দুলাল দে: ক্রীড়াসাহিত্য এখন আর শুধু বিনোদন বা অবসরকালীন সময়ে পড়ার বিষয় নয়। বাংলা বিষয়ে আপনাকে স্নাতক হতে হলে যেরকম ‘বৈষ্ণব পদাবলী’ পড়তে হবে, পড়তে হবে বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ যেখানে আবশ্যিক, সেখানে এবার প্রখ্যাত প্রাক্তন ক্রীড়া সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মতি নন্দীর ক্রীড়াসাহিত্যও পড়তে হবে। তবে শুধু পড়াই নয়, স্নাতক হতে গেলে ক্রীড়াসাহিত্য বিষয়টিতে পাসও করতে হবে।
এতদিন পাঠ্যক্রমে ক্রীড়াসাহিত্য বলতে মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের ক্লাস টেন-এ মতি নন্দীর বিখ্যাত উপন্যাস ‘কোনি’ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু স্নাতক স্তরে ক্রীড়াসাহিত্য একটি পেপার হতে পারে তা কখনও কেউ ভাবেনইনি। ভাবনাটা প্রথম এল পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। জাতীয় এডুকেশন পলিসি তৈরি হয় ২০২০ সালে। আর তা এ রাজ্যে প্রয়োগ শুরু হল ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে। এতদিন পর্যন্ত যা কোনও বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত হয়নি, সেই ক্রীড়াসাহিত্যকে বাংলা স্নাতকস্তরে আবশ্যিক পেপার হিসাবে জায়গা দিল পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলা বিভাগের বোর্ড অফ স্টাডিজের অধিকর্তারা বাংলা স্নাতকের সিলেবাস তৈরি করার সময় ঠিক করেন, এবার থেকে বাংলা স্নাতকের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্রীড়াসাহিত্য পড়তেই হবে। তবে তা দ্বিতীয় সেমেস্টার থেকে। মোট নম্বর ৫০। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ক্রীড়াসাহিত্য কোনওমতেই ঐচ্ছিক বিষয় নয়, পুরোপুরি আবশ্যিক। আর ছাত্র-ছাত্রীদের এই বিষয়ে পাস করতেই হবে।
[আরও পড়ুন: কানাডার সাজঘরে আচমকা হাজির দ্রাবিড়, বাতিল ম্যাচেও মন জিতলেন ভারতের হেডস্যর]
মূলত উত্তর চব্বিশ পরগনার অনুমোদিত কলেজগুলিই এই পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। বাংলা বিভাগের বোর্ড অফ স্টাডিজ সিলেবাস তৈরির সময় সিদ্ধান্ত নেয়, ক্রীড়াসাহিত্য পড়ানো হবে দ্বিতীয় সেমেস্টার থেকে। কেউ দ্বিতীয় সেমেস্টারে পাস না করতে পারলে পাস করার জন্য ফের সুযোগ পাওয়া যাবে তৃতীয় সেমেস্টারে। তবে সমস্যাটা ছিল অন্য জায়গায়। বোর্ড অফ স্টাডিজের অধিকর্তারা সিলেবাসের সময় ঠিক করতে পারছিলেন না, ক্রীড়াসাহিত্যে শুরুতেই সিলেবাসে কোন উপন্যাসগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। সঙ্গে প্রথম বছরে সিলেবাসে কতগুলি উপন্যাস রাখা হবে। এই আলোচনা থেকেই ঠিক হয়, ক্রীড়াসাহিত্য যখন, তখন শুরুতে মতি নন্দী ছাড়া অন্য কোনও লেখকের নাম ভাবার অবকাশই নেই। আর সেই ভাবনা থেকে ঠিক হয়, প্রথম বছর সিলেবাসে থাকবে মতি নন্দীর তিনটি উপন্যাস। অমর সাহিত্য প্রকাশনের বিখ্যাত উপন্যাস, ‘কোনি’। মতি নন্দীর অপর দুটি উপন্যাস হল বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রকাশিত ‘স্ট্রাইকার’ এবং আনন্দ পাবলিশার্সের ‘কলাবতী’।
২০২৩-এর পাঠ্যক্রম থেকে ক্রীড়াসাহিত্য পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা মতি নন্দীর এই তিনটি উপন্যাস পড়তে পারবেন এই বছরের পাঠ্যক্রমে। কারণ, পড়ার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে দ্বিতীয় সেমেস্টার থেকে। ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকবে মোট সাতটি। প্রথম তিনটি দশ নম্বর করে মোট তিরিশ। পরের তিনটি পাঁচ নম্বর করে মোট পনেরো। আরেকটি বিভাগে একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে পাঁচ নম্বরের। পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা স্নাতক সিলেবাসে মতি নন্দীর ক্রীড়া উপন্যাস অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে বিধাননগর কলেজের অধ্যাপক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বললেন, “এতদিন ক্রীড়া-বিষয়ক সাহিত্য ছাত্র-ছাত্রীরা অবসর সময়েই পড়ত। কিন্তু তা বাংলা স্নাতকের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়তেই হবে। এতে মানুষের মধ্যে ক্রীড়াচেতনা বাড়বে। যা সমাজের জন্য খুবই ভালো।”