সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গ্রামের নাম তিতোলি। হরিয়ানার (Haryana) এই গ্রামে গত ৪০ দিনে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের অসুস্থতার লক্ষণের সঙ্গে মিলে যায় করোনার সংক্রমণের চিহ্ন। তবুও এই গ্রামের কেউই কোভিড-১৯ (COVID-19) কিংবা তার সংক্রমণ সম্পর্কে সেভাবে জানেনই না। বরং তাঁদের মতে, গ্রামে স্থাপিত ৫জি টাওয়ার (5G Tower) আসলে ‘রাক্ষস’। আর তার চক্রান্তেই এই মৃত্যুমিছিল। সেই সঙ্গে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে করোনা টিকাকেও (COVID vaccine)।
গত এপ্রিলেই দেশে ঝাঁপিয়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। যার আঘাতে কার্যত পর্যদুস্ত অবস্থা। ব্যতিক্রম নয় হরিয়ানার এই প্রত্যন্ত গ্রামটিও। গত দেড় মাসে বহু মানুষই মারা গিয়েছেন, যাঁদের শরীরে ছিল প্রচণ্ড জ্বর, বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ। কিন্তু তবু গ্রামের বাসিন্দা ৯৪ বছরের উমে সিংয়ের মতে, গ্রামের মানুষের এই ভয়ংকর পরিস্থিতির জন্য দায়ী ‘রাক্ষুসে’ টাওয়ার। তাঁর কথায়, ‘‘ওটা টাওয়ার নয়। আস্ত শয়তান। ওটার থেকেই ভয়ানক সব ভাইরাস বেরিয়ে এসে লোকদের মেরে ফেলছে। যে যাই বলুক, আমি মনে করি আসল কালপ্রিট ওই টাওয়ারই।’’
[আরও পড়ুন: ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ওষুধের সংকট! উদ্বেগ প্রকাশ করে মোদিকে চিঠি সোনিয়ার]
আরেক বাসিন্দা রানি, যাঁর স্বামী প্রচণ্ড জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছেন, তাঁর মতে, স্বামীর মৃত্যুর দিন প্রচণ্ড বেগে হাওয়া দিচ্ছিল। তখনই সেই হাওয়ায় ভেসে ভাইরাস এসে তাঁর স্বামীর জীবন কেড়ে নিয়েছে!
এমনই নানা গুজব ছড়িয়ে রয়েছে রোহতকের এই গ্রামে। ‘ভাইরাস’ কথাটা তাঁরা বললেও করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কেউই সেভাবে জানেন না। তেমন ভাবে সচেতনতার প্রচার না হওয়ার কারণেই এই ধরনের ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন জেলার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার।
[আরও পড়ুন: বৈঠকে বসুন নয়তো আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়বে, মোদিকে হুমকি আন্দোলনকারী কৃষকদের]
আপাতত গ্রামের লোকদের আরজি, শিগগিরি এই ৫জি টাওয়ারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হোক। না হলে আরও লোকের মৃত্যু হবে গ্রামে। একজনের কথায়, ‘‘একদিন আমাদের প্রতিবাদের কারণে টাওয়ারটা ওরা বন্ধ রেখেছিল। সেদিন গ্রামে কেউ মারা যায়নি। কিন্তু টাওয়ার ফের চালু করতেই একদিনে ৯ জন মারা গেল।’’ এদিকে টিকাকরণ নিয়েও গ্রামের সাধারণ মানুষের অভিযোগ, টিকা নিয়েও বহু লোক মারা গিয়েছেন। এক বাসিন্দা ওম প্রকাশের কথায়, ‘‘যে টিকা নিচ্ছে, সেই মরে যাচ্ছে। পবনের বাবা নিল। মারা গেল। এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিল। নিতেই মরে গেল। কে টিকা নিয়ে মৃত্যুকে ডেকে আনবে?’’
প্রশাসন ইতিমধ্যেই উঠেপড়ে লেগেছে এই ধরনের ভুল ধারণাকে দূর করতে। ইতিমধ্যেই গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং সকলকে করোনা ভাইরাসের সম্পর্কে বোঝানোর প্রয়াস নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোভিড বিধি ঠিকমতো মানার নির্দেশও দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্রামের একমাত্র কোভিড হাসপাতালটিতেও পরিকাঠামোর অভাব থাকার বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। কেন সেখানে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই কিংবা সঠিক প্রশিক্ষণযুক্ত কর্মীও অনুপস্থিত, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।