সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নিজের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে সহিষ্ণুতার ভাষা শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জবাবি ভাষণের শুরু থেকেই রাহুলকে আক্রমণের চেনা ছকই বেছে নিলেন। বক্তব্যের শুরু থেকেই রাহুলের একের পর এক মন্তব্যকে হাতিয়ার করে তাঁকে কটাক্ষ করলেন মোদি। এমনকী তাঁর জড়িয়ে ধরার পিছনেও ‘ক্ষমতা দখলের প্রবল ইচ্ছা’- দায়ী বলে অভিযোগ করলেন প্রধানমন্ত্রী। মোদি বললেন, ”যিনি আমার আসনে বসার স্বপ্ন দেখেন তিনি এখানে এসে আমাকে বললেন উঠুন, উঠুন। ক্ষমতা দখলের ইচ্ছা এতই প্রবল যে মানুষের উপর ভরসা না করে নিজেই আমাকে আসন থেকে সরাতে চলে এলেন।” রাহুলের জড়িয়ে ধরার এই ব্যাখ্যা শুনে অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ ভ্রু কুঁচকেছেন।
[প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করে শাস্তির মুখে রাহুল গান্ধী]
শুধু এই ঘটনা নয়, রাহুলের অন্য একাধিক বক্তব্যকে হাতিয়ার করেই নিজের বক্তব্যের নান্দীমুখ করলেন মোদি। কখনও বললেন রাহুল অহংকারী, মানুষের ভোটে বিশ্বাস নেই। আবার কখনও বললেন ক্ষমতায় আসার আগেই নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি। আবার কখনও বললেন দেশের শাসনব্যবস্থাকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভেবে ফেলেছে কেউ কেউ। রাহুলের চোখে চোখ রেখে কথা বলার প্রসঙ্গে মোদি আবারও চেনা নামদার, কামদার তত্ত্ব তুলে ধরলেন। গান্ধী পরিবারকে আক্রমণ করতে গিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু থেকে শুরু করে প্রণব মুখোপাধ্যায়, শরদ পাওয়ারের নামকেও টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী। তুলে আনেন রাহুলে চোখ মারার প্রসঙ্গও। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গোটা দেশ দেখছে কীভাবে চোখের খেলা দেখাচ্ছে বিরোধীরা।” মোদির বক্তব্য, কংগ্রেস নিজেদের উপরই আস্থা হারিয়ে ফেলছে, আর সেকারণেই সরকারকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কংগ্রেস নিজেকে বিশ্বাস করে না বলেই সরকারের নির্বাচন কমিশন, ইভিএম, সুপ্রিম কোর্ট, কেন্দ্রীয় এজেন্সি গুলোকে বিশ্বাস করতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, নেতিবাচক রাজনীতি করছে বিরোধীরা, নেতিবাচক রাজনীতি যারা করেন তাদের মুখোশ খুলে গিয়েছে।
[প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করে শাস্তির মুখে রাহুল গান্ধী]
রাহুল তথা কংগ্রেস তথা বিরোধীদের বিভিন্ন ইস্যুতে আক্রমণ করলেও এদিন রাহুলের অধিকাংশ প্রশ্নেরই উত্তর দেননি প্রধানমন্ত্রী। বেকার সমস্যা নিয়ে মোদি দাবি করে,ন দেশে শেষ একবছরে কোটিরও বেশি মানুষ রোজগার পেয়েছেন। ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি মোদি। দলিত, সংখ্যালঘু ইস্যু, দুর্নীতি ইস্যুতেও খুব একটা কথা বলতে শোনা যায়নি প্রধানমন্ত্রীকে। তবে রাফালে চুক্তি এবং ডোকলাম ইস্যু নিয়ে এদিন কংগ্রেস সভাপতিকে তীব্র আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। মোদি বলেন, “দেশকে মিথ্যে বলছে রাহুল, এই ছেলেমানুষি মেনে নেওয়া যায় না।” রাহুলের চৌকিদার, ভাগীদার মন্তব্যের পালটা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,”আমি শুধু চৌকিদার নয়, আমি ভাগীদারও। আমি যুবকদের স্বপ্নের ভাগীদার, কৃষকদের মেহনতের ভাগীদার, দেশের সার্বিক উন্নয়নের ভাগীদার। আমি সওদাগর নই, ঠিকাদারও নই।” নারী নিরাপত্তা ইস্যুতে মোদি তুলে আনেন তিন তালাক, বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও প্রকল্পের কথা।
রাহুল মোদির প্রতিটি প্রকল্পকে জুমলা স্ট্রাইক বলে কটাক্ষ করেছিলেন। তাঁর জবাবে চেনা দেশকে চেনা আবেগে ভাসাতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী। অভিযোগ করলেন, কংগ্রেস সভাপতি সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে জুমলা স্ট্রাইক বলেছেন। কংগ্রেস সাংসদরা প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সময় বিরোধিতাও শুরু করেন। তাদের দাবি, রাহুল বক্তব্যে একবারও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক শব্দটি ব্যবহার করেননি বা সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে অপমান করেননি। বক্তব্যের শুরুতে রাহুলকে অহংকারী বলে অভিযোগ করেছিলেন, বিরোধীরা মোদির শেষ মন্তব্যের মধ্যে সেই অহংকারই খুঁজে পাচ্ছেন। মোদি বলেন,“ আমি আশা করব বিরোধীরা ২০২৪ সালেও একই রকম অনাস্থা আনবে বিরোধীরা।” বিরোধীরা প্রশ্ন করছেন, তবে কী প্রধানমন্ত্রী ১৯’এর ভোটের আগেই নিজেকে জয়ী ঘোষণা করে দিলেন।
The post বিফলে রাহুলের ‘সহিষ্ণুতার পাঠ’, জবাবি ভাষণে চেনা ছন্দেই বিরোধীদের আক্রমণ মোদির appeared first on Sangbad Pratidin.