shono
Advertisement

ব্রহ্মতালু ফুঁড়ে বেরিয়ে মস্তিষ্ক, ‘মনস্টার বেবি’ নিয়ে দিশেহারা হাসপাতাল

কিন্তু কেন হয় এই রোগ? The post ব্রহ্মতালু ফুঁড়ে বেরিয়ে মস্তিষ্ক, ‘মনস্টার বেবি’ নিয়ে দিশেহারা হাসপাতাল appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:46 AM Oct 04, 2017Updated: 03:16 AM Oct 04, 2017

গৌতম ব্রহ্ম: বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছে। ব্রহ্মতালু ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে মস্তিষ্কের একটা অংশ। আলাদা করে কপালের অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে না। অক্ষিগোলক মিশে গিয়েছে ব্রহ্মতালুর সঙ্গে। হাত-পা-নাক-চোখ-মুখ-কান অবশ্য রয়েছে। কিন্তু আর পাঁচটা শিশুর মতো নয়। অস্বাভাবিক, অদ্ভুতদর্শন।

Advertisement

দেখলেই বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠছে। চিকিৎসক-নার্সরা ইতিমধ্যেই তাকে ‘মনস্টার বেবি’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন। জন্মের পর থেকে এহেন ভীষণদর্শন শিশুর ঠিকানা কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসএনসিইউ। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, শিশুটি বিরল প্রজাতির ‘এনকেফালোসিল’ রোগে আক্রান্ত। ‘অ্যানেনকেফালি উইথ এনকেফালোসিল’ কোটিতে একজন শিশুর হয় না এই রোগ। এতটাই বিরল! স্বাভাবিকভাবেই ডাক্তাররা দিশেহারা। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, এই রোগের কোনও চিকিৎসা নেই। অস্ত্রোপচারই একমাত্র পথ। কিন্তু এক্ষেত্রে অপারেশন টেবিলে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনাই ৯৯ শতাংশ।শুনে অঝোরে কেঁদে চলেছেন শিশুর মা। সন্তান জন্মের পর থেকে ছেলে এসএনসিইউ-তে। মা হয়ে নিজের ছেলের মুখের দিকে তাকাতে পারছেন না। দিনরাত ভেবে চলেছেন, এই ছেলেকে নিয়ে কী করবেন।

মায়ের নাম জ্যোৎস্না দাস। বাবা ঝন্টু দাস। বাড়ি সোনারপুর থানা এলাকার রাজাপুরের পল্লি চণ্ডীতলায়। ২৮ আগস্ট ডা. এস পতির অধীনে জ্যোৎস্নাকে ন্যাশনালে ভর্তি করা হয়। ৩১ আগস্ট এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন জ্যোৎস্না। সদ্যোজাতকে দেখার পরই চিকিৎসকরা চমকে ওঠেন। মাথার মধ্যিখানে খুলির একটি অংশ তৈরি হয়নি। সেখান থেকেই বেরিয়ে এসেছে ব্রেনের বড় অংশ। ন্যাশনালের নিউরোসার্জনরা জানিয়ে দেন, অতি বিরল রোগে শিশুটি আক্রান্ত। বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। তবু চিকিৎসাবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে ডাক্তাররা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার বাবা ঝন্টু দাসকে সেই কথা জানিয়েও দিয়েছেন ন্যাশনালের সুপার ডা. পীতবরণ চক্রবর্তী। বুঝিয়েছেন, অপারেশন করে মস্তিষ্কের বেরিয়ে থাকা অংশ খুলির ভিতরে ঢোকানোর চেষ্টা করা যেতেই পারে। কিন্তু, সেই অপারেশনের ধকল সহ্য করা একরত্তির পক্ষে সম্ভব কি না, বলা যাচ্ছে না। অস্ত্রোপচার সফল হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ১ শতাংশ।

[স্ত্রীকে লাগাতার ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ, ভাইকে খুন করল দাদা]

মৃত্যু অনিবার্য জেনেও ঝন্টুবাবু সন্তানের অস্ত্রোপচার চাইছেন। জানিয়েছেন, ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করাই ভাল। ঝন্টুবাবুর কথা মেনে ন্যাশনালের চিকিৎসকরা বৈঠকে বসেন। সিদ্ধান্ত হয়, বুধবার সকালে ‘বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি’ (বিআইএন)-তে পাঠানো হবে শিশুটিকে। ন্যাশনালের যুক্তি, বিআইএন স্নায়ুরোগের রেফারেল সেন্টার। অস্ত্রোপচারের অনেক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। ওখানে হলে ঝুঁকিটা একটু হলেও কমবে।

কিন্তু কেন হয় এই রোগ?

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রোগের উৎস এখনও অজানা। তবে একটা মহল জানিয়েছে, গর্ভাবস্থায় ছত্রাক সংক্রামিত বাদামজাতীয় কিছু খেলে গর্ভস্থ সন্তান এমন অস্বাভাবিকতার শিকার হতে পারে। সময়ে ভ্রূণের ‘নিউরাল টিউব’ বন্ধ না হওয়ায় এই বিপত্তি। ফলিক অ্যাসিড কম থাকলেও হতে পারে। এমনই মত ন্যাশনালের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান ডা. আরতি বিশ্বাসের। কেউ আবার বলছেন, টেরাটোজেনস, ট্রাইপান ব্লু, আর্সেনিক হানায় ভ্রূণের মধ্যে এমন বিকৃতি আসতে পারে। কোনও ব্যাখ্যাই চূড়ান্ত নয়। এনকেফালোসিল লাখে একজনের হয়। আর তবে, ‘অ্যানেনকেফালি ইউথ এনকেফালোসিল’ বিরলতম। ‘বিআইএন’-এর স্নায়ুরোগবিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, “কন্যাসন্তানের মধ্যেই এই জন্মগত রোগ বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠগুলি ঠিকমতো তৈরি হয় না। প্রসূতির ইউএসজি করলে বা অ্যামনিওটিক ফ্লুইড পরীক্ষা করলে এই রোগ ধরা পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থায় শিশুর মৃত্যু হয়। জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হলে আয়ু হয় বড়জোর এক সপ্তাহ।”

[‘থ্রি ইডিয়টস’-এর কায়দার সন্তান প্রসব করানোর চেষ্টা তিন নার্সের, তারপর…]

The post ব্রহ্মতালু ফুঁড়ে বেরিয়ে মস্তিষ্ক, ‘মনস্টার বেবি’ নিয়ে দিশেহারা হাসপাতাল appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement