সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এটিকের সঙ্গে এসে মিশেছে মোহনবাগান (Mohun Bagan)। সবুজ মেরুন তাঁবুতে বসে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) এহেন মন্তব্যর পরেও সচিব দেবাশিস দত্ত (Debasis Dutta) কোনও রকম প্রতিবাদ না করায় মোহনবাগান ফ্যান ক্লাবগুলি রীতিমতো ফুঁসছে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে এটিকে ইস্যুতে মোহনবাগান ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছেন ফ্যান ক্লাবের প্রতিনিধিরা। সঙ্গে বিভিন্ন ফ্যান ক্লাবের প্রতিনিধিদের দাবি, এটিকে শব্দটি উঠে যাওয়া নিয়ে বারবার প্রতিশ্রুতির পরও যখন উঠল না, কেন তার কোনও ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না সচিব দেবাশিস দত্ত?
মোহনবাগান ক্লাব বলতে পাগল সৌগত ঘোষ। পেশার কারণে থাকেন ভুবনেশ্বর। কিন্তু মোহনবাগানের জন্য মন পড়ে থাকে কলকাতায়। প্রিয় দলের সমর্থনে তৈরি করেছেন ফ্যান ক্লাব ‘আমরাই মোহনবাগান।’ এটিকে নাম না সরায় সেই সৌগতও এতটাই ভেঙে পড়েছেন যে বলছেন, ‘এতদিন শুনতাম, এটিকের কোনও অস্তিত্ব নেই। পুরোটাই মোহনবাগান। কোনও মার্জার হয়নি। কিন্তু এখন তো সবই উল্টো শুনছি। এখন ক্লাব কর্তারাই বলছেন, এটিকের সঙ্গে মার্জার হয়েছে। যদি এটিকের কোনও অস্তিত্বই না থাকে, তাহলে এই উঠে যাওয়া ক্লাবের নাম কেন শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের আগে থাকবে? ক্লাব ম্যানেজমেন্ট সমর্থকদের অনেক ভুল বুঝিয়েছে। আর ভুল বুঝতে রাজি নই। এই ব্যর্থ ম্যানেজমেন্ট যদি এটিকে সরাতে না পারে, তাহলে অবিলম্বে মার্জার ভেঙে বেরিয়ে আসুক। তাতে সম্মানটা অন্তত বাঁচবে।’
\
[আরও পড়ুন: পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটারদের একই ম্যাচ ফি, ভাইফোঁটায় ঐতিহাসিক ঘোষণা বিসিসিআইয়ের]
মোহনবাগান ক্লাবের কার্যকরী কমিটি সচিব দেবাশিস দত্তকে ভার দিয়েছিল, কীভাবে এটিকে শব্দটি মোহনবাগানের আগে থেকে সরানো যায়, তা নিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটা দেখভাল করতে। তারপর দেবাশিস দত্ত নিজে ক্লাব তাঁবুতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, খুব দ্রুত উঠে যাবে এটিকে। কিন্তু তারপর অনেকদিন কেটে গেলেও কিছুই হয়নি। আর এতেই মোহনবাগান সমর্থকরা মনে করছেন, এটিকে উঠে যাবে, উঠে যাবে, বলে দেবাশিস দত্ত তাঁদের বোকা বানাচ্ছেন।
ফ্যান ক্লাব মেরিনার্স ডি এক্সট্রিমের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তন্ময় মিশ্র বললেন, ‘পুজোর আগে রাজারহাটে একটি অনুষ্ঠানে দেবাশিস দত্ত নিজে মাইক হাতে বলেছিলেন, দ্রুত এটিকে সরে যাচ্ছে। তারপর এতদিন চলে গেল। অথচ আমরা সেই এটিকে মোহনবাগান নাম নিয়েই চলছি। এভাবে আমাদের আবেগের সঙ্গে কেন বারবার প্রতারণা করা হচ্ছে? দেবাশিস দত্ত সহ কার্যকরী কমিটির অবিলম্বে তার জবাবদিহি করতে হবে। এতদিন শুনতাম, মার্জার নয়। সৌরভ ক্লাবে যাওয়ার পর দেবাশিস দত্ত এখন বলছেন, মার্জার হয়েছে। ক্লাবের একজন সদস্য হিসেবে এটিকের সঙ্গে আমাদের মার্জারের চুক্তিপত্র অবিলম্বে দেখতে চাইছি। ক্লাবের প্রত্যেকটি সদস্যর মার্জারের চুক্তিপত্র দেখার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।’
‘মেরিনার্স বেস ক্যাম্প’-এর প্রসেনজিৎ সরকার বললেন, ‘ইস্টবেঙ্গল যদি কোনওরকম মার্জার ছাড়াই আইএসএলে খেলতে পারে, তাহলে মোহনবাগান কর্তারা কেন তা পারছেন না। দেবাশিস দত্তরা স্বীকার করে নিন, আপনারা প্রশাসনিক ভাবে চূড়ান্ত ব্যর্থ। আর মোহনবাগানকে এটিকে কর্তারা কতটা সম্মান দিচ্ছেন, তা সবুজ-মেরুন কর্তাদের সামনেই সৌরভ বুঝিয়ে দিয়েছেন। মোহনবাগান কর্তাদের ইতিমধ্যেই দায় নিয়ে মার্জার ছেড়ে বেরিয়ে আসা উচিত। ইস্টবেঙ্গলের মতো নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে বাঁচুন। বোঝার চেষ্টা করুন, লক্ষ লক্ষ সমর্থকরা আপনাদের সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না। সদস্য-সমর্থকদের বাদ দিয়ে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাব কিছুতেই চলতে পারে না।’
বেলেঘাটা মেরিনার্সের সুশান্ত বর বলছিলেন, ‘একশো বছরের ক্লাবকে এটিকের প্রতিনিধিরা যা তা অপমান করছেন, অথচ আমাদের সচিব দেবাশিস দত্ত একটিবার প্রতিবাদ করলেন না! দেবাশিস দত্ত যদি সত্যিই মোহনবাগানী হতেন, তাহলে নিশ্চয়ই প্রতিবাদ করে বলতেন, মোহনবাগান নামক সমুদ্র কখনও ৮ বছরের এটিকের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। পুজোর আবহটা কাটুক। মোহনবাগান ম্যানেজমেন্ট তারপর বুঝতে পারবে আমাদের আন্দোলন কতদূর যায়। এর শেষ দেখে ছাড়া হবে।’
মেরিনার্স ডি এক্সট্রিমের সিদ্ধার্থ মাইতি বললেন, ‘একটা ব্যাপার পরিস্কার হয়ে গিয়েছে, মোহনবাগান থেকে এটিকে সরানোর ব্যাপারে ক্লাব ম্যানেজমেন্টের কোনও ক্ষমতাই নেই। রোজ উঠে যাচ্ছে বলে দিনের পর দিন সমর্থকদের বোকা বানিয়েছেন দেবাশিস দত্তরা। আগে উনি বলতেন, মোহনবাগান না কি সমুদ্র। এখন তো দেখছি পুরো নোংরা নর্দমায় পরিণত করে দিয়েছেন। পুজো কাটলেই কর্তারা বুঝতে পারবেন, সমর্থকরা মোহনবাগানের জন্য আন্দোলনকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। হয় আমাদের মোহনবাগানকে ফিরিয়ে দিতে হবে, না হলে অবিলম্বে পুরো ম্যানেজমেন্টকে পদত্যাগ করতে হবে।’