সুকুমার সরকার, ঢাকা: আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র লিগকে আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এবার বাংলাদেশের এই নয়া সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কোনও নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মীরা সরকারি চাকরি পাবেন না। এর ফলে ছাত্র লিগের সদস্যরাও এবার থেকে আর সরকারি চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ পাবেন না।
গত ৫ আগস্ট গণবিক্ষোভে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তাঁর দেশ ছাড়ার পর থেকে আওয়ামি লিগের নেত-কর্মীরা হামলা ও অত্যাচারের শিকার হন। শুধুমাত্র হাসিনাপন্থী হওয়ার কারণে বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। ফলে বাংলাদেশে কার্যত কোণঠাসা হয়ে গিয়েছে হাসিনার দল। এর মাঝেই বুধবার সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ করে দেয় ইউনুস সরকার। যা নিয়ে রাজধানী ঢাকা-সহ বিভিন্ন জায়গায় উৎসব মিছিল বের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। নিষেধাজ্ঞার কড়া প্রতিবাদ জানান ছাত্র লিগের সদস্যরাও।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ফেসবুকে জানিয়ে দেন, নিষিদ্ধ কোনও সংগঠনের সদস্য বা কর্মী এবার থেকে আর সরকারি চাকরি পাবেন না। এছাড়া যে সব নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, সেখান থেকেও নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মীদের বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে শূন্যপদগুলোতে মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। এর ফলে বেশি সংখ্যক প্রার্থী চাকরির সুযোগ পাবেন। ঘুষ দিয়ে চাকরি বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্র লিগের নাম না করলেও এই ঘোষণায় খাঁড়া নেমে এসেছে তাদের ঘাড়ে। সরকারের নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী নিষিদ্ধ হওয়ায় এবার থেকে আর ছাত্র লিগের সদস্যরাও সরকারি চাকরির সুযোগ পাবেন না।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কারের দাবি ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হয় বাংলাদেশ। গত জুলাই মাসে এই আন্দোলন হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। ঝরে বহু রক্ত। বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলাকালে ছাত্র লিগের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ তুলেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা। তাই আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে ইউনুস সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। সেই মতোই ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। এনিয়ে বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, গত কয়েক বছর ধরে খুন, অত্যাচার, ক্যাম্পাসগুলোতে দমনপীড়ন, ধর্ষণ, যৌন হেনস্তা এবং আরও নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন। এছাড়াও ১৫ জুলাইয়ের পর থেকে প্রতিবাদী পড়ুয়াদের উপর লাগাতার হামলা চালিয়েছে সংগঠনের সদস্যরা। তাই সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করা হল বাংলাদেশ ছাত্র লিগকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রাক্তন শাসকদল আওয়ামি লিগ ও তার শাখা সংগঠনগুলোর উপর চাপ বাড়াতেই এই পদক্ষেপ করেছে ইউনুস সরকার। আর নেপথ্যে কলকাঠি নাড়তে পারে জামাত, বিএনপির মতো রাজনৈতিক দল। এমনটিতেই হাসিনার দেশত্যাগের পর আওয়ামি লিগের শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি মামলা হচ্ছে। তার মধ্যে নিষিদ্ধ হয়ে গেল ছাত্র লিগ। আর এভাবে চাপ বাড়িয়ে হাসিনার দলকে রাজনীতির ময়াদনে আরও দুর্বল করে দিতেই এই কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।