সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: মানুষ মানুষেরই জন্য। সম্প্রদায় যে সেখানে তুচ্ছই তা আরও একবার হাতেনাতে প্রমাণিত হল সুন্দরবনের প্রত্যন্ত পাথরপ্রতিমার এক অজগাঁয়ে। বছর সাতান্নর আশরাফ আলি স্বেচ্ছায় তাঁর একটি কিডনি দান করে জীবন বাঁচালেন পঁয়ত্রিশ বছরের কানাইলাল সাহুর।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা ব্লকের রামগঙ্গার বাসিন্দা কানাইলাল সাহু। দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন। অনেক পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, তাঁর দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই তাঁর একটি কিডনির প্রয়োজন। কিন্তু কোথায় পাবেন কিডনি এই ভাবনায় ঘুম উড়ে গিয়েছিল সাহু পরিবারের। তেমন সামর্থ্যও পরিবারের নেই যে তা অর্থের বিনিময়ে পাবেন। তাই বাঁচার আশাই একরকম ছেড়ে দিয়েছিল কানাইলালের পরিবার। কানাইলাল নিজেও সেজন্য সবসময় মনমরা হয়ে থাকতেন। মৃত্যুভয় যেন ক্রমেই গ্রাস করছিল তাঁকে। এমনই এক কঠিন সময় ঠিক যেন ঈশ্বরের দূতের মতো কানাইলালের সামনে এসে হাজির হলেন পাথরপ্রতিমা ব্লকেরই এল প্লটের উপেন্দ্রনগরের বাসিন্দা শেখ আশরাফ আলি।
[আরও পড়ুন: ৮ ঘণ্টা পর নিজাম প্যালেস থেকে বেরলেন পার্থ, পরেশ অধিকারীর মেয়ের চাকরি নিয়ে প্রশ্ন CBI-এর]
একদিন কলকাতা থেকে ডাক্তার দেখিয়ে আত্মীয়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন কানাইলাল। ফেরার পথে বাসেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় আশরাফের। একই ব্লকের বাসিন্দা হওয়ায় ক্রমে দু’জনের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্বের সম্পর্কও। দুই পরিবারের মধ্যেও তৈরি হয় সুসম্পর্ক। নানা কথাবার্তার মাঝে আশরাফ একদিন জানতে পারেন বন্ধু কানাইলাল কিডনির অসুখে ভুগছেন। শীঘ্রই একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে না পারলে বন্ধুর জীবনমরণ সমস্যা হতে পারে। তিনি আরও জানতে পারেন বন্ধুর ‘ও’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত। শোনামাত্রই ছুটে যান চিকিৎসকের কাছে। কী আশ্চর্য! পরীক্ষার পর আশরাফ জানতে পারেন, তাঁর রক্তের গ্রুপও ‘ও’ পজিটিভ। আর দেরি করেননি আশরাফ। সপ্তাহখানেক আগে বন্ধু কানাইলাল ও তাঁর পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে আশরাফ চলে আসেন কলকাতায়। এক বেসরকারি হাসপাতালে নিজের একটি কিডনি কানাইলালকে দান করেন। সম্প্রতি চিকিৎসকরা সম্পূর্ণ সফলতার সঙ্গে কানাইলালের শরীরে প্রতিস্থাপন করেছেন আশরাফের দান করা একটি কিডনি। বর্তমানে দু’জনেই সুস্থ রয়েছেন।
কানাইলালের পরিবার জানিয়েছে, আশরাফকে কৃতজ্ঞতা জানানোর কোনও ভাষা তাঁদের জানা নেই। তাঁদের কাছে আশরাফ আলি যেন ঈশ্বরপ্রেরিত কোনও দূত! অন্যদিকে আশরাফের আত্মীয়রা জানিয়েছেন, নিজের জীবন বিপন্ন করে তাঁদের বাড়ির অতি সাধারণ একজন সন্তান যে এভাবে একজন মরণাপন্ন মানুষের জীবনরক্ষা করতে পারেন তা কোনওদিন কল্পনাতেই আনেননি তাঁরা। গর্বে ফুলে উঠছে তাঁদের বুক। আশরাফের জন্য শুধু তাঁর পরিবার নয়, গর্বিত গ্রামবাসীরাও। দু’জনেরই দ্রুত সুস্থতা কামনা করে প্রতিবেশীদের অনুভূতি জয় হল আসলে মনুষ্যত্বেরই।