নীতি আয়োগের নবম গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক বয়কট করল অধিকাংশ বিরোধী-শাসিত রাজ্যই। সহযোগিতা না থাকার অভিযোগ প্রকট।
অনুষ্ঠিত হল নীতি আয়োগের নবম গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক। কিন্তু বেশিরভাগ বিরোধী-শাসিত রাজ্যের প্রতিনিধির দ্বারা বৈঠকটি বয়কটের আহ্বান আলোচ্য সংস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল, বিতর্কে অগ্নিসংযোগও করল। মোদি সরকারের (Modi Government) প্রথম দফাতেই পূর্বত ‘যোজনা কমিশন’ তুলে দিয়ে সেই স্থলে ‘নীতি আয়োগ’ আনার উদ্দেশ্য ছিল ‘সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদ’ বাড়ানো এবং শাসনে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি গ্রহণ করা। তবে, অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া শুধুমাত্র একটি উপদেষ্টা সংস্থা হিসাবে নীতি আয়োগের বর্তমান কার্যকারিতা– বিশেষত বিরোধী দলশাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
তামিলনাড়ু, কেরল, কর্নাটক, তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা তঁাদের রাজ্যের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেট বরাদ্দকরণ এবং বিভিন্ন প্রকল্পে উপেক্ষার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বৈঠক বয়কট করেছেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দে্যাপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বিরোধী শিবিরের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত হলেও– বলার সময়– বার বার তাঁকে বাধা দান এবং পরে মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। নীতি আয়োগের সিদ্ধান্তে রাজ্যগুলির সরাসরি মতামত জানানোর পরিসর সীমিত। গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বয়কটের পদক্ষেপটি সেই অসন্তোষের ছবিকেই তুলে ধরে। যোজনা কমিশনের সময়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে মত আদানপ্রদানের পরিসর ছিল। বর্তমানে, নীতি আয়োগকে রাজ্যের বরাদ্দ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রক নিরবচ্ছিন্ন ক্ষমতা দিয়েছে। আর, এখানেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রকট হয়। নিজেদের-সহ শরিক দলগুলিকে খুশি রাখতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে অধিক অর্থ-বরাদ্দ এবং বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির প্রতি বঞ্চনা আর আড়াল থাকছে না।
[আরও পড়ুন: গরুপাচার কাণ্ড: CBI মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের জামিন, জেলমুক্তি হবে?]
ফলে, ‘সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদ’-এর লক্ষ্য নিয়ে যার প্রতিষ্ঠা, তা ‘প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদ’-এর জন্ম দিয়েছে। বিবিধ চ্যালেঞ্জ এবং উন্নয়নমূলক প্রয়োজনের ভিত্তিতে ন্যায়সংগত সমর্থন পাওয়ার পরিসরই যেন নেই! পূর্বের যোজনা কমিশনের অবসান ঘটিয়ে নীতি আয়োগের প্রতিষ্ঠা প্রকৃতপক্ষেই যদি ‘সময়ের দাবি’ হয়ে থাকে, তবে এমন লক্ষ্যচু্যতি দেশের উন্নয়নরোধী। জাতীয় স্তরে পরিকাঠামো ও মূলধন বিনিয়োগের মাধ্যমে বৃদ্ধিকে মোকাবিলা করার জন্য আরও অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। নীতি আয়োগকে অবশ্যই এই সহায়তা-প্রদানের জন্য সক্রিয় হতে হবে, এবং বরাদ্দ সুনিশ্চিত করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, প্রকল্পগুলির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় রাজ্যগুলিরও বক্তব্য রয়েছে। নীতি আয়োগের (NITI Aayog) লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন একটি পরিবেশ গড়ে তোলা, যেখানে রাজ্য ও কেন্দ্র যৌথভাবে ভারসাম্যপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে পারবে, যাতে প্রতিটি রাজ্য, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে, ন্যায্য অংশ পেতে পারে।