অভিরূপ দাস: জীবনপ্রদীপ জ্বালিয়ে পাদপ্রদীপের আলোয়। শ্যামাপুজো উদ্বোধনে শহরে আসছেন মহম্মদ মানিক (Md. Manik)। এক মাস আগেও তাঁর নাম জানত না কেউ। কালীপুজো (Kali Pujo 2022) উদ্বোধন তো দূরের কথা, পাড়ায় ছোটখাটো কোনও অনুষ্ঠানেও ডাক পাননি কোনওদিন। এহেন মানিকের উত্তরণের নেপথ্যে অসম সাহস। যে সাহসের কাছে হার মেনেছিল হড়পা বান।
বিজয়া দশমীর রাত। মালবাজারের (Malbazar) মাল নদীতে ঠাকুর বিসর্জন দিতে এসেছিলেন অগুনতি। আকস্মিক হড়পা বানেই নেমে এল সর্বনাশ। পিঁপড়ের মতো ভেসে যাচ্ছিল মানুষগুলো। নিজের জীবন বিপন্ন করে খরস্রোতা নদীগর্ভ থেকে দশজনকে টেনে তোলেন মানিক। টিভিতে সেই দৃশ্য দেখার পরই সিদ্ধান্ত স্থির করেন শ্যামাপুজো কমিটির কর্তারা। তাঁর হাতেই পুজোর ফিতে কাটার দায়িত্ব তুলে দিয়েছে সোদপুর (Sodepur) নাটাগড় ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন। এবার তাদের কালীপুজো ৬২তম বছরে।
[আরও পড়ুন: অনড় ইডি, সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে আসতেই হল মানিক ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলকে]
ক্লাবের সম্পাদক সুজিত দে জানিয়েছেন, ”ব্যতিক্রমী পথে হাঁটতে চাই। আমাদের আশপাশে এমন অনেকেই আছে সে অর্থে তাঁরা সেলিব্রিটি নন। খবরের কাগজ, ম্যাগাজিনে রোজ রোজ তাঁদের ছবি বেরয় না। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে এঁরাই সুপারস্টার।” যেমনটা মহম্মদ মানিক। দেখতে গিয়েছিলেন বিসর্জন। কিন্তু সে রাতে এমনটা হবে, কে জানত? ঘুটঘুটে অন্ধকার। শান্ত মাল নদী (Mal River) আচমকাই বদলে যায় হড়পা বানের অভিঘাতে। সবাই যখন ছুটে পালাচ্ছেন, নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন মানিক। ভয় লাগেনি? মানিকের কথায়, ”অনেকগুলো শিশু ভেসে যাচ্ছিল। আমার মনে পড়ে গিয়েছিল নিজের বাচ্চাটার কথা। আর কোনওকিছু না ভেবে ঝাঁপ দিয়েছি।”
[আরও পড়ুন: হলদিয়া পুরসভার টেন্ডার দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন কাউন্সিলর]
সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে এ শহরের কালীপুজোয় উদ্বোধনের ডাক পেয়ে স্বভাবতই খুশি মানিক। অকুতোভয় ওই সংখ্যালঘু মানুষটার হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে পেরে আপ্লুত নাটাগড় ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশনও। আগামী শনিবার বিকেলে তাদের পুজোর উদ্বোধন। ক্লাব সম্পাদকের কথায়, ‘‘নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় ধর্ম দেখেননি মানিক। তাঁর লক্ষ্য ছিল, মানুষের জীবন বাঁচানো। যা কিছু বিভেদ বাড়ায়, আমরাও তাকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাই। মহম্মদ মানিক আমাদের কাছে যথার্থ সেলিব্রিটি।’’ সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (CM Mamata Banerjee) মালবাজারে গিয়ে দেখা করেছেন অকুতোভয় এই যুবকের সঙ্গে। জীবন বাঁচানোর পুরস্কারস্বরূপ হাতে তুলে দিয়েছেন এক লক্ষ টাকা। দিয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি। মানিক বলছেন, ”আবার যদি কেউ বিপদে পড়েন, তবে আবারও ঝাঁপিয়ে পড়ব।”