অভিষেক চৌধুরী, কালনা: পিতৃতুল্য কাকার মৃত্যুতে ছেলেদের পাশাপাশি মাথা মুড়িয়ে, হিন্দুশাস্ত্র মেনে শেষকৃত্য (Funeral)সম্পন্ন করলেন পুত্রসম মুজিবর শেখ। শুধু তাই নয়, তাঁর শ্রাদ্ধকর্মে যাবতীয় আচার পালন করলেন তিনি। পূর্বস্থলীর (Purbasthali) চুপি কালীতলা এলাকার বাসিন্দা সমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্যে সম্প্রীতির এক উজ্বল ছবি ধরা পড়ল। যা দেখে আপ্লুত স্থানীয় বাসিন্দারা সকলেই। মুজিবরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁরা।
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের চুপির বাসিন্দা ছিলেন সমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। একসময় তিনি স্বাস্থ্যদপ্তরে চাকরি করতেন। তারপর দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৩ এপ্রিল প্রয়াত হন। তাঁর দুই পুত্র অমিতাভ ও অরুণাভ চট্টোপাধ্যায় হিন্দু (Hindu) শাস্ত্র মেনে শেষকৃত্যে ক্ষৌরকর্মাদি করেন। তাঁদের পাশাপাশি শেষকৃত্যে শামিল হন স্থানীয় কাষ্ঠশালির বাসিন্দা মুজিবর শেখ। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও অমিতাভ ও অরুণাভ দুই পুত্রের মতই মুজিবরের প্রতিও অপত্য স্নেহ ছিল প্রয়াত সমরেন্দ্রনাথবাবুর। নিজের ছেলেদের মতোই মুজিবরকে স্নেহ করতেন তিনি। তাঁর দীর্ঘ অসুস্থতার সময় বাড়ি থেকে হাসপাতাল, সর্বত্রই সমরেন্দ্রবাবুর ছায়াসঙ্গী ছিলেন পেশায় চাষি এই মুজিবর। কাকার মৃত্যুতে তিনি ভেঙে পড়েন।
[আরও পড়ুন: স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজল বাংলা, কমল তাপমাত্রা, সোমবারই খুলছে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান!]
নিজের পিতৃসম কাকার আত্মার শান্তি কামনায় ইদের (Eid) নমাজ পাঠ শেষে মাথা মুড়িয়ে শেষকৃত্যে যোগ দেন মুজিবর। রবিবারও দুই ভাইয়ের পাশে বসে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের সমস্ত আচার পালন করেন তিনি। মুজিবর জানান,“কাকা আমাকে নিজের ছেলের মত করে ভালবাসতেন। তাঁর দুই ছেলে আমার বন্ধু। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে কাকার সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এইভাবে কাকার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছি না। তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় ইদের নমাজ পড়ে আমি মাথা মুড়িয়ে ক্ষৌরকার্যের পাশাপাশি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও করি।”
[আরও পড়ুন: হনুমান জয়ন্তীতে আইন-শৃঙ্খলা ভালই সামলেছে রাজ্য, পুলিশের প্রশংসা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্তাদের মুখে]
শুধু পেটে ধরলেই যে সন্তান হয়, তা তো নয়। মুজিবরই তার প্রমাণ, এমনই বলছেন সমরেন্দ্রনাথবাবুর স্ত্রী মমতাদেবীও। তাঁদের বড় ছেলে অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুজিবরকে বাবা নিজের সন্তানের মত করে ভালবাসতেন। বাবার আত্মার শান্তি কামনায় শ্মশানে সর্বক্ষণ ছিল ও। এছাড়া শেষকৃত্য সম্পন্ন করে। ইদের নমাজ পড়ে গঙ্গার ঘাটে গিয়ে মুজিবর মাথা মুড়িয়ে ক্ষৌরকার্য ও শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও করে। আমরা যখন জাতপাতের বিষয়টাকে বড় করে দেখি, তখন মুজিবরের এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মানবতার জয় হল। তার এই উদারতা নজিরবিহীন।”