shono
Advertisement

৪৯৯ বছরের পুজোয় প্রতি নবমী নিশিতেই ‘কাঁদেন’ঘোষবাড়ির দুর্গা

নবমীতেই পরম্পরা মেনে ‘কাদা খেলা’য় মাতেন জমিদার বাড়ির সদস্যরা। The post ৪৯৯ বছরের পুজোয় প্রতি নবমী নিশিতেই ‘কাঁদেন’ ঘোষবাড়ির দুর্গা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 12:17 PM Oct 18, 2018Updated: 12:17 PM Oct 18, 2018

বিপ্লব চন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগরঅষ্টমীর রাত কেটেছে। পুজোর আনন্দে নবমীর নিশি এল বলে। ফের কাঁদবে দেবী। ঘোষবাড়ির মা দুর্গা এমনই কাঁদে প্রতিবার। কোথায় সেই ঠাঁটবাট! কোথায় সেই জৌলুস! কোথায় সেদিনের উচ্ছাস! ভেঙে পড়ছে ঠাকুর দালান। খসে পড়ছে ইট। কোমরের জোর কমেছে জমিদারবাড়ির। এক সঙ্গে থাকা পরিবার এখন আমি-তুমি আর এক বা দুই সন্তানের হাঁড়িতে পরিণত। তবুও বচ্ছরকার এই কটা দিনে পুজো পান মা। আলো জ্বলে ঠাকুরদালানে। সেদিনের স্মৃতি বুকে নিয়ে এখনও পুজোয় মেতে ওঠে রানাঘাটের নাশরা পাড়ার ঘোষবাড়ি।

Advertisement

পূজোর বয়স প্রায় ৪৯৯ বছর। ৫০০ পূরণ হতে বাকি মাত্র একটি বছর। ঘোষবাড়ি, মানেই একসময়ের জমিদারবাড়ি। একসময় ছিল বিরাট দুর্গাদালান। এখনও আছে। তবে তা ভগ্নদশায়। যদিও ঘোষবাড়ির বর্তমান উত্তরসূরিরা মেরামত করিয়ে দালানের কিছুটা সৌন্দর্য আনার চেষ্টা করেছেন। ঠাকুরদালানে এবার অষ্টমীর রাত ছিল বেশ আলো ঝলমলে। এই  সেদিনও ভগ্ন দালানে সন্ধ্যা নামলেই গা ছমছম করতো। ঠাকুরদালান জুড়ে বিরাজ করত ভৌতিক আবহাওয়া। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ‘ঘোষবাড়ির ওই দালানে সম্ভবত দেবী দুর্গার কোনও প্রভাব রয়েছে। তাই হয়তো সন্ধ্যার পর ওই দালান চত্বরের পরিবেশটাই বদলে যায়। সময় গিয়েছে ঘোষবাড়িতে মহা সমারোহে দুর্গা আরাধনায় ভাটা পড়েছে। তবুও পুজোর কয়েকটা দিন যখন ছেলেমেয়ে নিয়ে  মা দুর্গা এই দালানে পুজো পান, তখন ফেরে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি। তবে মায়ের চোখ জ্বলজ্বল করে নবমীর রাত পর্যন্তই। তাও খুব বেশি হলে রাত এগারোটা। তারপর আর দেবীর চোখের দিকে তাকানোই যায় না। মনে হয় যেন দেবী কাঁদছেন।’ এলাকার অনেকেই জানান, এই তো মাত্র চারটি দিন। ব্যস, আবার অন্ধকারে ঢাকবে ঘোষবাড়ির দুর্গাদালান। লাগোয়া জঙ্গলে নামা অন্ধকার কখন যেন গুটিগুটি পায়ে দুর্গাদালানকেও গ্রাস করে। এই চারটি দিন আর কালীপুজো বাদে দিয়ে অন্ধকারে ডুবে থাকে দুর্গাদালান।  

[এবার পুজোয় আপনিও দুর্গা কিংবা অসুর, জানেন কীভাবে?]

জানা গিয়েছে, আজ থেকে ৪৯৮ বছর আগে ঘোষবাড়ির পূর্বপুরুষ চৈতন্যচরণ ঘোষ প্রথম ঠাকুরের দালানে মঙ্গলঘট বসিয়ে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন। চৈতন্যচরণ নিঃসন্তান ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর ভাই মকরন্দ ঘোষ পুজোর হাল ধরেন। মকরন্দের পরিবার ডালপালা ছড়িয়েছে। কিন্তু পুজোয় দেশের বাড়িতে ফেরা তাদের চাই-ই চাই। পরিবারের বর্তমান উত্তরসূরি তথা টলিউডের টেলি তারকা রানা ঘোষ জানালেন, একটা সময় পুজোর চারটি দিন এই ঘোষ পরিবারের ঠাকুর দালানের দরজা হাট করে খোলা থাকত। পুজো দেখতে আসতেন ভিনধর্মের মানুষও। অষ্টমীর দিন ৫১টি পাঁঠা ও তিনটি মোষ বলি হত। ১৯১৪ থেকে পশুবলি বন্ধ হয়ে যায়।  এখন নিয়ম রক্ষা করতে থোড়, মোচা বলি দেওয়া হয়। নবমীর দিন এখনও নিয়ম মেনে কাদা খেলা হয়। অংশ নেন ঘোষ পরিবারের প্রায় সবাই। খেলার আগে মূল ফটক থেকে ধুলো মাথায় নেন পরিবারের সদস্য-সদস্যরা। তাঁদের ধারণা, তাতে পরিবারের সবার পাপ বিনষ্ট নয়। গ্রামের লোকজন এই জমিদারি খেলা বেশ উপভোগ করেন। এই পুজোর টানে আশপাশের লোকজনও ফিরে আসেন বাড়িতে। ঠাকুরদালানের পাশেই রয়েছে ঘোষপরিবারের কুলদেবতা লক্ষ্মী-জনার্দনের মন্দির। এই কয়েকদিন লক্ষ্মী-জনার্দনকে প্রধান অতিথি হিসাবে বরণ করে পুজো করা হয়। প্রাচীন এই ঘোষবাড়ির প্রতিমার দর্শন না হলে আজও ভরে না বহু মানুষের মন। তাই এবারও অষ্টমীর বিকেল থেকেই এই ঘোষবাড়ির মায়ের দর্শনের জন্য ভিড় বেড়েছে ক্রমশ।

[মহাসপ্তমীতে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির লক্ষ্মীকে বসানো হয় দেবী দুর্গার বেদিতে]

The post ৪৯৯ বছরের পুজোয় প্রতি নবমী নিশিতেই ‘কাঁদেন’ ঘোষবাড়ির দুর্গা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement