বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া প্রবল। মাথাব্যথা আরও বাড়িয়েছে দলে গোষ্ঠীকোন্দল ও প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ। তাই দক্ষিণের একমাত্র রাজ্যে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভরসা সেই নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি (PM Modi)। কর্ণাটকে (Karnataka) ১৮ দিনে ২০টি সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। দিল্লি বিজেপি সূত্রে খবর, একমাত্র দক্ষিণী রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে ময়দানে নামাতে হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে সভার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি রোড শো করানোর চেষ্টাও চলছে বলে জানিয়েছেন এক শীর্ষনেতা।
রাজনৈতিক মহলের মতে, এই রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে গেরুয়া শিবির মরিয়া। কারণ, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন রাজ্যে পালাবদল হলেও দক্ষিণের কোনও রাজ্যে সরাসরি ভোটে জিতে মসনদ দখলে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল। একমাত্র এখানেই ২০০৮ সালে এককভাবে ক্ষমতায় আসে বিজেপি।
[আরও পড়ুন: গোধরায় সবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন মামলায় ৮ সাজাপ্রাপ্তকে জামিন সুপ্রিম কোর্টের]
তখন অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হননি মোদী। ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। এখন কর্ণাটকে ক্ষমতায় থাকলেও ‘অপারেশন লোটাস’ করে দখল নিতে হয়েছে। ফলে কর্ণাটকে ক্ষমতা ধরে রাখা এখন শিবিরের কাছে ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। তাই ভোট ঘোষণার আগে যেমন বারবার প্রধানমন্ত্রীকে কন্নড় রাজ্যে ছুটে যেতে হয়েছে। তেমন প্রচারে অমিত শাহ ও নাড্ডাদের পাশাপাশি ঘাম ঝরাতে হবে মোদিকেও। আবার কংগ্রেসের তারকা প্রচারকের তালিকায় সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ির নাম থাকায় তোপ দেগেছে বিজেপি।
২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ১৫টি সভা করেছিলেন। সঙ্গে বেশ কয়েকটি রোড শোও করেন মোদি। কিন্তু তাতেও সোজাপথে ক্ষমতায় আসেনি বিজেপি। বুধবার দলের তারকা প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বম্মাই জানান, প্রধানমন্ত্রী ২০টি সভায় ভাষণ দেবেন। এছাড়া বেশ কিছু জায়গায় রোড শো করবেন। গতবার কর্ণাটকে প্রধানমন্ত্রী এবার পাঁচটি সভা বেশি করবেন। ২০১৮-র ভোটে ১৫ জায়গায় ভাষণ দেন তিনি। দক্ষিণে মোদির সাফল্যের কোনও নজির নেই। কর্ণাটক ছাড়া দক্ষিণের বাকি চার রাজ্যে বিজেপি এখনও দাঁত ফোটাতে পারেনি। ২০১৮ সালে বিধানসভা ভোটে মোদি-শাহ জুটি মাটি কামড়ে পড়ে থেকেও দলকে ক্ষমতায় আনতে পারেননি। সরকার গড়ে কংগ্রেস-জেডিএস জোট। পরে কংগ্রেসকে ভাঙিয়ে ক্ষমতায় ফেরে বিজেপি। সেই সরকার আবার পাঁচ বছর পেরনোর আগেই কোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার।
[আরও পড়ুন: জ্ঞানব্যাপী মসজিদে ওজুর অনুমতির আবেদন, গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের]
এক বছর আগে প্রবীণ ইয়েদুরাপ্পাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে তাঁরই অনুগত বাসবরাজ বম্মাইকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলেও সরকার ও দলের অর্ন্তকলহ কমেনি। বরং তা কী পরিমাণে বেড়ে গিয়েছিল প্রার্থী বাছাই পর্বে তা টের পেয়েছে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষনেতৃত্ব। বিজেপির প্রাক্তন এক মুখ্যমন্ত্রী এবং দুই উপমুখ্যমন্ত্রী ভোটের মুখে দল ছেড়েছেন। তাঁদের দু’জন যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে। প্রার্থীও হয়েছেন তাঁরা। অপরজন রাজনীতি থেকেই অবসর ঘোষণা করে জানিয়ে দিয়েছেন। তিন নেতাই আবার প্রভাবশালী লিঙ্গায়েত সমাজের মুখ। ফলে দলের লিঙ্গায়েত ভোট ব্যাঙ্কে ফাটলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল। তবে পদ্মপক্ষের কাছে স্বস্তির খবর একটাই, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার সক্রিয়তা। লিঙ্গায়েত সমাজের মানুষের মন জয়ে নেমেছেন তিনি।
তবে বলাইবাহুল্য কর্নাটকে দলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে না পারলে দাক্ষিণাত্য বিজয় দূরে থাক, আগামী লোকসভা ভোটও কঠিন হয়ে উঠবে পদ্ম শিবিরের জন্য। ফলে কর্নাটক বিধানসভার নির্বাচন মোদীর নিজেরও গড় রক্ষার ভোট। কারণ এরপরেই মধ্যপ্রদেশ, রাজস্তান, ছত্তিশগড়, জম্মু ও কাশ্মীরে ভোট। দক্ষিণের এই রাজ্যে পরাজয় হলে তার প্রভাব বাকি রাজ্যে পড়বে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এদিকে বুধবার তারকা প্রচারকদের তালিকা প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। আর সেই তালিকায় নাম রয়েছে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ির। এই নিয়েই এবার সুর চড়াল ভারতীয় জনতা পার্টি। বিজেপি সাংসদ শোভা কারান্দলাজে কটাক্ষের সুরে বলেন গ্যাংস্টার আতিক আহমেদ ও আশরফ আহমেদর বন্ধু ছিলেন ইমরান। আর তাঁকেই কর্ণাটক নির্বাচনে তারকা প্রচারক করেছে কংগ্রেস। এর থেকে বোঝা যায় দোষী ও সমাজবিরোধীদের সমর্থন করে কংগ্রেস।