রমনী বিশ্বাস, তেহট্ট: একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিল পরিবার। কীভাবে ভিনরাজ্য থেকে ছেলের দেহ ফিরিয়ে আনবেন, সেই চিন্তায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল তাঁদের মাথায়। এমন পরিস্থিতিতে শোকার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন প্রতিবেশীরা। হিন্দু পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এল মুসলিম প্রতিবেশীরা। অনন্য সম্প্রীতির সাক্ষী থাকল নদিয়ার (Nadia) পলাশিপাড়া।
পলাশিপাড়া থানার বাগাগোরিয়া গ্রামে প্রায় আটশো মুসলিম পরিবারের বাস। কৃষক সুবল রায় স্ত্রী দিপালি ও ছেলে সঞ্জয়কে নিয়ে ওই গ্রামে থাকতেন। তাঁরাই গ্রামের একমাত্র হিন্দু পরিবার। সঞ্জয়ের বিয়ে হয় কয়েক বছর আগে। তাঁদের একটি মেয়ে আছে। সঞ্জয় কর্মসূত্রে পুণেতে থাকতেন। সেখানে একটি হোটেলে রান্নার কাজ করতেন।
[আরও পড়ুন: কলকাতার হাসপাতালে অসাধ্য সাধন! ১০৪ বছর বয়সি বৃদ্ধের সফল হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি]
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার পুণেতে সঞ্জয় মারা যান। এই খবর গ্রামে পৌঁছতেই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসেন এলাকার মুসলিমরা। তাঁরাই ওই দেহ গ্রামের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। একইসঙ্গে গ্রামের মসজিদ থেকে এলাকার মুসলিম মানুষজনের কাছে ওই হিন্দু পরিবারের জন্য অনুদান চাওয়া হয়। মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা হতেই গ্রামের মুসলিমরা টাকা, চাল-সহ বিভিন্ন সামগ্রী মসজিদ কমিটির হাতে তুলে দেয়।
বুধবার দেহ গ্রামে ফিরতেই প্রতিবেশী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন ভিড় করে। সৎকারেরও ব্যবস্থা করে। তাঁরাই পাশের গ্রাম থেকে শেষযাত্রার জন্য হরিনাম সংকীর্তনের দল ডেকে আনেন। বুধবার দুপুরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা কাঁধে চেপে সঞ্জয়ের শেষ যাত্রা শুরু হয়।
[আরও পড়ুন: হাই কোর্টের অনুমতির পরেও পিছু হঠল বিজেপি, উলুবেড়িয়ার সভা বাতিল শুভেন্দুর]
মৃতের বাবা সুবল রায় জানান, “তাঁরা পাশে না দাঁড়ালে এভাবে ছেলের সৎকার করার জন্য পলাশী শ্মশানে নিয়ে যেতে পারতাম না। আমি মনে করি যে আমরা সবাই এক, এটাই মানব ধর্ম।” গ্রামের বনি আমিন, হাফিজুল শেখ বলেন, “সঞ্জয় মারা যাওয়ার খবর আসার পর ওদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মসজিদের ইমামের মাধ্যমে সাহায্যের জন্য ঘোষণা করা হয়। সেই মতো মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ যে যেমন পারে তেমন সাহায্য করে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে।”