অর্ক দে, বর্ধমান: রাজ্য সরকারের 'তরুণের স্বপ্ন' প্রকল্পে ট্যাব কেনার জন্য বরাদ্দ টাকা পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে না গিয়ে চলে গিয়েছে অন্য অ্যাকাউন্টে। পূর্ব বর্ধমানের প্রায় ১৪টি স্কুলে প্রায় ১ হাজার পড়ুয়ার ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট জায়গায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। সাইবার থানা ঘটনার তদন্ত শাখায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। পুরো বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে তারা। শুধু পূর্ব বর্ধমানই নয়, রাজ্যের প্রায় ১১টি জেলাতেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ ও শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে।
এই প্রকল্পে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয় রাজ্যে সরকারের তরফে। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে পড়ুয়াদের তালিকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর-সহ রাজ্যে শিক্ষা দপ্তরে পাঠানো হয়। সেই অনুযায়ী প্রকল্পের টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। কিন্তু বহু পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে সেই টাকা না ঢুকে অন্য অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মতো একই সমস্যা হয়েছে পূর্ব বর্ধমানেরও অনেকগুলো স্কুলে। বর্ধমানের সিএমএস হাই স্কুলে এবছর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী মিলে ৪১২ জন পড়ুয়া রয়েছে। গত ৫ অক্টোবর এই প্রকল্পে টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে। বর্ধমানের এই স্কুলে ২৮ জন পড়ুয়ার টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে না ঢুকে অন্যত্র চলে গিয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নজরে বিষয়টি আসতেই তিনি বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। দীপাবলি উপলক্ষ্যে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে অন্যান্য স্কুলের খবর পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার স্কুল খুলতেই দেখা গিয়েছে বর্ধমান সিএমএস স্কুল ছাড়াও আরও একাধিক স্কুলে একই ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে মহারানী অধিরানি বালিকা বিদ্যালয়, বর্ধমান সাধুমতি বালিকা বিদ্যালয়ও রয়েছে।
বর্ধমান সিএমএস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিন্টু রায় জানান, "পড়ুয়ারা বিদ্যালয়ে এসে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি বলে অভিযোগ জানায়। এরপরই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা না ঢুকে অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। সেই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে পড়ুয়াদের কোনও সম্পর্ক নেই। স্কুলের ২৮ জন পড়ুয়ার সঙ্গে একই ঘটনা ঘটেছে। বাকি তিনজন পড়ুয়া রয়েছে যাদের কেওয়াইসি নথি ঠিক না থাকার কারণে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়নি। পুরো বিষয়টি বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।" সূত্রের খবর, পূর্ব বর্ধমান জেলার ১৪টি স্কুলের প্রায় এক হাজার জন ছাত্রছাত্রীর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বৃন্দাবন মিত্র জানান, "বিভিন্ন স্কুল থেকে এই বিষয়ে অভিযোগ মিলেছে। সমস্ত বিষয়টি সাইবার শাখায় জানানো হয়েছে। প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করছে। তবে এখনই বলা যাচ্ছে না ঠিক কতগুলো স্কুলে এই ঘটনা ঘটেছে বা কতজন পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টর টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই সাইবার থানা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এক্ষেত্রে সাইবার প্রতারণা ঘটে থাকতে পারে। পোর্টাল হ্যাক করে টাকা গায়েব কর হয়ে থাকতে পারে। আবার ডেটা এন্ট্রিতেও ভুল হয়ে থাকতে পারে। যে কারণে এক অ্যাকাউন্টের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। পুলিশে এক আধিকারিক জানান, পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।