক্ষেপণ– সবটাই স্পষ্ট অভিমুখের। কোনও কোনও চ‌্যানেলের সান্ধ‌্যকালীন প‌্যানেল বক্তারা কেউ সরাসরি দলের, আবার তথাকথিত নিরপেক্ষ পেশাদাররাও বাছাই বিরোধী দলের। পূর্ব নির্ধারিত একটি ধারণা চাপিয়ে দেওয়াটাই প্রচারের মূল উদ্দেশ‌্য। আরেকটি দিক ভাবুন। আর জি কর ভয়ংকর। কিন্তু মানুষকে তুলনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বাম জমানার পরপর এই ঘটনা, কিংবা এখন কার্যত রোজ সারা দেশে এই কুৎসিত ঘটনা ঘটছে। কভারেজে সব ঘটনা থাকুক। মানুষ নিশ্চয়ই আর জি কর দেখবেন, কিন্তু তাঁদের তুলনামূলক মূল‌্যায়নের সুযোগ এই মিডিয়া দিচ্ছে না। অথচ সেই সব রাজ্যে যে শাসক দল, তাদের নেতাদের দিয়ে এখানে আর জি কর ইস্যুতে আগুন লাগানোর চেষ্টাকে প্রোমোট করা হচ্ছে।

আজ তথ‌্যপ্রযুক্তির দিনকাল। গোটা দুনিয়া হাতের মুঠোয়। আর জি কর নিয়ে অন‌্য রাজ‌্য, এমনকী, অন‌্য দেশেও কলকাতা নিয়ে বিক্ষোভ করছেন প্রবাসী বাঙালিরা, প্রোমোট করে কভারেজ দিচ্ছে মিডিয়ার একাংশ। ভাবুন, যে শহরে, যে রাজ্যে, বা যে দেশে এই বাঙালিরা এখন থাকেন, সেখানকার ভয়ংকর ঘটনার প্রতিবাদে মোমবাতি জ্বালানোর ক্ষমতা নেই। আর জি করের পরেও উত্তরাখণ্ডের নার্স ধর্ষণ, মহারাষ্ট্রে বদলাপুর, অসমে ছাত্রী ধর্ষণ, উত্তরপ্রদেশে দুই কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত ঝুলন্ত দেহ একই গাছে, প্রতিবাদীরা তখন ঘুমান। মোমবাতি খুঁজে পান না। মিডিয়াও দেখতে পায় না। অথচ একই ধরনের ঘটনা কলকাতায় বিচ্ছিন্নভাবে ঘটলে তাঁরা সেটা এমনভাবে তুলে ধরছেন, যাতে বাংলা এবং কলকাতা কালিমালিপ্ত হচ্ছে। আরও ভাবুন, মধ‌্যবিত্ত ঘরের তরুণী ধর্ষিতা ও খুন হলে ন‌্যায‌্যতই শহুরে বাঙালি রাস্তায় নামে। কিন্তু বাংলারই ছেলে সাবির মল্লিককে যখন হরিয়ানায় পিটিয়ে মারা হয়, তখন গরিব শ্রমিক সাবিরের জন‌্য আমাদের সমাজ মোমবাতি নিয়ে বেরোয় না। এমনকী, তাঁর অসহায় পরিবার যখন মুখ‌্যমন্ত্রীর কাছে যান এবং তিনি চাকরি দেন, তার কভারেজেও মিডিয়ার এই অংশের তীব্র অনীহা।

