বাবুল হক, মালদহ: ক্লাসরুমে বন্দুক হাতে নিয়ে অনর্গল ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে এক বন্দুকবাজ। ভয়ে সিটিয়ে গিয়েছে ৭০টি বাচ্চা। বাইরে পুলিশের ঘেরাটোপ। কিন্তু কেউই সাহস করে এগোতে পারছেন না বন্দুকবাজের দিকে। পাছে পুলিশকে ‘সবক’ শেখাতে ভুলভাল কিছু করে ফেলে। আচমকায় নীল শার্ট পরা এক যুবক ঝাঁপিয়ে পড়ল বন্দুকবাজের উপর। তারপর কয়েক সেকেন্ডের হাতাহাতি। তারপরই কাবু বন্দুকবাজ।
মনে হতে পারে এটা কোনও বিখ্যাত হিন্দি ছবির দৃশ্য। কিন্তু ভরদুপুরে এই ঘটনাই ঘটেছে মালদহের একটি স্কুলে। বুধবার দুপুরে হঠাৎ মালদহের ডিএসপি আজহারউদ্দিন খান খবর পান, একটি স্কুলে এক বন্দুকবাজ ঢুকে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিশাল বাহিনী নিয়ে স্কুলে পৌছায় পুলিশ। যান পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদবও। পরিকল্পনা করা হয়, ঘিরে ধরে বন্দুকবাজকে নিরস্ত করা হবে। কিন্তু সমস্যা হল পুলিশের উর্দি দেখলেই রেগে যাচ্ছিল ওই হামলাকারী।
[আরও পড়ুন: ন’মাসে যেটা হল না ন’দিনে কী করে হল? প্রেসিডেন্সির সুপারকে তীব্র ভর্ৎসনা আদালতের]
তাই পরিকল্পনা বদল করতে হয়। উর্দি ছেড়ে সাধারণ পোশাকেই বন্দুকবাজকে পাকড়াও করার পরিকল্পনা করেন আজহারউদ্দিন। আর তাতেই সাফল্য। বন্দুকবাজ আটক হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলছিলেন, ‘‘পুলিশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ভাল কাজ করেছে।’’ এই বুদ্ধিমত্তা এবং সহসিকতার অনেকটাই প্রাপ্য আজহারউদ্দিনের। বন্দুকবাজকে আটকাতে গিয়ে সামান্য চোট পেয়েছেন মালদহের ডিএসপি। কিন্তু তিনি ৭০টি বাচ্চাকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে পেরে খুশি। বলছিলেন, “গিয়ে দেখি পড়ুয়াদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। আমি বাবা হইনি। কিন্তু মনে হচ্ছিল, ওরা আমার সন্তানের মতো। দেখেশুনে মাথা কাজ করছিল না। মাথা ঠান্ডা করে পরিকল্পনা করি।”
[আরও পড়ুন: বদলার ম্যাচের আগে শক্তি বাড়ল বিরাটদের, রাসেলকে ছাড়াই আজ আরসিবির বিরুদ্ধে কেকেআর]
আজহারের (Azharuddin Khan) বাড়ি বাড়ি কলকাতার পার্ক সার্কাসে। সিটি কলেজের ছাত্র ছিলেন। চাকরি সূত্রে বছর দুই আগে মালদহে যান। বলছিলেন, “এর আগে কখনও এভাবে বন্দুকের সামনে ঝাঁপাইনি। কিন্তু এবার ৭০টা বাচ্চা সামনে, ওদের জীবন আমার হাতে। তাই দেখে আমি আর দ্বিতীয়বার ভাবিনি। ওদের বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ি।”