সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নেতাজির (Netaji Subhas Chandra Bose) জন্মদিনে প্রতি বছরই কোনও না কোনও বড় চমক থাকে কেন্দ্রের। দেশনায়ককে শ্রদ্ধা জানাতে একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হয় এই দিনেই। এবছর ‘পরাক্রম দিবসে’ আন্দামানের ২১ দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। আর তারপরই কলকাতার রেড রোডে (Red Road)নেতাজির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। সেখান থেকে কেন্দ্রকে মনে করিয়ে দেন, নতুন করে এসব নামকরণের অর্থ নেই। নেতাজি নিজেই তা করে গিয়েছিলেন। তিনি যখন আন্দামানে যান, তখনই দ্বীপের নামকরণ করেছিলেন। এদিন রেড রোডের মঞ্চে সবচেয়ে নজর কাড়ল নেতাজি পরিবারের দুই সুগত বসু ও চন্দ্র বসুর যৌথ উপস্থিতি। নেতাজি অন্তর্ধান নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য থাকলেও এই দিনটিতে সেসব ভুলে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিলেন তাঁরা।
এর আগে নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান জানানো নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকার যথেষ্ট সমালোচনা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ২৩ জানুয়ারি জাতীয় ছুটির দাবি একাধিকবার জানানো সত্ত্বেও তা নাকচ হয়েছে। তাতে কার্যত ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজির তৈরি প্ল্যানিং কমিশনের অবলুপ্তি ঘটিয়ে নীতি আয়োগ তৈরি করা নিয়েও কেন্দ্রের বিরোধিতা করেছেন তিনি। ১২৭ তম জন্মদিনে তিনি সেই ইস্যু ফের তুললেন। এর আগেই মোদি, শাহ দাবি করেছেন, দেশনায়কের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানিয়েছে একমাত্র মোদি সরকার। এমনকী কংগ্রেসও এই কাজে পিছিয়ে বলে দাবি তাঁদের। তা নিয়ে এদিনের মঞ্চ থেকে কটাক্ষ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ”নেতাজির তৈরি প্ল্যানিং কমিশনটাই তো তুলে দিল, কীসের সম্মান?” এদিন দলে মুখপাত্র কুণাল ঘোষ টুইটে দাবি করেছেন, স্বাধীন ভূখন্ডে আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য নেতাজিকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হোক।
[আরও পড়ুন: অধ্যাপক নিয়োগেও ‘দুর্নীতি’, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি]
এই মঞ্চ থেকে কেন্দ্রকে আরও একাধিক ইস্যুতে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ”অনেকে এজেন্সির ভয় পালিয়ে যায়। আমরা পালাই না। আরে করো না ভাই। যত পারো, এজেন্সি লাগাও, কিন্তু দেশটাকে এক রেখে দাও। দেশটাকে ভেঙো না।”
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে এদিন ঐক্যের ছবি দেখা গেল। তাঁর আমন্ত্রণে রাজ্য সরকারের নেতাজি স্মরণ অনুষ্ঠানে দেখা গেল নেতাজি পরিবারের দুই সদস্য সুগত বসু ও চন্দ্র বসু। প্রথমজন তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন, আর দ্বিতীয়জন বিজেপির হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, পরাজিত হন। উভয়ের রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি পূর্বসূরীকে নিয়ে মতানৈক্যও রয়েছে। তবে নেতাজির আদর্শ, লক্ষ্য এসব নিয়ে স্বভাবতই সহমত তাঁরা। তবু এদিন একসঙ্গে তাঁদের দেখা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। চন্দ্র বসু বলেন, ”নেতাজি এক ভারতবর্ষের কথা বলেছিলেন। আজ সাম্প্রদায়িকতা, বিচ্ছিন্নতাবাদ সমগ্র ভারতকে ঢেকে ফেলেছে। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।” সোমবারই নেতাজি স্মরণে শহিদ মিনারে বড় সমাবেশ করেছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। তা নিয়ে অবশ্য একটি শব্দও খরচ করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।