এখন টার্গেট, অবিশ্বাস বাড়াতে হবে। যে সরকারকে ভোটে হারানো যাচ্ছে না, বিরোধীদের প্রোমোট করে তাকে কালিমালিপ্ত করিয়ে লোক খেপাতে হবে। আর জি করে বাজে ঘটনা। প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপকে ভুল বোঝার অবকাশও আছে। সেগুলো নিয়ে নিশ্চয়ই সরকারকে চাপ দেওয়ার কভারেজ হবে। কিন্তু তার মানে এই নয়, ভারসাম‌্যহীনভাবে একতরফা বিষ ছড়িয়ে আমজনতাকে ভুল ধারণার বশবর্তী করে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক ইভেন্টের দিকে ঠেলে দিতে হবে। পোর্টাল এবং ইউটিউবের দৌলতে কিছু ভালো হাত যেমন কাজ করছে, তেমনই কিছু অপরিণত এবং রাজনৈতিক অ‌্যাসাইনমেন্ট পাওয়া লোকজনের হাতে প্রচারের সুযোগ চলে যাচ্ছে। সেখানে যা ইচ্ছা প্রচার চলে। ব‌্যক্তি আক্রমণ, ভুল খবর, চরিত্রহনন– সব অ‌্যালাউড। কিন্তু তথাকথিত মূলস্রোত মিডিয়ার এহেন ভয়ংকর আত্মঘাতী কর্মপদ্ধতি সম্ভবত এই প্রথম। এই তদন্তের সঙ্গে পুজোকে মিলিয়ে সরকারি অনুদান প্রত‌্যাখ‌্যানকে বীরত্বের মর্যাদা দিয়ে প্রচার দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সেই চ‌্যানেলগুলিই ‘মেরুদণ্ড’র পরিচয় দিয়ে ঘোষণা করতে পারছে না যে আমরা এই রাজ‌্য সরকারের বিজ্ঞাপন নেব না। এক বিচিত্র জগাখিচুড়ি, অন্ধ তৃণমূল বিরোধিতার প্রতিযোগিতা চলছে। সরকারি তরফে যদি কোথাও কোনও ভুল বা বিলম্বও থাকে, সরকারি দলের মধ্য থেকেই তার ধারাবাহিক সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশে যে ভয়ংকর বিশৃঙ্খলা, হিংসা এবং অরাজকতা আমরা দেখেছি, আমাদের মানচিত্রে তার কার্বন কপিকে নেমতন্ন করে এনে স্বাগত জানানোর ফুল বেলপাতা দেওয়া হচ্ছে। ‘দাবি এক, দফা এক’ বাংলাদেশীয় স্লোগানটি এরাজ্যে ছন্দ নিয়ে এল তো বটে, কিন্তু সেই দাবি কখন ন‌্যায়বিচার থেকে চেয়ার দখলে পরিণত হয়ে গিয়েছে, তার সন্তর্পণ অনুপ্রবেশে মিডিয়ার একাংশ ভগীরথ হয়ে তালি বাজাচ্ছে। আগুন নিয়ে এই খেলা শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে, আগামিদিন তা বোঝা যাবে। কিন্তু এই প্রবণতা বাংলার পক্ষে বিপজ্জনক। পুলিশের কিছু ভুল চিরকালই ছিল। সর্বযুগে। সেই পুলিশের বিশ্বাসযোগ‌্যতা নষ্ট করার প্রচার হচ্ছে। সরকারি পরিকাঠামোর প্রতি মানুষকে অবিশ্বাসে বাধ‌্য করা হচ্ছে। কন‌্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ‌্যসাথী, রূপশ্রী থেকে শুরু করে এই স্কিমগুলি সাধারণ গরিব ঘরে কতটা কাজে লাগে তা মোমবাতিবাবুদের পক্ষে বোঝা অসম্ভব। অথচ এই তদন্তের সঙ্গে এগুলির বিরুদ্ধে অনাস্থা তৈরির ধারাবাহিক চেষ্টা চলছে। যাকে মদত দিচ্ছে একাংশের মিডিয়া। এই অংশটা রাতজাগার আন্দোলনকে প্রোমোট করে। কিন্তু সেখানে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত লাঞ্ছিত হলে বা তৃণমূলের পতাকা পোড়ানো হলে সেটা দেখায় না, সান্ধ‌্যকালীন বিশেষজ্ঞদের টেবিলও বসে না। কিংবা দিনের পর দিন রাস্তায় আটকে থাকা বাসে বন্দি বয়স্ক মহিলাদের ক্ষোভও দেখানো হয় না।

[আরও পড়ুন: মেট্রোর সুড়ঙ্গের শ্যাফটের নিচে ‘লিকেজ’! পুজোর মুখে নতুন করে বিপত্তি বউবাজারে]

আর জি করে দোষীরা ধরা পড়ুক, ফাঁসি হোক। এখনও পর্যন্ত একজন গ্রেপ্তার, সেটাও কলকাতা পুলিশের হাতে। যদি আর কাউকে আড়াল করার কোনও চেষ্টা হয়ে থাকে, সবাই গ্রেপ্তার হোক। এ নিয়ে খবর এবং কভারেজ চলতে থাকুক। কিন্তু সেই কভারেজ এবং তাকে সামনে রেখে ইভেন্ট প্রমোশন যেন বাংলার পক্ষে আত্মঘাতী না হয়ে যায়, দয়া করে মনে রাখুক মিডিয়ার সেই অংশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • কিছু মিডিয়া আর জি করের ঘটনাটিকে প্ররোচনামূলক কভারেজে রূপান্তরিত করছে।
  • তাদের বাচনভঙ্গি, শব্দচয়ন, শরীরী ভাষা, উচ্চগ্রামে স্বরক্ষেপণ– সবটাই স্পষ্ট অভিমুখের।
  • কোনও কোনও চ‌্যানেলের সান্ধ‌্যকালীন প‌্যানেল বক্তারা কেউ সরাসরি দলের, আবার তথাকথিত নিরপেক্ষ পেশাদাররাও বাছাই বিরোধী দলের।
Advertisement