সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অভুক্ত অবস্থায় বিচারাধীন মুসলিম বন্দিকে মারধর। তারপর গরম লোহার শিক দিয়ে তার পিঠে ‘ওম‘ লিখে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তিহার জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে৷ এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে ইতিমধ্যে কারকারডুমা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সাব্বির নামে ওই বন্দির পরিবার৷ তিহার জেলের পুলিশ আধিকারিক রাজেশ চৌহান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সাব্বিরকে প্রাণে মারার চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছে তারা৷
[আরও পড়ুন-শ্বাসরোধ করে খুন রোহিত তিওয়ারিকে! মৃত্যুরহস্যে নয়া মোড়]
জানা গিয়েছে, বছর ৩৪-এর সাব্বিরকে শুক্রবার কারকারডুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে তার পিঠের দাগ দেখে একপ্রকার শিউরে ওঠেন ম্যাজিস্ট্রেট রিচা পারিহার৷ দেখা যায়, সাব্বিরের পিঠের বাঁ দিকে প্রায় ছ’ইঞ্চি বড় ‘ওম’ চিহ্নটি খোদাই করা রয়েছে। যদিও সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছে জেল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, যদি বলপূর্বক চিহ্নটি খোদাই করা হয়, তবে এত সুন্দর ভাবে সেই কাজটি করা যেত না। বিচারাধীন অবস্থায় ২০১৭-র নভেম্বর থেকে তিহার জেলে বন্দি রয়েছে সাব্বির৷
[আরও পড়ুন-মমতার রাস্তায় চলে ভাড়া না বাড়িয়ে আয়ের খোঁজে রেল]
জেল সূত্রে খবর, গত ১২ এপ্রিল জেলের সুপারিনটেন্ডেন্ট রাজেশ চৌহানের কাছে জ্বালানি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের করে সাব্বির৷ সে জানায়, জেলের স্টোভটি খারাপ হয়ে গিয়েছে৷ সাব্বিরের অভিযোগ, এরপরই একদিন নিজের ঘরে তাকে ডেকে পাঠান রাজেশ চৌহান৷ এবং সেখানে অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে সাব্বিরের উপর অকথ্য অত্যাচার চালান তিনি৷ দু’দিন সাব্বিরকে অভুক্ত অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়৷ তারপর গরম শিক দিয়ে সাব্বিরের পিঠে ‘ওম’ খোদাই করে দেন রাজেশ চৌহান ও অন্যান্য আধিকারিকরা। “তোদের মতো মুসলিমদের জন্য আমাদের দেশ ধ্বংস হচ্ছে” বলে মন্তব্য করার অভিযোগও উঠছে তাঁদের নামে। এমনকী ১৪ তারিখ রাজেশ চৌহান সাব্বিরকে বলে, যেহেতু সে নবরাত্রির সময়ে উপবাস করেছে, তাই মুসলিম থেকে হিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
[আরও পড়ুন-শহিদ হেমন্ত কারকারেকে নিয়ে মন্তব্য, চাপে পড়ে ক্ষমা চাইলেন সাধ্বী প্রজ্ঞা]
১৭ তারিখ আদালতে হাজির হওয়ার পর, বিচারকের সামনে সব কথা খুলে বলে সাব্বির। সব কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দেন বিচারক। পাশাপাশি অভিযুক্ত জেল সুপার রাজেশ চৌহান যাতে কোনওভাবে তার উপর খবরদারি না চালাতে পারে তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়। এবং আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই বিষয়ে আদালতে রিপোর্ট জমা করতে বলে। কিন্তু, ১৮ তারিখ তিহার জেল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিনিধি যেমন আসেনি তেমনি মেডিক্যাল পরীক্ষা বা তদন্তের রিপোর্টও জমা পড়েনি আদালতে। বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ হয়ে আগামী ২২ তারিখের মধ্যে তিহারের ডিজিপি-এর কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেন বিচারক।
[আরও পড়ুন-ব্যাটে-বলে ‘আজাদি’, নির্বাচনে স্বাধীনতার নয়া স্বাদ পেল ভূস্বর্গের তরুণরা]
এপ্রসঙ্গে তিহারের ডিজি অজয় কাশ্যপ একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানান, ডিআইজি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। ইতিমধ্যেই আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ওই বিচারাধীন বন্দিকে অন্য জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই আদালতে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।
[আরও পড়ুন-খুচরোর জ্বালায় জেরবার, ত্রিশ কিলো কয়েন দিয়ে মনোনয়নপত্র নিলেন বৃদ্ধ]
সাব্বিরের আইনজীবী জগমোহন বলেন, জেল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে কেন সাব্বিরকে টার্গেট করা হল। জেল কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে জবাব দেওয়ার পরেই আদালত তার রায় শোনাবে। এই ঘটনায় সাব্বিরের পরিবার আতঙ্কিত হলেও বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দেশি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ধরা পড়েছিল সাব্বির। বর্তমানে অস্ত্র আইনে তার নামে মামলা চলছে।
The post বন্দির পিঠে গরম লোহার শিক দিয়ে লেখা ‘ওম’, কাঠগড়ায় জেল কর্তৃপক্ষ appeared first on Sangbad Pratidin.