ঘটনা ঘটেছে৷ রটনা রটেছে৷ কেউ হেসেছে৷ কেউ কেঁদেছে৷ কেউ গড়েছে৷ কেউ ভেঙেছে৷ কেউ পেয়েছে৷ কেউ হারিয়েছে৷ ষোলোর বারোমাস্যায় কত কিছুই না হয়েছে৷ সময়ের হিসেবে আজ সবই অতীত৷ অতীতের সেই কবিতা থেকেই শুরু হোক নতুনের জয়গান৷ একটু নজিরবিহীনভাবে৷ সংকলনে সংবাদ প্রতিদিন
১) সিপিএম-কংগ্রেস জোট – রাজনীতির ময়দানে অঙ্ক কষার কোনও শেষ নেই৷ পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি, পরিমিতি সবই চলে৷ তবে আলিমুদ্দিনের এই মতিগতি হবে কেউ বোধহয় ভাবতে পারেননি ঘোষণার আগে৷ বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যে জোট বাঁধল সিপিএম-কংগ্রেস৷ একই মালায় গলা দিলেন রাহুল গান্ধী-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ সৌহার্দ্রের সেই বিরল নজিরও নির্বাচনে বিরোধী জোটের ভরাডুবি আটকাতে পারেনি৷ ফল, বিরোধী দলের তকমাও জোটেনি বামফ্রন্টের৷
২) শহিদ হনুমানথাপ্পা – টানা ছয়দিন বরফের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন৷ উদ্ধারকারী দল যখন খোঁজ পায় তখনও প্রাণ ছিল ভারতীয় সেনার ল্যান্সনায়েকের দেহে৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হল না৷ বরফের নিচে থাকার কারণে শরীরে জমতে শুরু করল জল৷ ধরল নিউমোনিয়া৷ কোটি কোটি দেশবাসী প্রার্থনাও কাজে লাগল না৷ হাসপাতালে টানা তিন দিনের লড়াই শেষে জীবনের কাছে হনুমানথাপ্পা৷ তবে টানা এতদিন বরফে নিচে চাপা পড়েও বেঁচে ফিরে দেশবাসীকে দিয়ে গিয়েছেন এক না ভুলতে পারা বিরল মুহূর্ত৷
৩) আইএনএস বিক্রান্ত – ভাঙা-গড়ার নামই তো জীবন৷ এই জীবনের তাগিদেই নতুন করে প্রাণ পেল ভারতীয় নৌবাহিনীর পরাক্রমী যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিক্রান্ত৷ সেনার বাতিল এই রণতরীকে ধাতুকে গলিয়েই তারা তৈরি করে ‘ভি’ সিরিজের মোটরবাইক৷ আবেগ তাড়িত একটি বিজ্ঞাপনে হয়েছিল সেই বাইকের প্রচার৷ বুকিং শুরু হয়েছিল মার্চ থেকেই৷
৫) প্রেমের ফাঁদে প্লেন হাইজ্যাক – স্ত্রীকে ভালবাসা ভাল৷ তবে সৈফ এল দীন মুস্তাফার মতো ভালবাসা মোটেও ভাল না৷ মনে আছে, মার্চের শেষে কী করেছিলেন ইজিপ্টের এই অধ্যাপক৷ গোটা একটা বিমান হাইজ্যাক করে ফেলেছিলেন স্ত্রীকে দেখার জন্য৷ তাও আবার যিনি প্রাক্তন হয়ে গিয়েছেন৷ প্রথমেই হইচই পড়ে গিয়েছিল বিমানবন্দরে৷ মুস্তাফা দাবি করেছিলেন, বিস্ফোরক রয়েছে তাঁর কাছে৷ ধরা পড়ার পর জানা গেল সবই প্রেমিকের মিথ্যে আস্ফালন৷
৬) উপত্যকায় প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী – জম্মু ও কাশ্মীর৷ নামটা শুনলে এখন আর পাহাড়ে ঘেরা কোনও স্বর্গের কথা মনে পড়ে না৷ মনে পড়ে কারফিউ, সেনা, সন্ত্রাস, জঙ্গি এই শব্দগুলি৷ এই উপত্যকাতেই ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি৷ জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে৷ শুধু বাবা মুফতি মহম্মদ সৈয়দের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে নয়, আস্থা ভোটে জিতেই মসনদে বসেছেন ৫৭ বছরের নেত্রী৷
৭) শনি শিঙ্গনাপুরে মহিলা প্রবেশ – ৪০০ বছরের পুরনো প্রথা ভাঙল ষোলোর কল্যাণে৷ বম্বে হাই কোর্টের নির্দেশে মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত শনি শিঙ্গনাপুর মন্দিরে প্রবেশের অধিকার পেলেন মহিলারা৷ জানুয়ারি মাসে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল সমাজকর্মী ত্রুপ্তি দেশাইয়ের নেতৃত্বে৷ ৫০০-রও বেশি মহিলা মন্দিরে উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন৷ দাবি ছিল, মহিলাদের প্রবেশাধিকার চাই৷ তখন পুলিশ আটকে দিয়েছিল মহিলা ব্রিগেডকে৷ পরে এপ্রিল মাসে সেই পুলিশের সুরক্ষাতেই মন্দিরে ঢুকে নজির গড়েন মহিলারা৷
