অর্ণব আইচ: থাকার কথা ছিল আরও অন্তত দিন দু’য়েক। কিন্তু তার আগেই কলকাতা থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যান রাজারাম রেগে। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর আপ্তসহায়ককে ফোন ও মেসেজ করার পরই রাজারাম কলকাতা ছেড়ে কেন মুম্বই পালান, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। দানা বেঁধেছে রহস্যও। উত্তর খুঁজতে মরিয়া তদন্তকারীরা।
সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর হামলার ছক কষার অভিযোগে ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত ডেভিড হেডলির সঙ্গী তথা ষড়যন্ত্রকারী রাজারাম রেগেকে মুম্বই থেকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। তদন্ত শুরু করার পর পুলিশ জেনেছে, রাজারাম গত ১৯ এপ্রিল সাংসদকে ‘ফেসটাইম’-এ যোগাযোগ করে জানায়, সে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চায়। এমনকী, সাংসদকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজও করেন তিনি। কোনও ইতিবাচক উত্তর না পেয়ে ২০ এপ্রিল সাংসদের আপ্তসহায়ককে ফোন করেন রাজারাম। গোয়েন্দা পুলিশের সন্দেহ, কাউকে সঙ্গে নিয়ে সে দেখা করতে চেয়েছিল। তখনই সাংসদের উপর হামলা হত, এমন সম্ভাবনা পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। রাজারাম ও সেই ব্যক্তির কী উদ্দেশ্য ছিল, সেই তথ্যই গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছেন।
[আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফার ভোটের দিনই ফের রাজ্যে আসছেন মোদি, এবার নজরে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালদহ]
গোয়েন্দাদের মতে, হামলার ছক কষতেই বিভিন্ন দিক থেকে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ও তার আশপাশের রাস্তার ছবি ও ভিডিও দূর থেকে তোলে সে। গোয়েন্দাদের সূত্র জানিয়েছে, বিদেশ থেকে বিপুল টাকার তহবিল এসেছিল রাজারামের কাছে। ওই বিদেশির সঙ্গে একাধিক অ্যাপের মাধ্যমে রাজারাম যোগাযোগ রাখত বলে অভিযোগ। সেই সূত্র ধরেই গোয়েন্দাদের প্রশ্ন, তবে রাজারামের সেই বিদেশি ‘বস’ই কি তাকে সাংসদের সঙ্গে দেখা করার জন্য চাপ দিচ্ছিল? এই ধরনের বহু উত্তর পেতে মঙ্গলবার সারাদিন ধরে রাজারামকে পুলিশ জেরা করে। যদিও পুলিশের দাবি, জেরায় সম্পূর্ণ অসহযোগিতা করছে রাজারাম। একাধিক প্রশ্নই সে এড়িয়ে যাচ্ছে। কখনও বা ভুল তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কলকাতায় রাজারাম রেগের পাঁচজন লিঙ্কম্যানকে পুলিশ শনাক্ত করেছে। তাদের মধ্যে কেউ ব্যবসায়ী, কেউ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ তাদের জেরা করবে।
পুলিশ জেনেছে, গত ১৮ এপ্রিল কলকাতায় আসার চারদিন আগে নিউ মার্কেটের হোটেল বুক করেন রাজারাম রেগে। ক্রেডিট কার্ডে আগাম টাকা দেয়। ২২ এপ্রিল পর্যন্ত তার কলকাতায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেদিনের বিমানের টিকিট বাতিল করে ২০ এপ্রিল সেই দিনেরই বিমানের টিকিট কেটে সকাল সাড়ে এগারোটায় হোটেল থেকে বের হয়ে বিমানবন্দরে যান। তার এই কলকাতা থেকে ‘পালিয়ে যাওয়া’ ঘিরেই সন্দেহ গোয়েন্দাদের। একটি অ্যাপ ক্যাবের চালককে পুলিশ শনাক্ত করে জেরা করেছে। হোটেলের বাইরে রাজারাম দফায় দফায় কলকাতার পাঁচজন লিঙ্কম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের মধ্যে এক বা দু’জনের সঙ্গে ভাড়া করা গাড়িতে রাজারাম ভবানীপুরে হরিশ মুখার্জি রোডে যায়। সেখানেই সাংসদের বাড়ির ছবি তোলে সে। রাজারামের সঙ্গে কখন, কারা ছিল, সেই তথ্য জানতে ওই ব্যক্তিদেরও জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।