সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “মোরা একই বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান…” কবেই কবি সেকথা লিখে গিয়েছেন। ভারতীয় সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা উল্লেখ রয়েছে। তা সত্ত্বেও বর্তমানে ধর্ম নিয়ে হানাহানির খবর শোনা যায় মাঝেমধ্যেই। রাজনৈতিক জটিলতার মাঝেও ধর্ম নিয়ে টানাপোড়েন কম কিছু হয় না। তারই মাঝে উত্তরপ্রদেশে ঘটল একেবারে ব্যতিক্রমী ঘটনা। রমজান মাসে পিতৃহারা হিন্দু মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন মুসলমান প্রতিবেশী। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে জোর আলোচনা। ‘এটাই তো আসল ভারত’, বলছেন সকলেই।
গত ২০২০ সাল থেকেই গোটা দেশজুড়ে দাপট দেখাতে শুরু করে করোনা। ভাইরাস সংক্রমণ, আর্থিক অনটনে কার্যত জেরবার হয়ে ওঠে বেশিরভাগ মানুষ। করোনার থাবাতেই প্রাণ হারান উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের বাসিন্দা হিন্দু তরুণী পূজার বাবা। কাকা রাজেশ চৌরাশিয়ার কাছেই থাকতে শুরু করেন। তরুণীর কাকা বিয়ের বন্দোবস্ত করেন। গত ২২ এপ্রিল বিয়ের দিনক্ষণ স্থির হয়। তবে কাকার আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। তাই বিয়ের আয়োজন করতে পারছিলেন না। তরুণীর কাকা বলেন, “ভাইঝির বিয়ের জন্য কোনও অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া নিতে পারছিলাম না। মুসলমান প্রতিবেশী পারভেজকে জানাই। সেকথা শোনামাত্রই গোটা বাড়িটি ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেন তাঁরা।”
[আরও পড়ুন: তুঙ্গে বিজেপির ঘরোয়া বিবাদ, এবার তমলুক সাংগঠনিক জেলার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ শুভেন্দুর]
মুসলমান প্রতিবেশী বাড়ির উঠোনে মণ্ডপের ব্যবস্থা করেন। তার দেখভাল করেন খোদ পারভেজ। তাঁর স্ত্রী সংগীতে অংশ নেন। পূজার বিয়ের অতিথি আপ্যায়ণের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন পারভেজের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। পারভেজের বাড়ির উঠোনে খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। পূজার স্বামীকে সোনার হার উপহারও দেন তাঁরা। পারভেজ বলেন, “পূজা আমাদের মেয়ের মতো। ওর বিয়েতে আমরা যে এভাবে পাশে দাঁড়াতে পারব তা ভাবিনি। খুব ভাল লাগছে।” আবেগে ভাসছেন পূজা এবং তাঁর পরিবারও।
এই ঘটনা ভাইরাল হতে বিশেষ সময় লাগেনি। রমজান মাসে হিন্দু তরুণীর বিয়েতে এগিয়ে এসেছে মুসলমান পরিবার, এর থেকে ভাল কথা আর কিছুই হতে পারে না বলেই মত পারভেজের প্রতিবেশীরা। এটাই যে আসল ধর্মনিরপেক্ষ ভারত, তাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে বিভেদকারীকে দেখিয়ে দিলেন পারভেজ।