বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, মাদুরাই: বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্ধ বিরোধিতা করতে গিয়ে সংঘ পরিবার ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খামতি থেকে যাচ্ছে। বারবার প্রকাশ্যে আসছে দলের অন্তঃসারশূন্য সংগঠন ও জনভিত্তি। পার্টির অভ্যন্তরেই শত্রু চিহ্নিতকরণ নিয়ে বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে কমরেডকুলের নেতাদের। রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন নাকি একই পথ হাঁটা? প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বসছে সিপিএম। এছাড়াও সীতারাম ইয়েচুরির উত্তরসূরি খুঁজতেও চলবে তর্কবিতর্ক। এরকম একগুচ্ছ প্রশ্নের সমাধান খুঁজতেই বুধবার থেকে তামিলনাড়ুর মাদুরাইতে বসছে সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেস। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মন্দিরের শহর মাদুরাইতে জমায়েত জড়ো হয়েছেন প্রায় হাজার খানেক লাল পার্টির নেতা কর্মী। উদ্বোধন করবেন পার্টির প্রবীণ সদস্য বিমান বসু।
বিজেপিকে 'আধা ফ্যাসিস্ট' নাকি 'নব্য ফ্যাসিস্ট' বলা হবে। এই প্রশ্নে বিতর্ক উসকে দিয়েছিলেন পলিটব্যুরোর আহ্বায়ক প্রকাশ কারাট। এখানেই থেমে থাকেননি, বাংলা-সহ দেশজুড়ে সংঘ পরিবার ও বিজেপির বিরোধিতায় খামতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন তিনি। জানিয়েছিলেন, শুধু ভোট এলেই সংঘ পরিবার ও বিজেপির বিরোধিতায় নামতে দেখা যায় পার্টিকে। সারা বছর কার্যত খোলা মাঠ ছেড়ে দেওয়া হয়। এমনকী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বিরোধিতায় পিছিয়ে পড়ছে পার্টি। এর সমাধান কী? কোন পথেই বা গেরুয়া শিবিরের মোকাবিলা করা হবে, সেই পথ খুঁজতে হবে বলে পার্টি কংগ্রেসের ৪৮ ঘণ্টা আগে বিতর্ক উসকে দেন কারাট।
এক্ষেত্রে স্বভাবতই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে আলোচনায় আসবে বলে জানান পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য। তিনি জানান, অন্ধ মমতা বিরোধিতা করতে গিয়ে সংখ্যালঘু সমর্থন হারিয়েছে পার্টি। সেই জনসমর্থন ফেরানোই এখন পার্টির মুল লক্ষ্য। বিজেপি বিরোধিতা নিয়ে কারাট যে মতামত ব্যক্ত করেছেন সেটাও অস্বীকার করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে প্রতিনিধিদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেই বাংলায় প্রধান শত্রু চিহ্নিত করা হবে বলে জানান তিনি। তাঁর মতে, বারাবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অন্ধ বিরোধিতা করতে গিয়ে পার্টির ভগ্নপ্রায় চেহারা সামনে চলে আসায় পার্টি ঘনিষ্ঠরাও হতাশায় ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে সঠিক পথ খুঁজে বের করতে না পারলে পার্টির দৈনদশা কাটবে না বলেই মনে করছেন প্রতিনিধিদের একাংশ।
আরও একটি বড় প্রশ্ন পার্টির সামনে। সীতারামের উত্তরসূরি কে হবেন। কারণ পার্টির কাণ্ডারি থাকাকালীন কোনও সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যু সিপিএমে নতুন সংকট। গোটা দেশেই জনসমর্থন প্রায় তলানিতে। এই পরিস্থিতিতে পার্টির হাল ধরবেন কে? কারণ এমন একজনকে প্রয়োজন যিনি পার্টির পাশাপাশি বিজেপি বিরোধী দলগুলির কাছে সমান গ্রহণযোগ্য। তেমন মুখ পার্টির কাছে থাকলেও বয়সের গেরোয় তা আটকে যাচ্ছে। কারণ এবার পার্টি কংগ্রেস থেকে সাতজন সদস্যকে অব্যাহতি নিতেই হবে। এদের মধ্যে অন্যতম বৃন্দা কারাট। ফলে বাংলার রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও কেরলের প্রাক্তন মন্ত্রী ও সাংসদ এম এ বেবি ছাড়া বিকল্প মুখ নেই পার্টির সামনে। আবার বাংলা ছেড়ে দিল্লিতে বসে ২৪ ঘণ্টা পার্টির জন্য সময় দিতে নারাজ সেলিম। এক্ষেত্রে কেরল লবির চাপে বেবিকেই বেছে নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। তবে এর মধ্যেও কৃষক নেতা অশোক ধাওয়ালেকেও সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকায় দেখার পক্ষে সওয়াল করছেন প্রতিনিধিদের একাংশ।