সুমন করাতি, হুগলি: বাবা চায়ের কাপে ওঠান ধোঁয়া আর মেয়ে মাঠে তোলেন ঝড়! হুগলি (Hooghly) জেলার বলাগড়ের বাসিন্দা মৌমিতা। ছেলেবেলা থেকেই দাপুটে মেয়েটার শখ ছিল দৌড়ে বিশ্ব জয় করার। জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে জোড়া পদক জয় করলেন তরুণী। খুশির হাওয়া বাড়িতে।
ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। ফলে পড়াশোনা সম্ভব হলেও খেলাধুলো বিলাসিতা। তা সত্ত্বেও শহর কলকাতা থেকে কয়েক মাইল দূরের চা দোকানির মেয়ে মৌমিতার স্বপ্ন ছিল জাতীয় স্তরে খেলার। চণ্ডিগড় অ্যাথলেটিক্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত তৃতীয় জাতীয় অনূর্ধ্ব ২৩ অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় জোড়া পদক জয় করলেন মৌমিতা। প্রতিপক্ষ মহারাষ্ট্রের প্রাঞ্জলি দিলীপ পাতিলকে হারিয়ে ১০০ মিটার হার্ডলসে চ্যাম্পিয়ন তিনি। তবে লং জাম্পে কেরলের লড়াকু প্রভাভাটি পিএসের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেননি। ফলে তৃতীয় স্থান পেয়ে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন মৌমিতা।
[আরও পড়ুন: নিখোঁজ ছেলেকে উদ্ধারে সাহায্য BJP বিধায়কের, ‘কৃতজ্ঞতা’য় দলবদল TMC পঞ্চায়েত সদস্যের]
বলাগড় ব্লকের জিরাটের কালিয়াগরে বাড়ি মৌমিতার। বাবা সুভাষচন্দ্র মণ্ডল। জিরাট স্টেশনের উপরে তাঁর ছোট্ট একটা ঝুপড়ি চায়ের দোকান। আয় কোনওদিন ১০০, আবার কোনওদিন ২০০! ওই টাকাতেই চলত চারজনের পেট! ভাঙা ঘর, তাতেই কোনওরকমে মুখে হাসি আর পেটে খিদে নিয়ে কাটিয়ে দিতে হত চারজনকে। মেয়ের পদক জয়ের পর বাবা বললেন, “মেয়েদের ভালো পোশাক কিনে দিতে পারিনি। আর খেলার জার্সি তো দূর-অস্ত। তবুও ওর ইচ্ছে ছিল অনেক দূর দৌড়ে যাওয়ার।” দৌড়ের দৌলতেই চলতি বছর মার্চ মাসে ইস্টার্ন রেলওয়েতে গ্রুপ সি পদে চাকরি পেয়েছেন মৌমিতা। ২১ বছরের মৌমিতা গত দু’বছর ধরে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনে ঘাম ঝড়াচ্ছেন অনুশীলনে। লক্ষ্য অলিম্পিক। ঘর ভর্তি মেডেল আর চোখ ভর্তি স্বপ্ন। এখনও অনেকটা পথ বাকি। আর পথে শরিক হয়ে তার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন বলাগরের বিড়িও নীলাদ্রি সরকার থেকে ক্রীড়াপ্রেমী পবন পন্ডিত।