দমনমূলক পদক্ষেপ নয়, সংবাদমাধ্যমের গতিপথ হোক উন্মুক্ত। ‘এম-২০ মিডিয়া ফ্রিডম সামিট’ সেক্ষেত্রে হয়তো আশার আলোকবর্তিকা।
নয়াদিল্লিতে যখন জি-২০-র সম্মেলনে বিশ্বের ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণের আলোচনা চলছে, তখন তারই সমান্তরাল ‘এম-২০ মিডিয়া ফ্রিডম সামিট’ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সদস্য ২০টি দেশের সাংবাদিক ও সম্পাদকরা তাঁদের দেশে সংবাদমাধ্যম যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, তার মোকাবিলার জন্য একটা তাৎপর্যপূর্ণ পথ অন্বেষণে একমত হয়েছেন।
বস্তুত, যে-সময় বিশ্বের প্রতিটা দেশের সংবাদমাধ্যম ‘চাপা সেন্সর’-এর মধ্যে রয়েছে, তখন সংবাদপত্রর স্বাধীনতার গুরুত্ব ওইসব রাষ্ট্রনেতাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘মিডিয়া ফ্রিডম’ শীর্ষক সম্মেলন এবং রাষ্ট্রনেতাদের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা মনে করিয়ে দেওয়াটাই আসলে গণতান্ত্রিক ভাবনার কাছে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সংবাদমাধ্যম যখন এই আলোচনায় বসে, তখন পরিস্থিতি যে কতটা উদ্বেগের সীমা ছাড়িয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। বৈঠকে যোগদানকারীরা সেই সময় অপ্রিয় কথা তাঁদের আলোচনায় তুলে এনেছেন, তা এই সময় বিশ্বের সবক’টা দেশেই প্রযোজ্য- সে জুন্টা শাসিত মায়ানমার হোক, বা তালিবান শাসিত আফগানিস্তান কিংবা প্রাণবন্ত গণতন্ত্রর ধ্বজা ওড়ানো আমেরিকাই হোক না কেন।
[আরও পড়ুন: ‘এক দেশ এক ভোট’, ২৪-এ আদৌ কি তা সম্ভব?]
আলোচকরা বলছেন, রাষ্ট্র যে সবক্ষেত্রে সরাসরি সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে, এমনটা নয়। তবে তার থেকেও বিপজ্জনক হল, সরকারগুলো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি উদাসীন। তারা বলছে, এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ বহুমুখী। সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দমনমূলক পদক্ষেপ থেকে শুরু করে আইনের অপব্যবহার, সাংবাদিককে অপরাধী হিসাবে অভিযুক্ত করা, স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে অযাচিত নজরদারি ছাড়াও সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায়িক মডেলের ক্ষতি পর্যন্ত রয়েছে। এখানেই কেউ কেউ বলছে, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের জন্য একটা দীর্ঘস্থায়ী ব্যবসায়িক মডেলের প্রয়োজন। তাদের মতে, স্বাধীন সংবাদমাধ্যম বিশ্বজুড়ে চ্যালেঞ্জ এবং আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে। যা সংস্থাগুলোর ব্যয়বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। ফলে তাদের পক্ষে জনগণের তথ্যর অধিকার প্রদান করা কঠিন হচ্ছে। শুধু কি তাই? সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ‘ভুল’ তথ্যর অধিকতম প্রচার এবং মতামতের হেরফের সাংবাদিকতার সেই সারমর্মর প্রভূত ক্ষতিসাধন করছে, যা নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রদান করে।
স্বচ্ছ, নির্ভুল সাংবাদিকতা গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকের জীবনে একটা অপরিহার্য উপাদান- এই আস্থার উপর জোর দিয়েছে এম-২০। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু সাংবাদিকদের জন্য একটা বিষয় নয়, গণতন্ত্ররও একটা মৌলিক স্তম্ভ। এমন একটা বিশ্ব, যেখানে তথ্য-ই শক্তি, সেখানে ‘এম২০ মিডিয়া ফ্রিডম সামিট’ আশার আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করছে। এটা শুধুমাত্র গণতন্ত্রর ভিত্তিপ্রস্তর নয়, বরং সত্য, দায়বদ্ধতা ও অগ্রগতির জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে মুক্ত সংবাদমাধ্যমকে রক্ষা করার অপরিহার্যতার উপর জোর দেয়।