সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভরা এজলাস। আদালত কক্ষের ভিতরে চলছে দুই আইনজীবীর জোর তর্কবিতর্ক। এককোণে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মা এবং মেয়ে। আচমকা তাঁদের দিকে নজর যায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। কেন এভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, প্রশ্ন করেন তিনি। বিচারপতিকে ভগবান বলে উল্লেখ করে ধন্যবাদ জানান ওই দুই মহিলা।
জানা গিয়েছে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে মায়ের পাশে দাঁড়ানো মহিলার নাম মিতালি দাস। তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ১৮টি মামলা দায়ের করেছেন স্বামী। তার পরিপ্রেক্ষিতে আগে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। সেই সময় তিনি জেলা মুখ্য বিচারককে ফোন করে বিষয়টি দেখতে বলেন। তাতে সমস্যার সুরাহাও হয়।
[আরও পড়ুন: বাজার থেকে উধাও পিঁয়াজ? বিশ্বজুড়ে তীব্র হচ্ছে সংকট]
সমস্যা যখন মিটেই গিয়েছে তখন কেন ফের এজলাসে ঘোরাফেরা করছেন মা-মেয়ে, তা প্রথমে বুঝতে পারেননি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাই তিনি প্রশ্ন করে বসেন, “সমস্যা তো মিটে গিয়েছে, তা হলে কেন এলেন?” মিতালি জানান বর্তমানে অন্য একটি সমস্যায় পড়েছেন তিনি। জানান, বোলপুরের অতিরিক্ত বিচারকের নির্দেশ অনুযায়ী বর্তমানে তাঁর স্বামী ১০ হাজারের পরিবর্তে ৮ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে দিচ্ছেন। তার ফলে বিশেষ শারীরিক ক্ষমতাসম্পন্ন সন্তানের খরচ সামলানো কার্যত দায় হয়ে যাচ্ছে। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “কোন যুক্তিতে বিচারক সুজয় সেনগুপ্ত ১০-এর বদলে ৮ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে দিতে বলেছেন, তা জানেন?” মিতালির অবশ্য সে বিষয়ে কিছু জানা নেই। বরং হাই কোর্টে আসায় বিচারক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেই জানান মিতালি।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আপনি কি খুব ঝগড়া করছেন? ঠিক আছে। এখন আপনি চলে যান। আমি আপনার কাগজ খতিয়ে দেখব। আইনি সাহায্য পাচ্ছেন?” মিতালি উত্তরে বলেন, “আপনার কথামতো লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছি। আজ আবার সেখানে যাব।” বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মা ও মেয়ের উদ্দেশে বলেন, “ঠিক আছে, সাবধানে যান।” এরপরই মিতালি এবং তাঁর মা কেঁদে ফেলেন। হাতজোড় করে তাঁরা বলেন, “আপনার মতো ভগবান পাশে ছিল বলে আমি রেহাই পেলাম। আপনার পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে পারলে ধন্য মনে করতাম।” তবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁদের থামিয়ে দেন। বলেন, “এসব কিছু না। ওভাবে বলবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।”