৮) তৃণমূলে মানস ভুঁইয়া – পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদ নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ চলছিলই৷ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্য কংগ্রেসের ঘরোয়া কাজিয়ার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন মানস ভুঁইয়া৷ ফল জানা গেল বছরের মাঝামাঝি৷ যখন সবংয়ের রাজনৈতিক ময়দানে নামল ধস৷ কংগ্রেসের সঙ্গে বহু বছরের সম্পর্ক শেষ করে তৃণমূলে যোগ দিলেন অভিমানী মানস৷ সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেসের একাধিক হেভিওয়েট নেতা৷
৯) অলিম্পিকে ব্রাজিলের সোনা – পাঁচ বারের বিশ্বকাপ জয়ী দল৷ এতদিন একটাই খুঁত রয়ে গিয়েছিল৷ তাও মিটে গেল ষোলোর আঙিনায়৷ ওলিম্পিকে প্রথম সোনা জিতল ফুটবল ‘মক্কা’ ব্রাজিল৷ জয়সূচক গোলটা করেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছিলেন নেইমার৷ ব্রাজিলের পোস্টার বয়ের চোখে তখন ছিল চোখে জল৷ কারণ নিন্দুকদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে ব্রাজিলকে প্রথম ওলিম্পিক সোনা এনে দিতে পেরেছিলেন বার্সেলোনা স্ট্রাইকার৷
১০) ব্রোঞ্জ যখন হয় সিলভার – রুমাল থেকে বিড়াল হয় কিনা জানা নেই৷ তবে ব্রোঞ্জ যে রুপোয় পরিণত হতেই পারে, তা ভারতবাসী ভালভাবেই জেনে গিয়েছেন৷ চার বছর আগে লন্ডন ওলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন কুস্তিগির যোগেশ্বর দত্ত৷ চলতি বছরে যা পরিণত হল রুপোয়৷ না কোনও জাদুবলে নয়, আসলে লন্ডন ওলিম্পিকে কুস্তির ৬০ কেজি বিভাগের ফাইনালে হেরে রুপো পেয়েছিলেন রাশিয়ার বেসিক কুডুখোভ৷ তার পরের বছর ২০১৩ সালে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি৷ তবে ডোপ টেস্টের জন্য তাঁর নমুনা রাখা ছিল আন্তর্জাতিক অ্যান্টি-ডোপিং সংস্থার (ওয়াডা) কাছে৷ রিও ওলিম্পিক শুরুর আগে সেই নমুনা ফের পরীক্ষা করা হয়৷ এবং সেই ডোপ টেস্টে ফেল করেন প্রয়াত রাশিয়ান কুস্তিগির৷ আর তাতেই শিকে ছেঁড়ে যোগেশ্বরের৷
১১) সন্তরূপেণ সংস্থিতা শহরের মাদার– ভ্যাটিকান থেকে কলকাতার দূরত্ব ঠিক কতখানি, তা নেহাতই অঙ্কের হিসেব৷ কিন্তু আবেগের নিরিখে, অনুভবের যোগাযোগে সেই মুহূর্তে দুনিয়ার দু-প্রান্তের মধ্যে বিন্দুমাত্র দূরত্ব ছিল না৷ সারা বিশ্বের পথ যেন সেদিন আক্ষরিকভাবেই মিলেছিল রোমে৷ তিনিই মিলিয়েছিলেন৷ যিনি একদিন সুদূর আলবেনিয়া থেকে কলকাতাকেই তাঁর সাধনা তথা কর্মযোগের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন৷ অ্যাগনেস গোনজা বোয়াজিউ, কলকাতার আদরের মাদার হলেন সন্তরূপেণ সংস্থিতা৷
১২) বরখাস্ত সাইরাস – বছরটা একেবারেই ভাল কাটল না টাটাদের৷ একদিকে রাজ্য সরকারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়, অন্যদিকে গলায় কাঁটার মত বিঁধে থাকা সাইরাস মিস্ত্রি৷ যেই সাইরাসের হাতে নিজের হাতে টাটা সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার তুলে দিয়েছিলেন রতন টাটা৷ তাঁকেই প্রায় নিজের হাতে উৎখাত করলেন৷ এরপর থেকেই চলছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের পালা৷ নজিরবিহীন এই ঘটনার জল সতেরোর শিরোনামেও উঠে আসার প্রবল সম্ভাবনা রয়ে গেল৷
The post ‘১৬ সাক্ষী থাকল যে সব নজিরবিহীন ঘটনার appeared first on Sangbad Pratidin.