গৌতম ব্রহ্ম: সন্তানের হাতে ‘বিপন্ন’ ডাক্তার বাবা।
‘খুন’ হতে হতে বহুবার বেঁচেছেন। মা-কেও গলা টিপে মারার চেষ্টা করেছেন ছেলে।
অভিমান হয়েছে। ভয় হয়েছে। তবু থানায় যাননি বাবা। এক রাতের জন্যও ছেড়ে থাকেননি ছেলেকে। বরং নিয়ে এসেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। দেশের সীমানা পেরিয়ে।
আসিকুর রহমান। বাড়ি ঢাকায়। বয়স ৩৪ বছর। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, এই ছেলের মধ্যেই লুকিয়ে আছে একটি ‘খুনি’ মন। স্মার্ট, ঝকঝকে চেহারা। চালচলনেও অস্বাভাবিকতা নেই। শুধু একটা প্রতিহিংসার ঢেউ খেলে যাচ্ছে চোখের তারায়।
বাংলাদেশের অনেক বড় বড় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা করেছেন ওই যুবককে। কিন্তু কেউই আলোর সন্ধান দিতে পারেননি। অবশেষে কলকাতার পিজি হাসপাতালের ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’ (আইওপি)-তে এসে শাপমুক্ত হলেন ঢাকার যুবক আসিকুর রহমান।
[ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, জরিমানা শহরের দুই নামী হাসপাতালকে]
সাড়ে তিন মাস আগে এক বন্ধুর উপদেশ মেনে ভারতে আসেন। পিজি হাসপাতালের আইওপি-তে অধিকর্তা ডা. প্রদীপ সাহাকে দেখান। কিছুক্ষণ কথা বলেই আইওপির ডাক্তারবাবুরা রোগের গভীরতা ধরে ফেলেছিলেন। অতঃপর শুরু হয় সাইকোলজিক্যাল টেস্ট, কাউন্সেলিং। উঠে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। জানা যায়, আসিকুরের বাবা ডা. এম রহমান বাংলাদেশের নামী চিকিৎসক। জেনারেল ফিজিশিয়ান। দুবাইয়ে কাজ করার সুবাদে প্রচুর রোজগার করেছেন। কিন্তু ওই যে প্রবাদ আছে না। খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে, কাল হল তাঁর এঁড়ে গরু কিনে! দেশে ফিরে এসে ডাক্তারির পাশাপাশি মাছের ব্যবসা শুরু করেন ডা. রহমান। কিন্তু জলে যায় বিনিয়োগ। প্রায় ৪ কোটি টাকার লোকসান হয়। এই নিয়ে রহমান পরিবারে কম অশান্তি হয়নি। স্ত্রী কম কথা শোনাননি ডাক্তার স্বামীকে। কিন্তু কে জানত, মায়ের তোলা সেই অভিযোগ ছেলের মনে এমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে? ছেলেকে ‘খুনি’ বানিয়ে ফেলবে?
সংসারের যাবতীয় খারাপ অবস্থার জন্য বাবাকে দায়ী করে একদিন হঠাৎই যুবক ছেলে বাবার গলা টিপে ধরে। শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা করে। ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে যান ডা. রহমান। একে দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে ছেলের এমন অদ্ভুত অভ্যর্থনা। দুর্ঘটনা মনে করে বিষয়টি হালকাভাবে নিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই আসিকুরের মধ্যে জেগে উঠত সেই খুনি সত্তা। ৪ কোটির জন্য বাবাকে শাস্তি দিতে হবে। পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে। যত দিন গেল সেই চেষ্টা বিপজ্জনক আকার নিতে থাকল। প্রথম প্রথম ছাড় দিলেও পরে মা-কেও মারার চেষ্টা শুরু করল আসিকুর। এমনটাই জানালেন প্রদীপবাবু। বললেন, “২২ বছরের রোগ দু’মাসে সেরে গেল। এটাই তো প্রাপ্তি।”
আসিকুরকে আইওপি ভর্তি করে নেয়। প্রায় দু’মাস ধরে চলে চিকিৎসা। অতঃপর শাপমুক্তি। দু’দিন আগে আইওপি-তে ছেলেকে নিয়ে ‘চেক-আপ’-এর জন্য এসেছিল রহমান দম্পতি। আসিকুর নিজের কৃতকর্মের জন্য এখন অনুতপ্ত। জানালেন, “এখন মনে হয়, ভুল করতাম।”
[ছেলের জন্মদিনে মহাভোজ অনাথ আশ্রমে, পাত পেড়ে খাওয়ালেন কাটোয়ার ব্যবসায়ী]
The post বাবা-মাকে খুনের চেষ্টা! পিজি-র চিকিৎসায় ‘শাপমুক্ত’ ঢাকার যুবক appeared first on Sangbad Pratidin.