সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজপথে অটলকে শেষবারের মতো দেখতে রাতারাতি ৫০০ মাইল পেরিয়ে এসেছেন উত্তরাখণ্ডের যোগেশ কুমার, গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাজল এনেছেন তিনি। বাহাদুর শাহ মার্গে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা, শিক্ষক মৌলানার হাত ধরে তারাও এসেছে শেষবারের মতো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মুখটুকু যদি দেখা যায়। শেষ যাত্রায় মৃতদেহের পিছনে প্রথম সারিতে হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। কিছুটা পিছনেই হাজারো মানুষের ভিড়ে পা মিলিয়েছেন কেরলের ভিক্ষুক অ্যান্টোনি জোশেফ। সারাজীবন যে ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করে গিয়েছেন বিজেপির ভিতরে থেকেও সেই ঐক্যের ছবি দেখা গেল অটলবিহারী বাজপেয়ীর শেষযাত্রায়
[শেষকৃত্য বিকেলে, বাজপেয়ীর শেষযাত্রা উপলক্ষে একাধিক রাস্তা বন্ধ দিল্লিতে]
পূর্ণরাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হল তাঁর শেষকৃত্য। রাজনৈতিক মতাদর্শ, আদর্শগত মতভেদ সব ভুলে আজ গোটা দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের নজর ছিল নয়াদিল্লিতে। সেখানেই রাষ্ট্রীয় স্মৃতিস্থলে পঞ্চভূতে বিলীন হলেন অটল। শেষকৃত্যে হাজির ছিলেন বিজেপি শাসিত সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। বিজেপি শীর্ষ নেতারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সব সদস্য। শেষ যাত্রার শুরু থেকেই পুরভাগে হাঁটছিলেন মোদি-অমিত শাহরা। ছিলেন তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সাক্ষী, দীর্ঘদিনের বন্ধু লালকৃষ্ণ আডবানী। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, তিন সেনার প্রধান সকলেই ছিলেন। শুধু বিজেপি নয়, সারাজীবন ভিন্ন মেরুতে রাজনীতি করা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীর আগে থেকেই পৌঁছে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় স্মৃতিস্থলে। পৌঁছে ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও। সারাজীবন বাজপেয়ীর প্রধান বিরোধী মুখ গুলির মধ্যে অন্যতম ছিলেন যে মনমোহন, এদিন তাঁর চোখেমুখেও দেখা গেল শোকের ছায়া। শুধু এদেশের নয় বিদেশ থেকেও এসেছিলেন তাঁর অসংখ্য গুণমুগ্ধ। ছিলেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়া ওয়াংচুক, ছিলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী, শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রী, পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সৈয়দ আলি জাফর। আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। আর ছিলেন তাঁর অসংখ্য গুণমুগ্ধ ভক্ত।
[দল নয় দেশই আগে, সংসদে রাজধর্মের পাঠ দিয়েছিলেন বাজপেয়ী]
রাষ্ট্রীয় স্মৃতিস্থলে শেষকৃত্যের আগে একে একে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান তিন সেনার প্রধান। শ্রদ্ধা জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী, স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। শেষকৃত্যের আগে এক সারিতে বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, লালকৃষ্ণ আডবানী, বেঙ্কাইয়া নায়ডু, মনমোহন সিং, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী। শেষ কবে ভারতীয় রাজনীতিতে শাসক-বিরোধীর এই অদ্ভুত মেলবন্ধন দেখা গিয়েছিল অনেকেই মনে করতে পারছেন না। আসলে এটাই হয়তো বাজপেয়ীর ক্যারিশমা। সারাজীবন সংসদীয় গণতন্ত্রে শাসক-বিরোধী সব মহলকে একসঙ্গে নিয়ে চলেছেন শাসক থাকার সময় গুরুত্ব দিয়েছেন বিরোধীদের মতকে আবার বিরোধী থাকার সময় প্রশংসা করেছেন সরকারের ভাল কাজের। তাঁর শেষকৃত্যে তাই শাসক-বিরোধী মিলে যাবে সেটাই তো প্রত্যাশিত।
The post রাষ্ট্রীয় স্মৃতিস্থলে শেষকৃত্য সম্পন্ন বাজপেয়ীর, পঞ্চভূতে বিলীন ভারতীয় রাজনীতির ‘অজাতশত্রু’ appeared first on Sangbad Pratidin.